সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে ব্রয়লার মুরগির হিট স্ট্রেসের প্রভাব কমাবে আমলকী। এছাড়া আমলকীর নির্যাস বা পাউডার খাবার ও পানির সঙ্গে ব্যবহার করলে উচ্চ তাপমাত্রাতেও ব্রয়লার মুরগির খাবার গ্রহণের পরিমাণ বাড়বে। সেই ব্রয়লার মুরগির উৎপাদনও বাড়বে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক এসব তথ্য জানিয়েছেন।
বাকৃবির প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. চয়ন গোস্বামী ও পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. বাপন দের তত্ত্বাবধানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ফেলোশিপের অর্থায়নে প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. কামরুল হাসান কাজল এই গবেষণা সম্পন্ন করেন।
গবেষকেরা বলেন, ব্রয়লারের হিট স্ট্রেস কমানোর জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। যেমন সম্পূর্ণ খামারে এয়ার কন্ডিশন বা ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা এবং কিছু সিনথেটিক ড্রাগস ব্যবহার করা। কিন্তু এসব পদ্ধতি উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দেয়, যা আমাদের প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিদের জন্য মোটেও লাভজনক নয়। তাই খামারিদের জন্য দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই সমাধান হচ্ছে প্রাকৃতিকভাবে হিট স্ট্রেসের প্রভাব কমানোর উপায় বের করা। এক্ষেত্রে আমলকী অত্যন্ত কার্যকরী বলে দাবি করেন তারা।
তবে ভবিষ্যতে ব্রয়লার মুরগির ক্ষেত্রে আমলকীর ব্যবহার নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলেও জানান গবেষকরা।
ব্রয়লারের ক্ষেত্রে আমলকীর বিভিন্ন উপকারী দিক সম্পর্কে গবেষকেরা ইউএনবিকে বলেন, ব্রয়লারের খাদ্যের সঙ্গে আমলকীর নির্যাস বা পাউডার মিশিয়ে দিলে খাবার গ্রহণে কোনো সমস্যা দেখা যায় না। কারণ আমলকীর পাউডার খাবারের স্বাদে কোনো পরিবর্তন আনে না। এছাড়া আমলকীর পাউডার ব্রয়লারের ক্ষুধাবর্ধক হিসেবেও কাজ করে।
আমলকীকে অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প উল্লেখ করে অধ্যাপক বাপন দে বলেন, আমলকী উচ্চমাত্রায় ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। অ্যান্টিবায়োটিকে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকলেও আমলকীর পাউডার প্রাকৃতিক হওয়ায় কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। এছাড়াও এতে ফাইটোকেমিক্যাল থাকায় তীব্র গরমে ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সহায়তা করে।
তিনি আরও বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে আমলকী ব্যবহারে মুরগির পরিপাকতন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বেড়ে যায় এবং ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ কমে যায়।
উচ্চ তাপমাত্রায় ব্রয়লারের বিরূপ প্রভাব ও আমলকীর মাধ্যমে প্রভাব কমানোর পদ্ধতি সম্পর্কে অধ্যাপক চয়ন গোস্বামী বলেন, দ্রুত বিপাকীয় হার, বৃদ্ধি ও ঘর্মগ্রন্থি না থাকায় ব্রয়লার হিট স্ট্রেসের প্রতি যথেষ্ট সংবেদনশীল। উচ্চ তাপমাত্রায় মুরগির দেহে প্রচুর পরিমাণ ফ্রি রেডিক্যাল ও রিয়েক্টিভ অক্সিজেন স্পিসিস (আরওএস) উৎপন্ন হয়; যা শরীরে আমিষ, লিপিড, ডিএনএ ও শক্তি উৎপাদন হ্রাস করে। কিন্তু আমলকী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় ফ্রি রেডিক্যাল ও আরওএসের ক্ষতিকর প্রভাবকে কমিয়ে দেয়; যা ওজন বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।
প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিদের ব্যবহারের কথা মাথায় রেখে অত্যন্ত সহজ উপায়ে আমলকীর পাউডার বানানো হয় বলে জানান অধ্যাপক চয়ন।
তিনি বলেন, প্রথমে সংগ্রহ করা আমলকী পরিষ্কার করে হালকা রোদে শুকানো হয়েছে। এরপর বীজগুলো ফেলে দিয়ে বাকি অংশ পুনরায় হালকা রোদে শুকিয়ে পাউডার তৈরি করা হয়েছে।
আমলকী পাউডার ব্যবহার পদ্ধতি সম্পর্কে অধ্যাপক চয়ন ইউএনবিকে বলেন, এক কেজি আমলকী থেকে ১৫০ থেকে ১৯০ গ্রাম পর্যন্ত পাউডার পাওয়া যায়। আমরা গবেষণায় শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ ও ১ শতাংশ ডোজ দুইটি ব্যবহার করেছি। তাই এক কেজি খাবারের সঙ্গে ৫ অথবা ১০ গ্রাম পাউডার মিশিয়ে খাওয়ানো যাবে।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ অসংখ্য উদ্ভিদ থাকতেও আমলকী কেন ব্যবহার করা হলো এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক চয়ন বলেন, অন্যান্য উৎসের তুলনায় আমলকীতে ভিটামিন সির পরিমাণ অনেক বেশি। প্রতি ১০০ গ্রাম আমলকীতে ৫০০ থেকে ৭০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ভিটামিন সি পাওয়া যায়। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে আমলকির উৎপাদন প্রচুর পরিমাণে বেড়েছে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের হাইব্রিড ও দেশীয় প্রজাতির আমলকী পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আমলকীর মতো বিভিন্ন ওষুধি গাছ লাগানোর প্রকল্পও হাতে নিয়েছে।
উচ্চ তাপমাত্রায় আমলকীর পাউডার ব্যবহারের মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে ব্রয়লারের ওজন বৃদ্ধি ও তাপমাত্রাজনিত মৃত্যু হ্রাস পেয়েছে। তবে ভবিষ্যতে ব্রয়লারে আমলকীর ব্যবহার নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে উল্লেখ করে অধ্যাপক চয়ন বলেন, ব্রয়লারের হিট স্ট্রেসের প্রভাব কমাতে আমলকীর ফাইটোকেমিক্যালগুলোর মধ্যে কোনটি সক্রিয় উপাদান হিসেবে কাজ করছে তা বের করতে হবে। অন্যান্য অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে আমলকীর তুলনামূলক গবেষণা করে দেখতে হবে। ব্রয়লারের কোন অঙ্গে আমলকী কেমন প্রভাব ফেলছে তাও পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
এই তিনটি বিষয়ে বিশদভাবে গবেষণা করলে পোল্ট্রি খাতে আমলকী অভূতপূর্ব অবদান রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন এই গবেষক।
—-ইউএনবি
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি