সালমা মুন্নী :
আজ ২৯ এপ্রিল আন্তর্জাতিক নৃত্যদিবস। ইউনেস্কো ১৯৮০ সালে তার জন্মদিন ২৯ এপ্রিলকে আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস ঘোষণা করে। তখন থেকে পৃথিবীব্যাপী এ দিবস আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করা হয়। বাংলাদেশে ১৯৯১ সাল থেকে এ দিনটি বিশেষভাবে পালিত হয়ে আসছে। ইন্টারন্যাশনাল ডান্স কাউন্সিল বাংলাদেশ শাখা ও বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা যৌথভাবে আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবসের অনুষ্ঠান পালন করে। দিবসটি উদ্যাপন করা হয় ব্যালে নৃত্যের স্রষ্টা জ্যঁ জর্জ নভেরের জন্মদিনে। জ্যঁ জর্জ নভেরের অবদানের স্বীকৃতির মাধ্যমে একদিকে যেমন নৃত্যের জন্য বিশেষ একটি দিন নির্ধারিত হয়, তেমনি এই গুণী শিল্পীকেও শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ তৈরি হয়।
বিশ্বে এখনো বিরাজমান মহামারী। বিগত দুই বছরে করোনার ছোবলে আমরা অনেকেই নিজের আপনজনদের হারিয়েছি। বিগত ২০২০ থেকে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ছড়িয়ে যাওয়ার কারণে আমরা মঞ্চে কোন পরিবেশনার আয়োজন করতে পারিনি। কিন্তু নৃত্যশিল্পীরা থেমে থাকেনি, লকডাউনের বিধিনিষেধের ভেতর আমরা ঘরে বসেই অন লাইনে দেশ এবং দেশের বাইরের নৃত্যশিল্পীদের পরিবেশনা যুক্ত করে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। নাচই আমার সব, আমিই প্রথম ২০২০ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চে নৃত্যদলের পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চ আলোকিত করেছিলাম। নিজের বাড়ির ছাদ থেকে ১লা ডিসেম্বর ২০২০ আমার নৃত্যদলের লাইভ পরিবেশনাান লাইনে উপস্থাপন করেছি সকাল সাতটায়। আমার সৌভাগ্য যে, দুটি অনুষ্ঠানেই বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে.এম. খালিদ এম.পি।
প্রতিবারের ন্যায় এবারো একজন বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী দক্ষিণ কোরিয়ার ক্যাং সু-জিন বাণী দিয়েছেন। এবারকার বাণীতে বিশেষভাবে প্রাধান্য পেয়েছে কোভিড-১৯ এর বিপর্যয়ের মধ্যে নৃত্যশিল্পীদের দিনযাপনের কথা। ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইনস্টিটিউট ১৯৮২ সালে ব্যালে নৃত্যের স্রষ্টা জ্যাঁ জর্জেস নভেরার (১৭২৭-১৮১০) জন্মদিনকে আন্তর্জাতিক নৃত্যদিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ফরাসী এই বিশ্বখ্যাত নৃত্য শিল্পীকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য তারা এই দিনটিকে বেছে নিয়েছেন। সেই থেকে ২৯ এপ্রিল সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক নৃত্যদিবস নানা আনন্দঘন অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্যদিয়ে উদযাপিত হয়ে আসছে। আমাদের বাংলাদেশ সহ প্রতিবেশি দেশগুলোতেও এই দিবসটি উদযাপনে নৃত্যশিল্পীরা নানারকম আনন্দঘন আয়োজন করে থাকেন।
কোভিড-১৯ শুরুর কিছুদিন পন পৃথিবীর সব দেশের বাংলাভাষী শিল্পীদের নিয়োন লাইন অনুষ্ঠান শুরু করি। কোভিড-১৯ মহামারীর লকডাউনের মধ্যে গুরুজনেরা আমার অন লাইনের অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে তাঁদের দিন যাপনের কথা জানিয়েছেন। ঘরে বসে শিল্পীমন তাই থেমে থাকার নয়। তবে আল্লাহ্র অশেষ কৃপায় পৃথিবীতে আস্তে আস্তে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। আমরা নৃত্যশিল্পীরাও আবারো আগের অবস্থানে পৌছাতে পারবো ইনশাআল্লাহ্।
তবে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাবো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। যিনি আমাদের ছেলেমেয়েদের আর্থিক সহায়তা সহ প্রতি ঈদে ঈদ উপহার দিয়েছেন। আরও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এবং বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থাকে। যাঁরা আমাদের মাঝে সহায়তা সামগ্রী ও উপহার সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। আশা করছি আগামী দিনগুলোতে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সুস্থ্য এবং ভালো থেকে আমাদের নৃত্যশিল্পীদের পূর্বের থেকে বিশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে আমাদের পাশে থাকবেন।
সবাইকে ২৯ এপ্রিল আন্তর্জাতিক নৃত্যদিবসের অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। সবাই বেশি বেশি করে নৃত্যানুষ্ঠান দেখবেন এবং ছেলেমেয়েদের সুস্থ্যধারার সংস্কৃতি চর্চায় নৃত্যগুরুদের কাছে নাচ শেখাবেন। মাস্ক অবশ্যই পরে সুস্থ্য এবং ভালো থাকবেন।
(লেখিকা সালমা মুন্নী একজন নৃত্যশিল্পী ও পরিচালক )
আরও পড়ুন
ইউটিউব থেকে সরানো হলো শাকিবের ‘তুফান’
চিন্তিত অনন্যা পান্ডে
কনাকে নিয়ে সুখবর দিলেন আসিফ