নিজস্ব প্রতিবেদক:
বঙ্গোপসাগরে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে জলদস্যুদের দাপট। দিন দিন তারা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। জলদস্যুদের উৎপাতে দীর্ঘদিন ধরেই অতিষ্ঠ গভীর সমুদ্রে যাতায়াতরত দেশী-বিদেশী মালবাহী জাহাজ ও ট্রলার। জেলেরাও আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জলদস্যুদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যেতে চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি অফিসে বিশেষ বার্তা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। শীঘ্র্রই গভীর সমুদ্রে অভিযানে নামবে কোস্টগার্ড, র্যাব, বিজিবিসহ পুলিশের একাধিক সংস্থা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জলদস্যুদের দাপটে সাগরে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে জেলে ও দেশী-বিদেশী মালবাহী জাহাজ ও ট্রলার। সাগরে রাত বাড়ার সাথে সাথে জলদস্যুদের তৎপরতাও বাড়তে থাকে। জলদস্যুরা দেশী-বিদেশী জাহাজে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে লুটপাট চালাচ্ছে। এমনকি এদেশের জলদস্যুরা মিয়ানমার ও ভারতের জলদস্যুদর সঙ্গে আঁতাত করে বাংলাদেশের জেলেদের ওপর হামলা চালিয়ে মাছ বোঝাই ট্রলার লুট করে নিয়ে যায়। জেলেদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করছে। একাধিক জলদস্যু গ্রুপ বিভক্ত হয়ে বনাঞ্চলের কাঠ পাচার, হরিণ ও বাঘ শিকারসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার ইলিশসহ অন্যান্য সামুুদ্রিক মাছ জলদস্যুরা ভারত ও মিয়ানমারে পাচার করছে। আর তার পেছনে ইন্ধন জোগাচ্ছে প্রভাবশালী চক্র।
সূত্র জানায়, দেশের সাগরপাড় এলাকায় অন্তত দেড়শ’ জলদস্যু গ্রুপ সক্রিয় আছে। তাদের হাতে রয়েছে একাধিক অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ। মিয়ানমার ও বাংলাদেশের দস্যুরা মিলেমিশে কক্সবাজার, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া, টেকনাফ, সুন্দরবন, মাতারবাড়িসহ বিভিন্ন পয়েন্টের গভীর সমুদ্রে দেশী-বিদেশী মালবাহী জাহাজ ও ট্রলারে এবং জেলেদের মাছবাহী ট্রলারে হামলা চালিয়ে লুটপাট চালিয়ে মিয়ানমার সীমান্তে গিয়ে আশ্রয় নেয়। পরে কৌশলে যার যার গন্তব্যস্থলে পালিয়ে যায়। এভাবে প্রতিদিনই জলদস্যুরা কোটি কোটি টাকা মূল্যের ইলিশসহ অন্যান্য সামুুদ্রিক মাছ ভারত ও মিয়ানমারে পাচার করছে। দিন দিন তারা ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে। জলদস্যুরা বিভিন্ন ভারি অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বাংলাদেশের জেলেদের ওপর হামলা চালিয়ে মাছ ও ট্রলার লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যার পরপরই জলদস্যু গ্রুপগুলো বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে গভীর সমুদ্র চষে বেড়ায়। তারা অপহরণ, দেশী-বিদেশী জাহাজে ডাকাতি, জেলে-বাওয়ালিদের জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়, বনাঞ্চলের কাঠ পাচার, হরিণ ও বাঘ শিকারের সঙ্গে জড়িত। বঙ্গোপসাগরের পাশাপাশি দুর্বৃত্তরা সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের কপিলমুনি, বড়শিয়ালা খাল, অরমলখাল, ভেরিখাল, খুলনা রেঞ্জের পাটাকাটা খাল, আলকি, নিশানখালি, ভোমরখালি, পাটকোস্টা, সাতক্ষীরা রেঞ্জের কালিরচর, পুষ্পকাটি, নোটাবেকি, হলদিবুনিয়া, মান্দারবাড়ি, কোপানচি, শরখোলা রেঞ্জের পাথুরিয়া, দুধমুখী, সুপতি এবং শাপলা খাল এলাকাও অপরাধ কর্মকা- চালিয়ে আসছে।
সূত্র আরো জানায়, সমুদ্রকে নিরাপদ করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জলদস্যুদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতোপূর্বে আত্মসমর্পণ করা দস্যুদের মধ্যে কেউ কেউ পুরনো পেশায় ফিরে গেছে। তাদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশ পেয়ে ইতোমধ্যে তিনটি বিভাগীয় জেলার পুলিশের বিভিন্ন সংস্থা ও বিভিন্ন বাহিনী তৎপর হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে জেলেদের মাঝ সাগরে সাবধানে যেতে বিশেষ নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। জেলে নেতাদের বলা হয়েছে, খুব সতকর্তার সঙ্গে গভীর সমুদ্রে যেতে হবে। তারপরও তারা যাচ্ছে। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন থেকে চট্টগ্রামের বাঁশখালী, আনোয়ারা, নোয়াখালীর রামগতি নিঝুমদ্বীপ, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা হয়ে সুন্দরবনের হিরণ পয়েন্ট দুবলার চর, রায়মঙ্গলের সীমান্ত পয়েন্ট পর্যন্ত একাধিক জলদস্যুদের আনাগোনা থাকে বেশি। সেখানে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে একাধিক জলদস্যু গ্রুপের সদস্যরা সশস্ত্র মহড়া দেয়। প্রায়শই তারা আচমকা জেলেদের ওপর হামলা চালিয়ে মাছ ধরার ট্রলার, ট্রলারের ইঞ্জিন, ডিজেলসহ জ¦ালানি তেল, মোবাইল ও রেডিওসেট, মাছ ধরার জাল, আহৃত মাছ, নগদ টাকাসহ বিভিন্ন সামগ্রী নির্বিচারে লুটপাট করছে। জলদস্যু নিয়ন্ত্রণে গভীর সমুদ্র ও উপকূল এলাকায় প্রতিদিনই র্যাব ও কোস্টগার্ড-পুলিশসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে। মাঝেমধ্যে বড় মাপের জলদস্যুও গ্রেপ্তার হচ্ছে। আবার কেউ কেউ বন্দুকযুদ্ধে নিহত হচ্ছে। এত কিছুর পর জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
এদিকে এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানান, সাগরে জলদস্যুদের কিছুটা তৎপরতা বেড়েছে। গভীর সমুদ্রে গিয়ে তারা অপকর্ম করছে। ইতোমধ্যে সাগর নিরাপদ রাখতে কোস্টগার্ড, র্যাব, পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীকে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। সাগরে বিশেষ অভিযান চালিয়ে জলদস্যুদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। সব অপরাধীর বিরুদ্ধেই সরকার সোচ্চার।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ