May 20, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, March 6th, 2024, 9:06 pm

আরাকান আর্মির লক্ষ্য রাখাইনের রাজধানী সিতওয়ে

অনলাইন ডেস্ক :

রাখাইন রাজ্যে পোন্নাগিউনের কাছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার সর্বশেষ ঘাঁটি দখল করে নেয়ার দাবি করেছে জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। এর মধ্য দিয়ে রাজ্যের রাজধানী সিতওয়ে থেকে প্রায় ২০ মাইল উত্তর-পূর্ব দিকে শহরটির নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দাবি করেছে তারা। খবর দ্য ইরাবতীর। এএ জানিয়েছে, এখন রাখাইনের রাজধানী সিতওয়ের দিকে তাদের দৃষ্টি। ওই সামরিক ঘাঁটি দখলের সময় চলা যুদ্ধে সেনাবাহিনীর যুদ্ধবিমান ও নৌবাহিনীর যুদ্ধযান থেকে বোমা হামলা করা হয়। আরাকান আর্মির বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায় তারা। এক পর্যায়ে পোন্নাগিউনের পতনের পর জাই তি পিয়ান সেতু ধ্বংস করে দেয় সামরিক বাহিনীর যুদ্ধবিমান। এই সেতুটি পোন্নাগিউন ও রাথেডাংকে সংযুক্ত করেছিল। সোমবার স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা থেকে সেখানে ১২ বার হামলা চালায় সামরিক জান্তা।

মঙ্গলবার পর্যন্ত আরাকান আর্মির কাছে আটটি শহরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে সামরিক বাহিনী। এর মধ্যে আছে চিন রাজ্যের পালেতোয়াও। এর বাইরে আছে বিপুল পরিমাণ বড় ঘাঁটি ও আউটপোস্ট, নৌ যান। ১৩ই নভেম্বর থেকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বড় রকম আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে আরাকান আর্মি ও অন্য জাতিগোষ্ঠীর বিদ্রোহীরা। তারপর থেকে ধারাবাহিকভাবে একের পর এক পরাজিত হচ্ছে সেনাবাহিনী। এ খবর দিয়েছে অনলাইন দ্য ইরাবতী, মিয়ানমার নাউ, রেডিও ফ্রি এশিয়া। আরাকান আর্মির মুখপাত্র ইউ খাইং থুখা সোমবার এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, পুরো রাখাইনকে স্বাধীন না করা পর্যন্ত এবং রাজ্য থেকে সামরিক শাসকগোষ্ঠীকে উৎখাত না করা পর্যন্ত অব্যাহতভাবে লড়াই চালিয়ে যাবে আরাকান আর্মি।

সামরিক জান্তার সঙ্গে চীনের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে আরাকান আর্মি সহ তিনটি জাতিগত বিদ্রোহী গ্রুপের জোট ‘দ্য থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ জানুয়ারিতে শান রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে হামলা স্থগিত করে। কিন্তু সেই যুদ্ধবিরতি রাখাইন রাজ্যের জন্য প্রযোজ্য ছিল না। এই রাজ্যে সামরিক শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখে আরাকান আর্মি। এএ’র ডেপুটি কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. নিও তুন অং সোমবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, হাইজেং চুক্তি অনুযায়ী বর্তমানে শুধু উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে যুদ্ধবিরতি চলছে। চীনের মধ্যস্থতায় আলোচনায় আমরা চীন-মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্য, অনলাইনে অনিয়ম এবং শান রাজ্যের সীমান্তে স্থিতিশীলতা নিয়ে কথা বলেছি। রাখাইনে যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

এখন পোন্নাগিউন দখলের পর রাখাইনের রাজধানী সিতওয়ে দখল করে নিতে পারে আরাকান আর্মি। পোন্নাগিউন থেকে মাত্র ৪৫ মিনিটের পথ সিতওয়ে। একজন সামরিক বিশ্লেষক দ্য ইরাবতীকে বলেছেন, সামরিক জান্তার সেনাদের কাছ থেকে যেসব অস্ত্র জব্দ করেছে আরাকান আর্মি, এখন সেটা ব্যবহার করেই তারা রাজধানীতে সামরিক ঘাঁটিকে টার্গেট করতে পারবে। তিনি বলেন, এই স্থানটি সিতওয়ের খুবই কাছে। পোন্নাগিউন থেকেই সিতওয়েতে সামরিক ঘাঁটিতে গোলা নিক্ষেপ করা সম্ভব। আরাকান আর্মি এরই মধ্যে রাখাইন রাজ্যের বেশির ভাগ যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছে।

এর অর্থ এই নয় যে, তারা পুরো রাজ্যে জয়লাভ করেছে। রাজ্যের অন্য এলাকাগুলোতে এখনও কিছু সামরিক ঘাঁটি আছে। রাখাইনে জান্তা সরকারের প্রশাসনিক কর্মকা- পরিচালিত হয়। সেনাবাহিনীর ওয়েস্টার্ন কমান্ডের অফিসও এখানে। রাজধানীতে সব সড়ক এবং পানিপথ বন্ধ করে দিয়েছে সেনাবাহিনী। ফলে রাজধানী সিতওয়ের প্রায় সব অধিবাসী অবরুদ্ধ হয়ে আছেন। বর্তমানে সেখান থেকে বাইরে বের হওয়ার একমাত্র উপায় আকাশপথে ভ্রমণ। অন্যদিকে আরাকান আর্মি যেসব শহর দখলে নিয়েছে সেখানে নাগরিকরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারছেন। তারা চির রাজ্যের পালেতোয়া শহর এবং বাংলাদেশ সীমান্তে বাণিজ্য পরিচালনা করতে পারছেন। পোন্নাগিউনের পতন মিয়ানমারের সামরিক জান্তার জন্য সরাসরি একটি বড় হুমকি।