November 17, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, September 14th, 2023, 3:02 pm

আন্ত:নগর ট্রেনে ‘টিকিট যার ভ্রমণ তার’ কোন বালাই নেই

জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:

টিকিট যার ভ্রমণ তার বিষয়টির গুরুত্ব নেই ট্রেন যাত্রায়। ফলে টিকিট কালোবাজারি চক্রের তৎপরতা আরও বেড়ে গেছে। ১০ দিন আগে টিকিট আবমুক্ত করলেও অনলাইনে কিংবা স্টেশনে কোথাও মিলছে না টিকিট। ফলে বাধ্য হয়ে যাত্রীদের দ্বারস্থ হতে হয় টিকিট কালোবাজারীচক্রের।

টিকিট পাওয়া যায় ৩০০ টাকার টিকিট ৫০০ টাকায় আরও ৬১০ টাকার টিকিট ৯০০ টাকায়। শুধু টিকিটি নিয়ে হয়রানি নয়, সিলেট থেকে ঢাকাগামী প্রতিটি আন্ত:নগর ট্রেনগুলোতে যাত্রী হয়রানির ঘটনা ঘটে প্রতিনিয়ত। সিলেটের যাত্রীরা এসব হয়রানি থেকে পরিত্রাণ এবং ঢাকা সিলেট রুটে কম যাত্রাবিরতির ট্রেন চালুর দাবি জানান।

কুলাউড়া উপজেলার বাসিন্দা শফিকুর রহমান সুমন জানান, তার মা অসুস্থ। ডাক্তার দেখাতে ঢাকায় নিয়ে যাবার জন্য তিনি ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকাগামী ট্রেনের টিকিট ০১ সেপ্টেম্বর থেকে অনলাইনে এবং স্টেশনে খোঁজ নিয়ে না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন। এক দালাল তাকে জানায়, স্নিগ্ধা টিকিটের ব্যবস্থা করা যাবে। তবে টিকিট মূল্য ৬১০ টাকার স্থলে দিতে হবে ৯০০ টাকা। ৩ টিকিটের জন্য তাকে অতিরিক্ত ৮৭০ টাকা দিতে হয়েছে। আন্ত:নগর কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনের ৬ সেপ্টেম্বরের এক্সট্রা ২ বগির ১৯ নাম্বার টিকিটি, যাত্রী বিবরণে উল্লেখ করা কাজী নজরুল ইসলাম, এছাড়া ট বগির ১০-১১ নম্বর টিকিট, যাত্রী বিবরণে উল্লেখ করা হয় মো. রবুল। অথচ এই টিকিটে যাত্রী সুমন ও তার মা বারেয়া সুলতানা ভ্রমণ করেন।

যাত্রী সুমন আরও জানান, ট্রেনে শুধু টিকিট আছে কি-না? যাচাই করা হয়। কমলাপুর স্টেশন থেকে বের হওয়ার সময়ও কেউ টিকিট চেক করেনি। ট্রেনটি আযমপুর স্টেশন থেকে ছাড়ার পর ভৈরব ও নরসিংদী স্টেশনে যাত্রা বিরতি করে। এই দু’টি স্টেশন থেকে কমপক্ষে সহস্রাধিক যাত্রী ট্রেনে উঠে। সবাই বিনা টিকিটের যাত্রী। ফলে দৌঁড়ঝাঁপ শুরু হয় অ্যাটেনডেন্ট ও টিটিই’র। টাকা আদায় নিয়ে নানা ঝামেলা। কথাকাটাকাটি থেকে ঝগড়া। এদিকে যাত্রীরা ট্রেনে উঠে জোরপূর্বক যাত্রীদের সিটের হাতলে বসে। কোন যাত্রী বাঁধা দিতে তাকে হেনস্থা করে। কেউ বেশি প্রতিবাদ করলে ঢাকায় নেমে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। শুভন শ্রেণিতেই শুধু নয় বিনা টিকিটের এসব যাত্রীরা স্নিগ্ধায় উঠে দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে সিলেট থেকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে টিকিট কিনেও নিরাপদে ঢাকায় যাওয়া দুষ্কর। এসব হয়রানির কথা ভেবে মানুষ ট্রেনের বিড়ম্বনা এড়াতে সড়ক পথকে বেছে নিচ্ছে।

যাত্রী কামরান আহমদ জানান, ঢাকা থেকে তিনি ১১ সেপ্টেম্বর কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনে ফেরার পথেও নোয়াপাড়া মুকুন্দপুর এসব স্টেশনে কোন কারণ ছাড়াই যাত্রা বিরতি করে। রাজনীতিবিদ শওকতুল ইসলাম শকু জানান, স্বপরিবারে ভ্রমণ করার কোন পরিবেশ নেই। নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা দরকার।

নামপ্রকাশ না করার শর্তে এক আরএনবি সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শুধু সিলেট অভিমুখী ট্রেনের সবক’টির চালক থেকে অ্যাটেনডেন্ট সবগুলোই খারাপ। ৫-১০ বিনাটিকিটি যাত্রী ইঞ্জিনে ভ্রমণ করে। স্টেশনে ট্রেনের কাছাকাছি আসলেই অ্যাটেনডেন্টগুলো টিকিট আছে কিনা? এনিয়ে যাত্রীদের সাথে শুরু করে জিজ্ঞাসাবাদ। টিকিট না থাকলে সমস্যা নাই, গুনতে হবে দ্বিগুণ ভাড়া। সিট মিলে স্নিগ্ধা কিংবা শোভন শ্রেণির।

শুধু কালনী নয় আন্ত:নগর উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবতেও একই চিত্র। ১০দিন আগে অনলাইনে টিকিট ছাড়ার মাত্র আধাঘন্টার মধ্যেই অনলাইন কিংবা স্টেশনের সবটিকিট উধাও হয়ে যায়। সিলেটের রেলস্টেশনে, কুলাউড়া ও মাইজগাঁও স্টেশনে রয়েছে টিকিট কালোবাজারির শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। রেলওয়ে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরাও জড়িয়ে পড়েছে এই সিন্ডিকেটের সাথে। নামপ্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট একটি মহল নিশ্চিত করে বুকিং ক্লার্কদের সাথে রয়েছে টিকিট কালোবাজারি চক্রের নেটওয়ার্ক। টিকিট কালোবাজারিরো বুকিংক্লার্কদের দিতে টিকিট মূল্যেও চেয়ে ৫০ টাকা বেশি। কালোবাজারিদের ২ হাতবদলে যাত্রী পর্যন্ত সেই টিকিটের মূল্য বেড়ে যায় ৩ থেকে ক্ষেত্র বিশেষে ৫শ টাকা। এভাবে যাত্রীরা টিকিট নিয়ে হয়রানির শিকার হলেও এ থেকে পরিত্রাণের যেন কোন উপায় নেই।

কুলাউড়া রেরওয়ে নিরাপত্তাবাহিনীর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিহির রঞ্জন দেব জানান, তিনি যোগদানের মাত্র একমাস হয়েছে। এসময়ে কোন টিকিট কালোবাজারি ধরা পড়েনি। রেলওয়ে নিরাপত্তাবাহিনীর কোন সদস্য কালোবাজারির সাথে জড়িত কিনা তা জানা নেই।

এনিয়ে কুলাউড়া জংশন স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত মাস্টার রোমান আহমদ জানান, বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবে।

এব্যাপারে সিলেট স্টেশন ম্যানেজার নুরুল ইসলাম জানান, ভ্রমণ যার টিকিট তার বা এনআইডি চেক করলেই টিকিট কালেবাজারির যন্ত্রণা অনেকাংশে লাঘব হবে। প্রথম দিকে কিছুটা চেক করা হয়েছিলো। বর্তমানে একেবারে বন্ধ আছে।

তিনি আরও বলেন, সিলেটের যাত্রীদের স্বার্থে জন্য কালনী ট্রেনের ভৈরব ও নরসিংদীর যাত্রা বিরতি তুলে দেয়া উচিত। আযমপুর থেকে সিলেটের যাত্রী হয়রানি শুরু হয়। ট্রেনের দায়িত্বরত পুলিশ কিংবা ট্রেনের সংশ্লিষ্টরা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে না। তারপরও ট্রেনে গার্ডের কাছে অভিযোগ বই থাকে সেখানে যাত্রীরা যেন তাদের অভিযোগ লিপিবদ্ধ করে। আমরা বিষয়গুলো মিটিংয়ে উত্থাপন করলেও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এসব সমাধানে কোন কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। মুলত লোকবলের অভাবে।