অনলাইন ডেস্ক :
দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে জড়িত সম্পদশালী ব্যবসায়ীদের আয়কর রিটার্নের তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। মূলত অর্থ পাচার এবং রাজনৈতিক ও সন্ত্রাসের পিছনে অর্থ যোগান দেয়া হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখা। সেজন্য বিভিন্ন কর অঞ্চল থেকে ধাপে ধাপে রাজস্ব ফাঁকি দেয়া বেশি আয়ের সম্পদশালী ব্যক্তিদের রিটার্ন খুঁটিয়ে যাচাই করছে। প্রাথমিকভাবে রিটার্নে তথ্যের গরমিল পাওয়া শতাধিক ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবে এবং নগদে কী পরিমাণ অর্থ লেনদেন হয়েছে, বিদেশ থেকে অর্থ পেয়েছেন কি না, কোন কোন দেশ থেকে, কী খাতে, কে বা কারা অর্থ পাঠিয়েছে তাও দেখা হবে। ওসব ব্যক্তি দেশে ও বিদেশে কাকে কোন খাতে অর্থ দিয়েছেন। আয়-ব্যয় অনুযায়ী রাজস্ব পরিশোধ করেছেন কি না, ওসব ব্যক্তির স্ত্রী-সন্তান, পরিচিতজনদের রিটার্নের তথ্যও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। রিটার্নের তথ্যে গড়মিল পাওয়া শতাধিক ব্যক্তির মধ্যে প্রায় সবাই আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা করে। ওসব ব্যক্তির মধ্যে অনেকে তৈরি পোশাক খাত ও তার সহযোগী শিল্পের ব্যবসায়ী, আবাসন খাতের ব্যবসায়ী, অলংকার ব্যবসায়ী, সিরামিক ব্যবসায়ী, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, বাড়িভাড়ার ব্যবসা করে। তাদের বেশির ভাগই রাজধানীতে এবং বাকিরা বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে বসবাস করেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রিটার্নে প্রাথমিক তথ্যে গড়মিল পাওয়া ব্যক্তি ও তার পরিবারের সদস্যরা ঘনঘন বিদেশে যাতায়াত করে। সমাজে প্রত্যেকেই আর্থিকভাবে সচ্ছল বলে পরিচিত। তাদের কেউ কোনো ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্য নন। ওসব ব্যক্তির একজনও সরাসরি রাজনীতি করে না। তবে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। ওসব ব্যক্তির মধ্যে যারা ব্যবসায়ী, তাদের ভ্যাট (ভ্যালু এডেড ট্যাক্স) বা মূসক (মূল্য সংযোজন কর) রিটার্নের তথ্য চেয়ে সংশ্লিষ্ট কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কশিনারেটে যোগাযোগ করা হবে।
সূত্র জানায়, এনবিআরের রাজস্ব ফাঁকিবাজ কারোর আয়-ব্যয়ের হিসাব খতিয়ে দেখার আইনি ক্ষমতা আছে। রিটার্নে আয়-ব্যয়ের স্পষ্ট তথ্য থাকতে হবে এবং তা অবশ্যই প্রকৃত হিসাবের সঙ্গে মিলতে হবে। দেশে এখন রাজনৈতিক কার্যক্রম বেড়েছে। আর ওই সুযোগে কেউ নাশকতায় অর্থ সরবরাহ করছেন কিনা আয়-ব্যয় সম্পর্কে তদন্তকালে তা মাথায় রাখা হবে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর থেকে ওসব ব্যক্তি ঘোষণা অনুযায়ী পণ্য আমদানি-রপ্তানি করেছেন কিনা তা খতিয়ে দেখবে। ওসব ব্যক্তির কোনো পণ্য বাংলাদেশের দিকে বেনাপোল, সোনামসজিদ, আখাউড়া ও হিলিস্থল বন্দর এবং ভারতের দিকে কালিরানী, আংরাইল, হরিদাসপুর, জয়ন্তীপুর, বানোবেরিয়া, সুটিয়া, বাঁশঘাট থেকে আমদানি বা রপ্তানি হচ্ছে কিনা তা নজরদারি করা হচ্ছে। একই সঙ্গে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণের তথ্যও সংগ্রহ করা হবে। ওসব ব্যক্তির আয় ও সম্পদ বৃদ্ধির পরিমাণ যাচাই করা হবে।
সূত্র আরো জানায়, আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ইতোমধ্যে মাঠে নামছে দেশের ছোট-বড় রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক নেতারা সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। ওসব কর্মসূচির আড়ালে কোনো সন্ত্রাসী ব্যক্তি বা দল জানমালের ক্ষতি করতে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসী কর্মকা- ঘটাতে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহে অর্থ সরবরাহ করছে কিনা তা চিহ্নিত করতে সরকার সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে। তারই অংশ হিসেবে সম্পদশালী শতাধিক ব্যক্তির রিটার্নে দেওয়া তথ্যের সঙ্গে আয়-ব্যয়ের প্রকৃত হিসাব মিলিয়ে দেখছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। উচ্চ আয়ের ওসব ব্যক্তির নিট আয়ের ওপর ২৫ শতাংশ হারে নিয়মিত আয়কর প্রদানে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে অনেকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে কম কর দিয়েছে বা সম্পদের তথ্য গোপন করে একেবারেই কর না দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সঠিক হিসাবে নিয়মিত রাজস্ব আদায়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে এনবিআর। প্রাথমিকভাবে কারো রিটার্ন খতিয়ে দেখে আয়-ব্যয়ের হিসাবে গরমিল পাওয়া গেলে আরো বিস্তারিত তদন্ত করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ধনী ব্যক্তির নথি অধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে এনবিআর সদস্য মইনুল খান জানান, এনবিআর ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে সব ধরনের সহযোগিতা করছে। তবে আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা তথ্য দেয়া ও ভ্যাট ফাঁকি বন্ধে এনবিআর জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। দেশে নাশকতা করতে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি করা হচ্ছে কিনা তাও এনবিআর কঠোরভাবে দেখছে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি