November 17, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, April 4th, 2023, 8:48 pm

আমানতকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে আইবিবিএল

ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ মনিরুল মওলা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সাম্প্রতিক সময়ে নানা গুঞ্জনে ব্যাংকিং খাত থেকে যে টাকা তোলা হয়েছিল, তা ফেরত আসতে শুরু করেছে। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল)  এরই মধ্যে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা আমানত ফেরত দিয়েছে। ধীরে ধীরে বাকি টাকা চলে আসবে ব্যাংকের ঝুড়িতে। ব্যাংকটি এ বছর তার ৪০ তম বার্ষিকী উদযাপন করছে। ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ মনিরুল মওলা দ্য নিউ নেশন (এনএন) এর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে ব্যাংকটির সাফল্যের গল্প তুলে ধরেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিউ নেশনের সিনিয়র রিপোর্টার আল আমিন।

এনএন: আমি ইসলামী ব্যাংকের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাই।

মোহাম্মদ মনিরুল মওলা: ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল) ১৯৮৩ সালে দেশের প্রথম শরিয়াহ-ভিত্তিক ব্যাংক হিসাবে কার্যক্রম শুরু করে। তখন থেকে, প্রচলিত ব্যাংকগুলির সাথে দেশে শরিয়াহ-ভিত্তিক ব্যাংকগুলি বিস্তৃত হতে শুরু করে। বর্তমানে দেশে ১০টি সম্পূর্ণ শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংক রয়েছে। এছাড়াও, প্রায় সব ব্যাংকই প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবসার পাশাপাশি শরীয়াহ ভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডোজ বা ইসলামী ব্যাংকিং শাখা চালু করেছে। ফলে ব্যাংকিং খাতে ইসলামি ব্যাংকিং-এর শেয়ার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। একের পর এক নতুন সাফল্য নিয়ে আসছে ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকটি আমানত, বিনিয়োগ, আমদানি, রপ্তানি, রেমিট্যান্স সংগ্রহ, শিল্পায়ন, এসএমই বিনিয়োগ, উদ্যোক্তা উন্নয়ন, গ্রামীণ উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং নারীর ক্ষমতায়নসহ প্রায় সব ক্ষেত্রেই স্মরণীয় হয়ে আছে। জাতীয় অর্থনৈতিক  প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের অংশীদার ইসলামী ব্যাংক, জাতীয় কোষাগারে সবচেয়ে বড় অবদানকারী।

এনএন: রেমিট্যান্স সংগ্রহে আপনি কীভাবে শীর্ষস্থান অর্জন করলেন?

মোহাম্মদ মনিরুল মওলা: ইসলামী ব্যাংক দেশের এক-তৃতীয়াংশের বেশি রেমিটেন্স সংগ্রহ করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। ২০২২ সালে, ইসলামী ব্যাংক আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য এবং রেমিটেন্স সংগ্রহ করেছে যথাক্রমে ৭৫,৪০৪ কোটি টাকা, ৩৬,৯৬৩ কোটি টাকা এবং ৪৫,৬৯৭ কোটি টাকা। প্রবাসী বাংলাদেশিরা গত ৪০ বছরে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। ব্যাংকটি বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স সংগ্রহের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, সৌদি আরব, কাতার, জর্ডান এবং সিঙ্গাপুরে ৩১ জন প্রতিনিধির মাধ্যমে কাজ করছে। বিশ্বের ৫৯৪টি করেসপন্ডেন্ট ব্যাংকের সাথে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া রেমিট্যান্স সংগ্রহের জন্য ১৫৫টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে। বেশিরভাগ প্রবাসী মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করেন। প্রায় ৫৪শতাংশ রেমিট্যান্স আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। এর আগে তারা বাংলাদেশে পাঠানোর সহজ, নিরাপদ ও দ্রুত উপায় না পেয়ে এসব দেশ থেকে অবৈধভাবে টাকা পাঠাতো। ইসলামী ব্যাংক সেসব দেশ থেকে আইনি মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য একটি কাঠামো তৈরি করে এবং নিয়মিত বিশেষ প্রচারণার মাধ্যমে প্রবাসীদের সচেতন করে।

এনএন: ব্যাংকের আমানত কত?

মোহাম্মদ মনিরুল মওলা: ইসলামী ব্যাংক জনগণের আমানতের অর্থের বিশ্বস্ত কাস্টডিয়ান। ব্যাংকের বর্তমান আমানত ১.৪২ লাখ কোটি টাকার বেশি। সঞ্চয় মানসিকতা, উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও কর্মমুখী জীবনের সুযোগ সৃষ্টি করে দেশের প্রতিটি পরিবারের চাহিদা পূরণে কাজ করছে এই ব্যাংক।

এনএন: গ্রাহক সংখ্যা কেমন?

মোহাম্মদ মনিরুল মওলা: বর্তমানে ব্যাংকটির গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। দেশের ব্যাংকিং খাতে এই ব্যাংকের ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা ব্যবহারকারীর সংখ্যা শীর্ষে। গ্রাহক ও গণমানুষের অবিচল আস্থা, ভালোবাসা ও সহযোগিতার ফলে ইসলামী ব্যাংক আজ এই অবস্থানে রয়েছে।

এনএন: অবকাঠামো উন্নয়ন ও শিল্পায়নে ব্যাংকের ভূমিকা সম্পর্কে কিছু বলবেন?

মোহাম্মদ মনিরুল মওলা: দেশের ৬ হাজারের বেশি শিল্প প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংকের অর্থায়ন করছে। আমরা সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছি এসএমই খাতে। ইসলামী ব্যাংক কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন, উদ্যোক্তা উন্নয়ন, আঞ্চলিক বৈষম্য নিরসন, নারীর ক্ষমতায়ন, সর্বোপরি সুষম ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এসএমই খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। দেশের আবাসন বিনিয়োগে ব্যাংকের বাজার শেয়ার ১০ শতাংশের বেশি। এ খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রায় ১২ লাখ মানুষের আবাসন নিশ্চিত করা হয়েছে। পরিবহন খাতে মোট বিনিয়োগের প্রায় ১৮ শতাংশই ইসলামী ব্যাংকগুলোর। বর্তমানে ব্যাংকের বিনিয়োগকৃত নিবন্ধিত গাড়ির সংখ্যা অর্ধ মিলিয়নেরও বেশি।

এনএন: গ্রামীণ উন্নয়নে আইবিবিএল-এর বিনিয়োগ কেমন?

মোহাম্মদ মনিরুল মওলা: ইসলামী ব্যাংক ১৯৯৫ সালে পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প (আরডিএস) চালু করে। এই প্রকল্পের অধীনে গ্রামীণ দরিদ্র জনগণের মধ্যে বিভিন্ন আয়বর্ধক কার্যক্রমে সচেতনতা সৃষ্টি, দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ, সঞ্চয় গঠন, বিনিয়োগ কার্যক্রম রয়েছে। ২০১২ সাল থেকে, ‘শহুরে দরিদ্র উন্নয়ন প্রকল্প’ শহরাঞ্চলের বস্তিবাসীসহ দরিদ্র মানুষের জন্য কাজ করছে। এই প্রকল্পের ১৬ লক্ষেরও বেশি সদস্য ৩২ হাজার গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। যার ৯৪ শতাংশই নারী।

এনএন: আমি ব্যাংকিং পরিসেবায় আপনার পুরস্কার সম্পর্কে জানতে চাই।

মোহাম্মদ মনিরুল মওলা: যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিখ্যাত ব্যাংকিং ম্যাগাজিন ‘দ্য ব্যাংকার’-এর মূল্যায়নে ২০১২ সালে বিশ্বের শীর্ষ ১০০০ ব্যাংকের তালিকায় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাংক হিসেবে স্থান পায়। এরই ধারাবাহিকতায় ইসলামী ব্যাংক টানা ১২ বার বিশ্বের শীর্ষ ব্যাংকের তালিকায় রয়েছে। এই তালিকায় বর্তমানে ব্যাংকটির অবস্থান ৮৮২তম। ইসলামী ব্যাংক বিশ্বের সেরা ইসলামী ব্যাংক সিবাফি পুরস্কার জিতেছে। ইসলামী ব্যাংক ট্যাক্স কার্ড অ্যাওয়ার্ড ২০২২, আইসিএসবি গোল্ড অ্যাওয়ার্ড, আইসিএমএবি বেস্ট কর্পোরেট গোল্ড অ্যাওয়ার্ডসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে।

এনএন: কৃষি খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংক কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

মোহাম্মদ মনিরুল মওলা: ইসলামী ব্যাংকের অর্থায়নে দুই হাজারের বেশি কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে ২৬টি পাটকল চালু রয়েছে। দেশে উৎপাদিত পাটজাত পণ্যের ১৭ শতাংশের বেশি ইসলামী ব্যাংকের অর্থায়নে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত হয়। এছাড়া বেসরকারি খাতে সার আমদানিতে সবচেয়ে বেশি অর্থায়ন হয়। পচনশীল কৃষি পণ্য সংরক্ষণের জন্য অর্ধশতাধিক কোল্ড স্টোরেজ অর্থায়ন করেছে। ব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় ৮৫২টি অটো রাইস মিল স্থাপন করা হয়েছে। দেশের প্রথম অটো রাইস মিল এবং ব্রান অয়েল মিল (রাইস ব্রান থেকে ভোজ্যতেল কারখানা) স্থাপনের জন্য প্রথম অর্থায়ন করেছে ইসলামী ব্যাংক।

এনএন: আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

মোহাম্মদ মনিরুল মওলা: আপনাকেও ধন্যবাদ।