April 26, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, October 3rd, 2021, 6:41 pm

আদালতে বোমা হামলা: জেএমবি নেতা মিজানের মৃত্যুদণ্ড

চট্টগ্রাম আদালত ভবনে পুলিশ চেক পোস্টে আত্মঘাতী বোমা হামলা মামলার রায়ে জেএমবির শীর্ষ নেতা মিজান ওরফে জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজানকে মৃত্যুদণ্ড এবং অপর আসামি জাবেদ ইকবালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত।

বোমা হামলার ঘটনার প্রায় ১৬ বছরের মাথায় আজ রবিবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আব্দুল হালিমের আদালতে মামলার যায় ঘোষণা করেন।

রায় ঘোষণার পর আদালত প্রাঙ্গণে চট্টগ্রাম সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মনোরঞ্জন দাশ বলেন, এ মামলার মোট ৫ জন আসামি ছিলেন। তারা হলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) প্রধান শায়খ আবদুর রহমান, তার সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাই এবং জেএমবির সামরিক কমান্ডার আতাউর রহমান সানি, জেএমবির শীর্ষ নেতা মিজান ওরফে জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজান ও জাবেদ ইকবাল। এর মধ্যে প্রথম তিনজনকে অন্য মামলায় ফাঁসি হওয়ায় তাদের নাম এ মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়। মামলার একমাত্র আটক আসামি জাবেদ ইকবাল কারাগারে আছেন। মৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত বোমা মিজান বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে হাজিরা দেয়ার জন্য ময়মনসিংহের আদালতে নেওয়ার পথে ত্রিশাল এলাকায় প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে পুলিশের কাছ থেকে তিন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয় অন্য জঙ্গিরা। এর মধ্যে একজন বোমা মিজান। এরপর বোমা মিজানকে আর গ্রেপ্তার করা যায়নি। অপর যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামি জাবেদ ইকবালকে রায় ঘোষণাকালে আদালতে হাজির করা হয়।

২০০৫ সালের ২৯ নভেম্বর সকালে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের পুলিশ চেক পোস্টের সামনে বোমা হামলা চালায় জঙ্গিরা। ঘটনাস্থলে মারা যান পুলিশ কনস্টেবল রাজীব বড়ুয়া ও ফুটবলার শাহাবুদ্দীন। আহত হন পুলিশ কনস্টেবল আবু রায়হান, সামসুল কবির, রফিকুল ইসলাম, আবদুল মজিদসহ ১০ জন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, এ ঘটনায় নগরীর কোতোয়ালি থানায় দায়েরকৃত মামলায় ২০০৬ সালের ১৮ মে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের তৎকালীন পরিদর্শক হ্লা চিং প্রু জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমান্ডার জাবেদ ইকবাল ওরফে মোহাম্মদ ও বোমা তৈরির কারিগর জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমারু মিজানসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।

চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে ২০০৬ সালের ১৬ জুলাই মামলাটির অভিযোগ গঠন করা হয়। এর মধ্যে অন্য একটি মামলায় বাকি তিনজন, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) প্রধান শায়খ আবদুর রহমান, তার সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাই এবং জেএমবির সামরিক কমান্ডার আতাউর রহমান সানি নামের তিন আসামির ফাঁসির আদেশ হয়। ফলে এ মামলা থেকে তাদের বাদ দেয়া হয়েছিল। চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে ২০০৬ সালের ১৬ জুলাই মামলাটির অভিযোগ গঠন করে। পরে মামলার বিচার চলছিল প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে।

২০০৮ সালে মামলাটি চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। সাক্ষীরা হাজির না হওয়ায় ১৩৫ কার্যদিবসের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি করা যায়নি। পরে মামলাটি প্রথম অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে ফেরত যায়। পরে পুনরায় ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে মামলাটি চট্টগ্রাম বিভাগীয় ট্রাইব্যুনালে পাঠান চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ। ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালের গঠন করা হলে চট্টগ্রামের জঙ্গিদের সব মামলা এই ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। একই বছর ৬ আগস্ট মামলাটি সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালে রিসিভ করেন।

দীর্ঘ ১৬ বছর মামলা চলার পর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে এবং মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ৩২ জনের সাক্ষী আদালতে হাজির করেছেন। আসামিপক্ষে আসামি জাবেদ ইকবাল নিজেই সাক্ষী দিয়েছেন। সাক্ষীদের সাক্ষ্যপ্রমাণ এবং আলামত জব্দের মধ্য দিয়ে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে রাষ্ট্রপক্ষ সক্ষম হয়েছে বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।

–ইউএনবি