April 25, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, January 2nd, 2023, 8:23 pm

আমিরাতে বৃষ্টি ঘটাতে মেঘের ওপর খবরদারি

অনলাইন ডেস্ক :

সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো মরুপ্রধান দেশে যথেষ্ট বৃষ্টিপাত ঘটে না। কৃত্রিম পদ্ধতিতে বৃষ্টির ব্যবস্থা করে সেই ঘাটতি পূরণের চেষ্টা চলে আসছে। এক সুইডিশ পাইলট সেই বিশাল কর্মযজ্ঞে অংশ নিচ্ছেন। ৪৮টি লবণের কার্তুজ ব্যবহার করে আন্ডার্স মার্ড মেঘের কান্নার ব্যবস্থা করতে পারেন। বৃষ্টিপাত ঘটানোই তাঁর পেশা। আজ পরিবেশ সেই কাজের জন্য বেশ অনুকূল। কাজ শুরু করার আগে তিনি শেষবার সব ঘুরে দেখেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মেঘের মধ্যে টিকা দেবার জন্য ৫৭ বছর বয়সী সুইডিশ এই ব্যক্তির হাতে তিন ঘণ্টা সময় রয়েছে। বিষয়টি কিন্তু বেশ কঠিন। নিজের অতীতের কাজের উল্লেখ করে আন্ডার্স মার্ড বলেন, ‘পেশাদারী জীবনের বেশিরভাগ সময়ে আমি যাত্রীদের সুবিধার স্বার্থে মেঘ এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেছি বলে ক্লাউড সিডিং আমার মতো মানুষের জন্য কিছুটা অস্বাভাবিক৷ এখন আমি মেঘের মধ্যে বিমান ওড়াই না, মেঘের ঠিক সীমানায় থাকি। তবে বিমান বেশ কেঁপে ওঠে।’ আমিরাতে পানি অত্যন্ত বিরল সামগ্রী হলেও দুবাইয়ের মতো ঝকমকে জমজমাট শহরে বিপুল পরিমাণ পানি ব্যবহার করা হয়। নির্মাণ শিল্পের রমরমাও এর অন্যতম কারণ। প্রতি বছর প্রায় আট লাখ মানুষ আমিরাতে থাকতে আসছেন। বেড়ে চলা তাপমাত্রা ও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া সত্ত্বেও সেই প্রবণতা বন্ধ হচ্ছে না। আবু ধাবির জাতীয় আবহাওয়াবিদ্যা কেন্দ্রে পার্থিব পদ্ধতি প্রয়োগ করে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আহমেদ আল কামালি তার টিমকে আবহাওয়া সংক্রান্ত সর্বশেষ তথ্য দিয়ে মেঘের গতি প্রকৃতি সম্পর্কে স্পষ্ট পূর্বাভাসের দুঃসাহস দেখাচ্ছেন। আমিরাতের আকাশে মেঘের অভাব নেই। কিন্তু বৃষ্টিপাতের হার খুবই কম। সে কারণে চারটি প্রপেলারযুক্ত বিমান ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা মেঘের উপর সোডিয়াম ক্লোরাইড ও পটাসিয়াম ক্লোরাইড নিক্ষেপ করছেন। সেই লবণের কণা পানি একত্র করে ওজন বাড়িয়ে দেয়। ফলে বৃষ্টিপাত ঘটে। তত্ত্ব অনুযায়ী এর ফলে অন্য কোথাও বৃষ্টিপাত কমে যায় না। প্রায় ১৫ বছর ধরে এমন প্রচেষ্টার ফল যথেষ্ট উৎসাহব্যাঞ্জক। আহমেদ আল কামালি বলেন, ‘আমরা সম্প্রতি বৃষ্টিপাত বাড়ানোর বিষয়ে একটি গবেষণা করেছি। তাতে দেখা গেছে, ক্লাউড সিডিং এর দৌলতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বৃষ্টিপাত গড়ে প্রায় ২৩ শতাংশ বেড়েছে। সেরা পরিবেশ থাকলে সেই মাত্রা এমনকি ৩৫ শতাংশও হতে পারে।’ উপসাগরের উপরের আকাশে ঘন মেঘ ঘনিয়ে আসছে। এবার দ্রুত কাজ করতে হবে। আহমেদ আল কামালি বেতার ব্যবস্থার মাধ্যমে আন্ডার্স মার্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি সম্ভাবনাময় কিউমুলাস মেঘ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য পাঠিয়ে দিয়েছেন। পাইলট সেই মেঘের দিকে এগিয়ে চলেছেন। ভালো টাইমিংই সাফল্যের চাবিকাঠি হতে পারে। আন্ডার্স মার্ড বলেন, ‘একই সঙ্গে একাধিক ঘটনা ঘটছে। বিমান চালাতে হবে, হিসেব করে মেঘের চারিদিকে ঘুরতে হবে, যাতে ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় উপস্থিত থাকা যায়। তবে মেঘের আসল আকার অনুযায়ী দিক নির্ণয় করাও জরুরি।’ নির্দেশ পেয়েই আন্ডার্স মার্ড চারটি কার্তুজ নিক্ষেপ করে উপরে উঠে গেছেন। আবহাওয়া কেন্দ্রে পরের মেঘের সন্ধান চলছে। তিন ঘণ্টায় তাকে ২০টি পর্যন্ত মেঘকে টিকা দিতে হবে। সেই কাজের শেষে সাধারণ সাফল্য পাওয়া যায়। গোটা টিম খুশিতে আত্মহারা হয়ে ওঠে। আন্ডার্স মার্ড বলেন, ‘এই কৌশলের কার্যকারিতা সম্পর্কে আমি নিশ্চিত। বলছি না যে ভবিষ্যতে অন্য কোনো পদ্ধতি সৃষ্টি হবে না, যা হয়তো আরও ভালো হবে। তবে এই মুহূর্তে আমার বর্তমান প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থা রয়েছে।’ মরুপ্রধান আমিরাতে বৃষ্টি সত্যি এক আশীর্বাদ। ক্লান্ত অথচ সন্তুষ্ট অবস্থায় আন্ডার্স জেট বিমান থেকে নেমে এলেন। তিনি চারটি মেঘে টিকা দিতে পেরেছেন, ৪০টি কার্তুজ নিক্ষেপ করেছেন। শেষ পর্যন্ত বৃষ্টিও হয়েছে। নিজের উড়ালের মাধ্যমে আন্ডার্স মার্ড জলবায়ু পরিবর্তন থামাতে পারেন না, পানির সংকটও মেটাতে পারেন না। তবে কঠিন সময়ে সামান্য পরিমাণ বাড়তি বৃষ্টির ব্যবস্থা করার মধ্যেও যথেষ্ট সার্থকতা রয়েছে।