অনলাইন ডেস্ক :
গত কয়েক বছরে টেস্ট ক্রিকেট যেন তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাচ্ছে। একের পর এক রোমাঞ্চকর ম্যাচের দেখা মিলছে ক্রিকেটের এই এলিট সংস্করণে। ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড সিরিজ ও ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের এজবাস্টন টেস্টের রোমাঞ্চ চোখে লেগে থাকতে থাকতেই শ্রীলঙ্কার মাটিতে পাকিস্তান গড়ল ইতিহাস। গল টেস্টের পঞ্চম দিনে আব্দুল্লাহ শফিকের বীরত্বে ৪ উইকেটের রোমাঞ্চকর জয় পেয়েছে পাকিস্তান। গলের ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম মাঠে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ দলীয় ইনিংসটা ছিল ঠিক ৩০০ রানের। সে রেকর্ডটা আবার পাকিস্তানেরই গড়া। এ মাঠে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডটি শ্রীলঙ্কার। ২০১৯ সালের আগস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৬৮ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে তারা জিতেছিল ৬ উইকেটের ব্যবধানে। তাই শ্রীলঙ্কার দেয়া ৩৪২ রানের লক্ষ্য টপকাতে হলে নতুন রেকর্ড গড়তে হতো পাকিস্তানকে। প্রথম ইনিংসে বাবর আজম অমন অতিমানবীয় সেঞ্চুরি না হাঁকালে যাদের রান দেড়শই পার হতো না, তারা এই পাহাড় টপকাবে -এমনটা হয়তো স্বয়ং পাকিস্তানিরাও আশা করেনি। তবে আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তান ঘটাতে পারে অঘটন, তাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছিল না। তবে চতুর্থ দিন পাকিস্তান যখন ব্যাট হাতে রান তাড়া করতে নামছিল তখন হয়তো আব্দুল্লাহ শফিক পণ করেই নেমেছিলেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে এক বছর আগে অভিষিক্ত ২২ বছরের এই তরুণ এরইমধ্যে জানান দিয়েছেন নিজের দৃঢ়তার। আগের পাঁচ টেস্টেই একটি শতক হাঁকানোর পাশাপাশি করেছেন চারটি অর্ধশতক। শফিক আর ইমাম উল হক তাই করলেন যা এই ম্যাচ জয়ের জন্য পাকিস্তানের দরকার ছিল। দারুণ একটা উদ্বোধনী জুটি উপহার দিলেন দলকে। ওপেনিং জুটিতে শফিকের সঙ্গে ৮৭ রান করেন ইমাম। তাকে সাজঘরে ফেরান রমেশ মেন্ডিস। ৭৩ বল মোকাবিলায় ৩ বাউন্ডারিতে ৩৫ রান করেন ইমাম। সেদিন পাকিস্তান হারিয়েছে আরও দুই উইকেট। নিষ্প্রভ আজহার আলী ও ইনফর্ম বাবর আজম ফিরেছেন দিন শেষের আগেই। দ্বিতীয় উইকেটে ব্যাট হাতে নামা আজহার আলীকে ক্রিজে স্থায়ী হতে দেননি প্রভাত জয়াসুরিয়া। ৩২ বল মোকাবিলায় তিনি করেন মাত্র ৬ রান। ক্রিজে এসে শফিকের সঙ্গে শতরানের জুটি গড়া অধিনায়ক বাবরকেও ফেরান প্রবাথ। তবে ততক্ষণে দরকারি কাজ সেরে ফেলেছেন দুজন মিলে। মাঠ ছাড়ার আগে ১০৪ বলে ৫৫ রানের ইনিংস খেলেন বাবর। ৪ চার ও এক ছক্কার ইনিংসটির মাধ্যমে তিনি স্পর্শ করেছেন নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারে তিন হাজার রানের মাইলফলক। ৫৩.৭৮ গড়ে ৭৩ ইনিংসে বর্তমানে তার রান সংখ্যা ৩০২৫। চতুর্থ দিন শেষে ৩ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তানের সংগ্রহ ২২২ রান। জয়ের জন্য শেষ দিনে বাবর আজমদের প্রয়োজন ছিল আর ১২০ রান। হাতে সাত উইকেট নিয়ে এই রান মোটেই কঠিন কিছু নয়। পঞ্চম দিনে প্রথম সেশনটা দুই অপরাজিত ব্যাটার শফিক আর মোহাম্মদ রিজওয়ান কাটিয়ে দিতে পারলে খুব সম্ভব ইতিহাস গড়া। দিনের শুরুটা হয়েছেও পাকিস্তানের মনের মতো। আগের দিনের রানের সঙ্গে আরও ৫৪ রান যোগ করে তবেই ভাঙে এই জুটি। ততক্ষণে উইকেটে সকালে থাকা ময়েশ্চারও গায়েব। নতুন ব্যাটারদের জন্য ব্যাটিংটা আর ততটা কঠিনও থাকল না। ৪০ রান করে জয়াসুরিয়ার তৃতীয় শিকারে পরিণত হন তিনি। জয়ের জন্য তখন পাকিস্তানের দরকার ৬৬ রান। এ সময় পাকিস্তান দ্রুত দুই উইকেট হারালে কিছুটা আশার আলো দেখতে থাকে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। আগা সালমান ১২ রান করে জয়াসুরিয়ার বলে ফেরেন। ৫ রান করা হাসান আলীকে ফেরান ডি সিলভা। ব্যাস এতোটুকুই। উইকেটে থাকা আব্দুল্লাহ শফিক যে পণ করে রেখেছেন ম্যাচ শেষ করে ফেরার। বাকি পথটুকু পেরোতে ২২ বছর বয়সী তারকাকে সঙ্গ দিয়েছেন বল হাতে পাঁচ উইকেট নেয়া মোহাম্মদ নেওয়াজ। ৩৪ বলে ১৯ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। ম্যাচ জিতিয়ে অপরাজিত থাকা আব্দুল্লাহ শফিক পাকিস্তানের ইতিহাস গড়ার নায়ক। এই মাঠে এর চেয়ে বড় লক্ষ্য তাড়া করে জয় পায়নি আর কোনো দলই। তাই ম্যাচ সেরার দৌড়ে তার অপরাজিত ১৬০ রানের ইনিংসের কাছে হার মেনেছে প্রথম ইনিংসে বাবর আজমের অবিশ্বাস্য সেঞ্চুরি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ের নায়ক প্রবাথ পাকিস্তানেরও কঠিন পরীক্ষা নিয়েছেন। প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার পর এই ইনিংসেও চার উইকেট নিয়েছেন এই বাঁহাতি স্পিনার। অল্পের জন্য একটা রেকর্ড হাতছাড়া করলেন তিনি। অভিষেকের পর টানা চার ইনিংসে যে পাঁচ উইকেট নেই আর কোনো স্পিনারের।
আরও পড়ুন
রেফারিংয়ের সমালোচনায় জাভি
বাংলাদেশের নতুন স্পিন বোলিং কোচ পাকিস্তানের মুশতাক
মোস্তাফিজের আইপিএলে খেলে শেখার কিছু নেই: জালাল ইউনুস