অনলাইন ডেস্ক :
সোশ্যাল মিডিয়ায় এমনিতেও বেশ সক্রিয় তিনি। নিয়মিত বিরতিতে ছবি আর ভিডিও আপলোড করেই যেতেন। অনুসারীর সংখ্যাও নেহাত কম ছিল না। কিন্তু লুসাইল স্টেডিয়ামের ১০০ মিনিট পার হতে না হতেই ‘ফলোয়ার’ এমন হু হু করে বাড়তে থাকল যে এক লাফে তা পেরিয়ে গেল তিন লাখ। টুইটারেই শুধু নয়, ইনস্টাগ্রামেও। হওয়ারই কথা। এতদিন নিজ দেশের আল হিলাল ক্লাবের গোলরক্ষকের পরিচিতির দুনিয়া বিস্তৃত ছিল কেবল এশিয়া আর মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যেই। কিন্তু আর্জেন্টিনার বিপক্ষে বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম সেরা অঘটনের জন্ম দেওয়া আরব রূপকথার মধ্যমণি মোহাম্মদ আল ওয়াইসের খ্যাতি যে এখন গোটা দুনিয়াজুড়েই। যদিও পেনাল্টি থেকে লিওনেল মেসির রেকর্ড গড়া গোলে পিছিয়ে পড়া সৌদি আরবকে দ্বিতীয়ার্ধে সমতায় ফিরিয়েছিলেন সালেহ আল সেহরি। তিনজনকে কাটিয়ে অসাধারণ যে লক্ষ্যভেদ, শেষ পর্যন্ত ‘আলবিসেলেস্তে’দের বিপক্ষে তাদের জয়সূচক গোল হয়ে গেছে, সে কৃতিত্বে নায়কের আসনটি নাসের আল দাওসারির জন্যই বরাদ্দ হতে পারত। দুই গোলদাতা প্রাপ্য মর্যাদা পাচ্ছেনও, তবে ওয়াইসের চেয়ে বেশি কিছুতেই নয়। ম্যাচ শেষে ‘এমভিপি’ বা মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ারের পুরস্কারের ট্রফিটা সৌদি গোলরক্ষকের হাতে শোভা তো আর এমনি এমনি পায়নি। প্রথমার্ধে সৌদি শিবিরের অফসাইড ফাঁদে বারবার ধরা পড়তে থাকা আর্জেন্টিনা পিছিয়ে পড়ার পর ঘুরে দাঁড়ানোর মরিয়া চেষ্টায় ক্রমাগত হানা দিয়েছে প্রতিপক্ষের রক্ষণে। ঠিক মুহুর্মুহু না হলেও আক্রমণের গতি ঠিকই বাড়িয়েছিল লিওনেল স্কালোনির দল। তাতে ওয়াইস এবং সৌদি খেলোয়াড়দেরও ব্যতিব্যস্ত করে রাখা গিয়েছিল। কিন্তু ফল পাওয়া যায়নি। পুরো ম্যাচে সৌদি আরবের পোস্টে সব মিলিয়ে ১৫টি শট নিয়েছে আর্জেন্টিনা। এর বেশির ভাগই প্রতিহত হয়েছে ওয়াইস নামের আরব দেয়ালে। রাশিয়ায় ২০১৮-র আসরে জাপানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপে অভিষিক্ত ৩১ বছর বয়সী গোলরক্ষক লুসাইলে যেন হয়ে উঠেছিলেন নিজ দলের মূর্ত এক প্রতীকও। ফুটবল অনুসারীদের জানা থাকার কথা যে সৌদি আরব ফুটবল দলকে বলা হয় ‘দ্য গ্রিন ফ্যালকনস’। ওয়াইসও যেন হয়ে উঠলেন নিজ দলের ক্ষিপ্রতম সেই সবুজ বাজপাখি। জালের গন্তব্য খুঁজে নিতে চাওয়া মেসিদের বেশ কিছু প্রচেষ্টায় বাজপাখির মতোই ছোঁ মারলেন ওয়াইস। মেসির পেনাল্টির সময় দিগভ্রান্ত এই গোলরক্ষক পরে নিজেকে ঠিক গুছিয়ে নিলেন এবং আর্জেন্টিনার আক্রমণ নস্যাৎ করে দিতে দিতে কেড়ে নিলেন পাদপ্রদীপের সব আলোও। তরতরিয়ে বাড়তে থাকল তাঁর অনুসারীর সংখ্যাও। শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই সৌদি গোলরক্ষকের নিজের উল্লাসও ছিল বাঁধভাঙা। সেহরি আর দাওসারির গোলের পাশাপাশি যখন পোস্টের নিচে থাকেন ওয়াইসের মতো অতন্দ্র প্রহরী, তখন দলটির কোচ হার্ভ রেনার্দের এমন প্রতিক্রিয়ায় তাই আশ্চর্যের কিছুই নেই, ‘আজ আমাদের জন্য সব তারকাই এক কাতারে নেমে এসেছিল। ’ সেই ১৯৯৪ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করেই শেষ ১৬-তে জায়গা করে নেওয়ার সাফল্যকেও কালকের লুসাইল পেছনে ফেলে দিচ্ছে। আর্জেন্টিনার মতো কোনো হট ফেভারিটকে তো এর আগে কখনো এভাবে মাথানত করানো যায়নি। তাতে দীর্ঘদিন ধরে মেনে আসা কুসংস্কার থেকেও বোধ হয় আর বের হওয়া হলো না রেনার্দের। ওয়াইসদের এই ফরাসি কোচ ২০১০ সালে ছিলেন জাম্বিয়ার দায়িত্বে। সেবার আফ্রিকান কাপ অব নেশনসের ক্যামেরুন ম্যাচে তিনি মাঠে গিয়েছিলেন হালকা নীলরঙা শার্ট পরে। ওই ম্যাচে ৩-২ গোলে হেরে যাওয়ার পর থেকে মনোজগতে কী এক ওলটপালট হয়ে যায় যে রেনার্দ পরের ম্যাচে পরেন সাদা শার্ট। জাম্বিয়া জেতেই না শুধু, ক্যামেরুনকে পেছনে ফেলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়নও হয়। সেই থেকে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ মানে রেনার্দকে সাদা শার্টে দেখা যাবেই। সংস্কার সব সময় হয়তো ফল দেয়নি, তবে দিল লুসাইলে। বুকখোলা সাদা শার্ট পরে আসা রেনার্দের শিষ্যরা গৌরবের সুউচ্চ এক বেদিতেই যেন তুলে নিলেন কোচকে। সেই সঙ্গে অবিচল রাখলেন তাঁর কুসংস্কারেও। যে বা যাঁরা রাখলেন, তাঁদের মধ্যে প্রথম নামটি নিশ্চিতভাবেই আরব রূপকথার বাজপাখি ওয়াইসের। যিনি নায়ক গোল করে নয়, গোল ঠেকিয়ে!
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা