অনলাইন ডেস্ক :
সীমিত ওভারের ক্রিকেটে দলের পাশাপাশি কাইরন পোলার্ডের নিজেরও সাম্প্রতিক সময়টা ভালো কাটছিল না। চলছিল নানা সমালোচনা। এর মধ্যেই হুট করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। আইপিএল খেলতে বর্তমানে ভারতে থাকা ৩৪ বছর বয়সী পোলার্ড বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি জানান। বলেন, অনেকে ভেবেচিন্তেই সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন তিনি। “সতর্কতার সঙ্গে চিন্তাভাবনা করার পর আজ আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আরও অনেক তরুণের মতো আমারও ১০ বছর বয়স থেকেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন ছিল। টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রায় ১৫ বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে আমি গর্বিত।” “আমার ছেলেবেলার নায়ক, ব্রায়ান লারার নেতৃত্বে ২০০৭ সালে আমার আন্তর্জাতিক অভিষেকের কথা এখনও স্পষ্ট মনে আছে। মেরুন রঙের জার্সি পরা এবং গ্রেটদের সঙ্গে খেলা আমার জন্য ছিল বিশেষ কিছু। ক্রিকেটকে কখনোই আমি হালকভাবে নিইনি, সেটা হোক বোলিং, ব্যাটিং বা ফিল্ডিং।” ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে পোলার্ড ওয়ানডে খেলেছেন ১২৩টি, টি-টোয়েন্টি ১০১টি। ২০০৭ সালের এপ্রিলে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক। পরের বছর ব্রিজটাউনে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। লম্বা ক্যারিয়ারে কখনও টেস্ট খেলা হয়নি তার। একক দশকেরও বেশি সময় ধরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সাদা বলে সেরা ক্রিকেটারদের একজন ছিলেন তিনি। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে ওয়ানডে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল তাকে। বেতন কাঠামো নিয়ে বোর্ড ও খেলোয়াড়দের অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বিরোধের কারণে ভারত সফর অসমাপ্ত রেখে দেশে ফেরার পরপরই ড্যারেন স্যামি ও ডোয়াইন ব্রাভোর সঙ্গে পোলার্ডকেও বাদ দেওয়া হয়। আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরেন তিনি ২০১৬ সালের জুনে। ২০১৯ সালে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির নেতৃত্বও পান। ভারতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দেশের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ, শ্রীলঙ্কা বিপক্ষে দেশে ও দেশের বাইরে এবং এই বছরের শুরুতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ে দলকে নেতৃত্ব দেন তিনি। তবে চ্যাম্পিয়নের তকমা নিয়ে গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলতে গিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পারফরম্যান্স ছিল যাচ্ছেতাই। সুপার টুয়েলভে পাঁচ ম্যাচের মধ্যে কেবল একটি জিতে শেষ হয় তাদের শিরোপা ধরে রাখার অভিযান। এই বছরের শুরুতে দেশের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ হারে তারা আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। এরপর ভারত সফরে গিয়ে হোয়াইটওয়াশড হয় দুই সংস্করণেই। ব্যাট হাতে সবশেষ তিন ওয়ানডে মিলিয়ে পোলার্ডের রান মোটে ৪। টি-টোয়েন্টিতে সবশেষ সাত ম্যাচে ত্রিশোর্ধ ইনিংস মাত্র একটি। তার নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন সাবেকদের অনেকে। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকেই বিদায় বলে দিলেন তিনি। সব মিলিয়ে দুই সংস্করণে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি ৬১ ম্যাচে। জিতেছেন ২৫টি, হার ৩১টি, পাঁচটির ফল হয়নি। ওয়ানডেতে ২৬ গড়ে পোলার্ডের রান ২ হাজার ৭০৬। সেঞ্চুরি তিনটি। মিডিয়াম পেসে উইকেট ৫৫টি। টি-টোয়েন্টিতে ব্যাট হাতে দেড় হাজারের একটু বেশি রানের সঙ্গে উইকেট ৪২টি। গত বছর টি-টোয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কার আকিলা দনাঞ্জয়াকে এক ওভারে ছয়টি ছক্কা মারেন তিনি। হার্শেল গিবস ও যুবরাজ সিংয়ের পর মাত্র তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ছয় ছক্কার কীর্তি গড়েন। আইপিএলে ২০১০ সাল থেকে পোলার্ড খেলছেন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে। এবারের আসরে এখনও পর্যন্ত ছয় ম্যাচ খেলে জয়ের দেখা পায়নি টুর্নামেন্টের পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা।
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা