এম. মছব্বির আলী, মৌলভীবাজার:
৩০০ টাকা মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে বুধবার মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ছয়টি চা-বাগানের কয়েক সহস্রাধিক শ্রমিক বিক্ষোভ ও ভুখা মিছিল করেছেন। ভুখা মিছিল নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত মিছিলটি কুলাউড়া উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে শেষ হয়। এর আগে মঙ্গলবার ভুখা মিছিল করে কালিটি চা-বাগানের শ্রমিকরা।
সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার গাজীপুর, কালিটি, রাঙ্গিছড়া, মুড়াইছড়া, আসকরাবাদ ও রাধানগর চা-বাগানের কয়েক সহস্রাধিক শ্রমিকরা মিছিল নিয়ে বাগান থেকে বের হয়ে গাজীপুর চৌমুহনীতে এসে একত্রিত হয়। সেখান থেকে ভুখা মিছিলটি কুলাউড়া শহরের দিকে আসে। চা-শ্রমিকদের আন্দোলন চলবে চলবে, আটা-রুটির সংগ্রাম চলবে চলবে, চুক্তি নিয়ে টালবাহানা চলবে না চলবে না, ৩০০ টাকা মজুরী দিতে হবে দিতে হবে, চা-শ্রমিক জনতা, গড়ে তোল একতা, চা-শ্রমিকের নায্য দাবি মানতে হবে মানতে হবে, করুনা নয়, অধিকার চাই লেখা সম্বলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এসময় রাস্তার দুই পাশে শত শত গাড়ি আটকা পরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। কুলাউড়া মূল শহরে প্রবেশের পর শ্রমিকরা পুরো রাস্তা দখলে নিয়ে মিছিল করে উপজেলা পরিষদে প্রাঙ্গণের গিয়ে তাদের মিছিল শেষ করেন।
এসময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ এ কে এম সফি আহমদ সলমান চা-শ্রমিকদের দাবির প্রতি একাত্মতা পোষণ করে বলেন, চা-শ্রমিকরা ১২০ টাকা মজুরী দিয়ে পরিবার চালাতে পারছেনা বিধায় আমরা ইতোমধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি-দাওয়া পাঠিয়েছি এবং সকল দপ্তরকে অবহিত করেছি। এই আন্দোলনের অবসান অবশ্যই হবে। চা-শ্রমিকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অনেক কষ্ট করে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের দাবির প্রতি বাগান মালিক পক্ষ যেন মেনে নেয় সেই দাবি জানাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, চা-শ্রমিকদের জীবন মানোন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তরিকভাবে কাজ করছেন। নূন্যতম মজুরী বোর্ডের সভা চলছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মজুরী বোর্ডকে নির্দেশনাও দিয়েছেন। আপনাদের দাবি অচিরেই পূরণ হবে। সভা থেকে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অবশ্যই আসবে। আপনাদের আর আন্দোলন করতে হবে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মাহমুদুর রহমান খোন্দকার চা-শ্রমিকদের ধর্য্যে ধরার আহবান জানিয়ে বলেন, আপনার শান্ত থেকে ধর্য্য ধরুন। আপনাদের নায্য দাবি নিয়ে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে। দাবির বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি। নূন্যতম মজুরী বোর্ডের সভায় অবশ্যই একটি সুন্দর সমাধান হবে। উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বক্তব্যের পর চা-শ্রমিকরা তাদের আন্দোলন শেষ করে নিজ নিজ বাগানে ফিরে যান।
কালিটি চা-বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সম্পাদক উত্তম কালোয়ার বলেন, ‘শ্রমিকরা এমনিতেই সামান্য মজুরি পান। অন্যদিকে নিত্যপণ্যের দাম হু হু করে বাড়ছেই। তাহলে একবার ভেবে দেখুন, আমাদের মতো শ্রমিকদের কী অবস্থা হতে পারে? ঘরে চাল-ডাল-তেল-নুন নেই। উপোষ দিন কাটাতে হচ্ছে। অথচ আমাদের মজুরি নিয়ে বাগান কর্তৃপক্ষ বার বার সময়ক্ষেপণ করছে।’ ‘আন্দোলনের আজ সপ্তম দিন চলছে। মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে গত ৫ দিন ধরে ২ ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে। কিন্তু মালিকপক্ষ থেকে এখনো কোনো সাড়া মেলেনি। চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সাথে বৈঠকে বসে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি। তাই আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
ভুখা মিছিলে অংশ নেওয়া কালিটি চা-বাগানের শ্রমিক দয়াল অলমিক, অপু দাস, গৌরি অলমিক বলেন, ‘আমরা ৫ দিন ধরে কর্মবিরতি পালন করছি। কিন্তু কেউ আমাদের ডাকে সাড়া দেয়নি এমনকি কোন আশ্বাসও দেয়নি। আমরা এত কষ্ট করে কাজ করি, কিন্তু আমাদের ন্যায্য মজুরি দেওয়া হয় না। চাল-ডাল-তেল-নুনসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার খরচ আছে, অসুখ হলে চিকিৎসা করাতে হয়। সব কিছুর দাম বাড়লেও আমাদের মজুরি বাড়েনি কেন বাড়েনা। আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি