September 22, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, December 30th, 2022, 9:10 pm

আমনের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

এবার সারাদেশেই আমনের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। যদিও সার ও জ্বালানি তেলসহ সব কৃষি উপকরণের বাড়তি দামের কারণে আমন উৎপাদনে কৃষকের বেশি খরচ হয়েছে। তবে গত বছরের চেয়ে এ বছর হেক্টরপ্রতি আমনের ফলন ৭ শতাংশের বেশি হয়েছে। এ বছর প্রথম ভাগে অকাল বন্যা এবং অতিরিক্ত বৃষ্টিতে বোরো ও আউশ ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর আমন আবাদ করতে গিয়েও কৃষকরা বৃষ্টিহীনতার মুখোমুখি হয়। এমন পরিস্থিতিতে কৃষি মন্ত্রণালয় আমন আবাদ বৃদ্ধির জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করে। কারণ উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্য পরিস্থিতিতে স্বস্তি আনার জন্য যে কোনো উপায়ে আমন আবাদ সফল করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না। কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এবার কৃষি মন্ত্রণালয় ৫৯ লাখ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। তার মধ্যে রোপা আমন ৫৬ লাখ ২০ হাজার হেক্টর এবং বোনা আমন ২ লাখ ৮৫ হাজার হেক্টর। ওই জমি চাষের আওতায় এনে এক কোটি ৬৩ লাখ টন চাল আকারে আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ওই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সব উপকরণ যথা- বীজ, সার, কীটনাশক ও সম্পূরক সেচ প্রদান, সঠিক সময়ে সঠিক বয়সের চারা রোপণ ও যথাসময়ে কৃষিতাত্ত্বিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণের কার্যকরি উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু আমন মৌসুমের শুরুতেই অপ্রতুল ও অসম বৃষ্টিপাতের কারণে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বড় ধাক্কা লাগে। জুন-জুলাই-আগস্ট একটানা তিন মাস স্বাভাবিকের চেয়ে অর্ধেকেরও নিচে নেমে আসে বৃষ্টি। ফলে সময়মত বীজ বপন ও চারা রোপণ ব্যাহত হয়। পাশাপাশি পিছিয়ে যায় আমন আবাদ। এমন পরিস্থিতিতে আমন আবাদ নিয়ে কৃষক ও জনমনে শঙ্কা সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে কৃষি বিভাগ দ্রুততম সময়ে সেচ পাম্প ও সেচ প্রকল্প চালু করার উদ্যোগ নেয়। তবে পরবর্তীতে দেশের আবহাওয়াও হঠাৎ করেই অনুকূলে চলে আসে। শুরু হয় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত। বৃষ্টিপাত স্বাভাবিক হওয়ায় কৃষককে আমন চাষাবাদে আর কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি।
সূত্র জানায়, এ বছর দেশে ৫৯ লাখ হেক্টর জমিতে আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ৫৯ লাখ ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে। শেষ পর্যন্ত আমন আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যায়। ইতোমধ্যে আমন ধান কাটা শেষ পর্যায়ে। ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪৯ লাখ ৫৪ হাজার হেক্টর জমির ফসল কাটা হয়েছে, যা মোট জমির প্রায় ৮৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ওসব জমিতে ১ কোটি ৪৭ লাখ ৪৩ হাজার টন চাল উৎপাদন হয়েছে। হেক্টরপ্রতি ফলনের হার ২ দশমিক ৯৭ টন। যদিও এ বছর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে ৩১ জেলার ৮০ হাজার ৭৭৭ হেক্টর আমন মৌসুমের ধান আবাদি জমি আক্রান্ত হয়েছে। তার মধ্যে ৫ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির ধান পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়।
সূত্র আরো জানায়, এবার আমনের আশাতীত ফলনের কারণ হচ্ছে অনুকূল আবহাওয়া। আমনের ভালো ফলনের জন্য পরিস্কার সূর্যালোক, অধিক সৌর বিকিরণ, অধিক গড় তাপমাত্রা, কম আপেক্ষিক আর্দ্রতা এবং মেঘমুক্ত আকাশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আমনের ভালো ফলন পেয়ে কৃষকরাও ভীষণ খুশি। কারণ আমন ধান দিয়ে আবার শূন্য ভাড়ার পূর্ণ করছে কৃষক।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর জানান. ধান রোপণের পর অনুকূল আবহাওয়া ও আলো বেশি থাকায় এবার হের্ক্টরতি চালের গড় ফলন প্রত্যাশার চেয়েও বেশি হয়েছে। মাঠ থেকে ধান কাটার পর আমনের যে ফলন পাওয়া যাচ্ছে তাতে হেক্টরপ্রতি ২.৭৬ টন পাওয়া যাচ্ছে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৭ শতাংশ বেশি। ওই হিসেবে এ বছর আমনে প্রায় ১ কোটি ৬৩ লক্ষ টন চাল উৎপাদন প্রত্যাশা করা হচ্ছে। অনুকূল আবহাওয়া ছাড়াও বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় অনেক নীচু জমি আমন চাষের আওতায় এসেছে এবং স্বাভবিকের তুলনায় বেশি ফলন হয়েছে। অন্যান্য বছর ওসব জমিতে ধান রোপণ করা সম্ভব হয় না। অনেক সময় রোপন করা গেলেও উপর্যুপরি বন্যায় ফসল নষ্ট হয় এবং কিছু টিকে থাকলেও পোকা-মাকড়ের আক্রমণে ফলন অনেক কমে যায়। আগামী জুন পর্যন্ত বোরো (২ কোট ৪ লাখ টন), আউস (৩০ লাখ টন) এবং আমন (১ কোটি ৬৩ লাখ টন) ধরে মোট উৎপাদন হবে ৩ কোটি ৯৭ লাখ টন।