অনলাইন ডেস্ক :
কেশভ মহারাজের ফুল টস ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় লং অনে ধরা মাহমুদউল্লাহ। ডাগ আউটে ক্যামেরা ধরতেই দেখা গেল, বিজ্ঞাপনী বোর্ডে থুতনি ঠেকানো বিষাদে নিমজ্জিত তাওহিদ হৃদয়ের মুখ। দুই ওভার আগে তার বিদায়ের পর থেকেই একটু একটু করে পেছাতে থাকে বাংলাদেশ। আর মাহমুদউল্লাহর আউটে প্রায় নিশ্চিত হয় পরাজয়। ম্যাচ শেষে তাই হতাশা কাটিয়ে উঠতেও যেন সময় লাগল হৃদয়ের। দলের বাকি সবার চেয়ে ভালো খেললেও, শেষ পর্যন্ত টিকে ম্যাচ জিতিয়ে আসতে না পারায় নিজেকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন তরুণ মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান। নিউ ইয়র্কে ব্যাটসম্যানদের জন্য বধ্যভূমির ন্যায় উইকেটে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে হৃদয়ই ছিলেন সাবলীল। ছোট রানের ম্যাচে বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান করেন তিনি। দুটি ছক্কা মারেন কেশভ মহারাজকে।
মার্কো ইয়ানসেন, ওটনিল বার্টম্যানদের বাউন্ডারি মেরে রানের চাহিদাও রাখেন নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারেননি টিকে থাকতে। ১৮তম ওভারে কাগিসো রাবাদার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন ৩৩ বলে ৩৭ রান করা হৃদয়। তার আউটের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন অবশ্য তোলাই যায়। রাবাদার আধা-আধা আবেদনেই আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। হৃদয় রিভিউ নিলে দেখা যায়, লেগ স্টাম্পের বেলস ছুঁয়ে যেত বল। অর্থাৎ মাঠের আম্পায়ার ‘নট আউট’ দিলেও কোনো ভুল হতো না। হৃদয় ফেরার সময় ১৭ বলে ২০ রান প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। ক্রিজে গিয়ে পরপর তিনটি ডট খেলে নিজের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন জাকের আলি। সেখান থেকে আর বের হতে পারেননি। মাহমুদউল্লাহও পারেননি শেকল ভাঙতে। শেষ তিন ওভারে কোনো বাউন্ডারি মারতে না পেরে ৪ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ।
ম্যাচে ১১৪ রানের লক্ষ্যে আরও একবার হতাশ করেন ওপরের সারির ব্যাটসম্যানরা। সাবধানী শুরুর পর চার ওভারের মধ্যে ড্রেসিং রুমে ফেরেন লিটন কুমার দাস, সাকিব আল হাসান ও নাজমুল হোসেন শান্ত। এর মধ্যে আনরিক নরকিয়ার বলে পুল করতে গিয়ে একই জায়গায় একই ফিল্ডারের হাতে ক্যাচ দেন সাকিব ও শান্ত। খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে হৃদয়ের কাছে তাই প্রশ্ন রাখা হয়, পরপর দুই ওভারে দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের ফেরাটাই কি ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট ছিল কিনা! উত্তরে সম্পূর্ণ দায় নিজের কাঁধে নিয়ে নেন হৃদয়। “ম্যাচ হেরে গিয়েছি… আমার আউটে। আমি যদি ওখানে খেলাটা শেষ করতাম, তাহলে ম্যাচটা হারতাম না। তারা (শান্ত-সাকিব) তো অনেক আগেই আউট হয়ে গেছে। আমি তো শেষ পর্যন্ত ছিলাম ওখানে। আমার মনে হয়েছে, আজকের খেলাটা আমিই পারতাম জিতিয়ে দিতে। আমি আউট হয়ে গিয়েছি, পারিনি। এই তো।”
“আসলে এই স্কোরে জেতার ভালো আত্মবিশ্বাস ছিল আমাদের। ওই অবস্থা থেকে আমার ম্যাচটি শেষ করে আসা উচিত ছিল। এই কন্ডিশনে নতুন ব্যাটসম্যানের জন্য গিয়েই মানিয়ে নেওয়া কঠিন। তাই আমারই শেষ করা উচিত ছিল।” ম্যাচ হারের পর পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে শান্ত বলেন, হৃদয় আউট হওয়ার পরও শেষ ওভারে জাকের ও মাহমুদউল্লাহ উইকেটে থাকায় জয়ের পুরো বিশ্বাস ছিল তার ও দলের। মহারাজের বলে দুজনই পান একটি করে ফুল টস। কিন্তু কেউই সীমানা ছাড়া করতে পারেননি। তবে ওই শেষ ওভার নিয়ে ভাবতে রাজি নন হৃদয়। বরং নিজে উইকেটে থেকে ম্যাচ শেষ করে আসতে না পারার বেদনায়ই যেন পুড়ছেন ২৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
“আমার কাছে কখনও মনে হয়নি, ম্যাচটা হারতে পারি। আমি যদি খেলাটা শেষ করতাম, তাহলে গল্পটা ভিন্ন হতো। ঠিক আছে, এখান থেকে আরও অনেক কিছু শেখার আছে। যে ভুলগুলো ছিল আজকে, সেগুলো সামনের ম্যাচ কমানোর চেষ্টা করব যতটা সম্ভব। ইনশাআল্লাহ্ সবাই ঘুরে দাঁড়াব।” ডালাসের পর নিউ ইয়র্ক, বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দুই ম্যাচে রানের দেখা মেলেনি তেমন। অন্য ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার মাঝে দুই ম্যাচেই উজ্জ্বল হৃদয়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১২৫ রানের লক্ষ্যে তার ২০ বলে ৪০ রানের বিধ্বংসী ইনিংসই বড় পার্থক্য গড়ে দেয়। দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে বাংলাদেশের ত্রিশ ছোঁয়া একমাত্র ব্যাটসম্যান তিনি।
পরপর দুই ম্যাচে অন্যান্যের ছাপিয়ে যাওয়ার পর নিজের ব্যাটিং পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্নে স্বচ্ছ পরিকল্পনার কথা বলেন হৃদয়। “ব্যাটিংয়ের সময় আমার একটাই লক্ষ্য থাকে, ইন্টেন্ট নিয়ে ব্যাটিং করব। রানের খেলা, মাথায় পরিকল্পনা থাকে, পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন, রান কীভাবে করতে পারি। কিছু সময় কঠিন পরিস্থিতি পাব, ম্যাচের চাহিদা অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করি তখন।” “এই উইকেটে অনেক বড় বড় ব্যাটসম্যানরাও রান করতে পারছে না। বা স্ট্রাইক রেট অনেক উঁচুতে রাখাও কেউ নেই। এই উইকেট পুরোপুরি ভিন্ন। এখানে যেভাবে আমরা ব্যাটিং করেছি, শুরুটা ঠিক ছিল। মাঝেও ঠিকঠাক ছিল। শুধু শেষটা করতে পারিনি। আমার মনে হয়েছে, ওই জায়গায় যদি আমি খেলাটা শেষ করে আসতে পারতাম, তাহলে হয়তো গল্পটা আলাদা হতো।”
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা