March 29, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, November 13th, 2022, 9:41 pm

আয়কর রিটার্নের প্রমাণপত্র নিয়ে করদাতারা বিপাকে

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আয়কর রিটার্নের প্রমাণপত্র নিয়ে করদাতারা বিপাকে পড়ছে। মূলত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ওয়েবসাইটে রিটার্ন জমার তথ্য আপলোড না হওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বাজেটে ব্যাংক ঋণ, ক্রেডিট কার্ড, ট্রেড লাইসেন্স ও আমদানি-রপ্তানি সনদ গ্রহণসহ মোট ৩৮ ধরনের সরকারি-বেসরকারি সেবা পেতে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র বাধ্যতামূলক করা হয়। পাশাপাশি সেবাগ্রহীতার প্রমাণপত্র আসল কিনা তা যাচাই করতে সেবাপ্রদানকারীর ওপর বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। সেজন্য এনবিআরের ওয়েবসাইটে রিটার্ন ভেরিফাই অপশন চালু করা হয়েছে। সেবাপ্রদানকারী প্রমাণপত্র সত্যতা যাচাই ছাড়া সেবা দিলে কর কর্মকর্তারা ১০ লাখ টাকা জরিমানা করতে পারবে। এমন পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে সেবাপ্রদানকারী এনবিআরের ওয়েবসাইটে তথ্য যাচাই করছে। কিন্তু এনবিআরের ওয়েবসাইটে আয়কর রিটার্নের তথ্য আপলোড না হওয়ায় অনেক করদাতাই বিপাকে পড়ছে। এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেবা নিতে নিয়ে আয়কর রিটার্নের প্রমাণপত্রের সিল-স্বাক্ষরসহ কাগজের কপি জমা দিলেও ওয়েবসাইটে না পাওয়া গেলে তা আমলে নেয়া হচ্ছে না। ফলে সেবা গ্রহণে করদাতাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সমস্যা সমাধানে কর সার্কেলে দৌড়ঝাঁপ করেও লাভ হচ্ছে না। করদাতাদের সুবিধার্থে প্রতিটি কর অঞ্চলে কর সেবা মাস পালন করায় রিটার্ন গ্রহণে বেশি সময় দিতে হচ্ছে। আর সেখানে যেসব রিটার্ন জমা পড়ছে সেগুলো তৎক্ষণাৎ গ্রহণের পর প্রাপ্তি স্বীকারপত্র দেয়া হচ্ছে। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে রিটার্নের তথ্য ওয়েবসাইটে আপলোড করা হচ্ছে না। আর তাতেই করদাতাদের ভোগান্তিতে পড়ছে।
সূত্র জানায়, আয়কর রিটার্ন জমার সংখ্যা বাড়াতে সাম্প্রতিক সময়ে এনবিআর নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। তার মধ্যে আয়কর পরিপত্রে রিটার্ন ভেরিফাই করতে শুধু ওয়েবসাইটের কথা বলা হয়েছে। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানই সেবাদানে জরিমানার ভয়ে প্রমাণপত্রের সিল-স্বাক্ষরসহ কাগজের কপি আমলে নিচ্ছে না। কারণ ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা সরকারি সংস্থাকে পরিপত্রের মাধ্যমে বলা হয়েছে রিটার্ন ভেরিফাই শুধু ওয়েবসাইটের মাধ্যমে করতে হবে। আর এনবিআর এখন শুধু রিটার্ন জমা নিলেও সময় স্বল্পতা বা জনবলের অভাবে সেগুলো ওয়েবসাইটে আপলোড দিতে পারছে না। তাছাড়া নতুন করদাতারা ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে। ৩০ নভেম্বর নিয়মিত করদাতাদের রিটার্ন জমার শেষ সময় হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে রিটার্ন জমা না দিলে জরিমানা দিতে হয়। পাশাপাশি বাজেটে ট্যাক্স ডে’র সংজ্ঞা পরিবর্তন করে নতুন করদাতাদের বছরের যে কোনো দিন রিটার্ন জমার সুবিধা দেয়া হয়েছে। নতুন করদাতারা ৩০ জুন পর্যন্ত যে কোনোদিন সর্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ন জমা দিতে পারবে। তবে আগে টিআইএন নিয়েছে, করযোগ্য আয় ছিল কিন্তু রিটার্ন জমা দেননি এমন করদাতারাও একসঙ্গে বিগত বছরের রিটার্ন জমা দিতে পারবে। সেক্ষেত্রে চলতি করবর্ষের (২০২২-২৩) রিটার্ন সর্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে জমা দেয়া যাবে। আর আগের করবর্ষের রিটার্ন সাধারণ পদ্ধতিতে জমা দিতে হবে। কিন্তু সাধারণ পদ্ধতিতে রিটার্ন জমা দিলে নিয়ম অনুযায়ী ওই রিটার্ন অ্যাসেসমেন্ট করা হয়। অর্থাৎ রিটার্নে ঘোষিত করদাতা আয়-ব্যয়ের তথ্য, জীবনযাত্রার মান ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের সঠিকতা যাচাই করা হয়। যদি উপ-কর কমিশনার করদাতার কাগজপত্র যাচাই করে দেখতে পায় করদাতার আগেই রিটার্ন জমা দেয়া বাধ্যতামূলক ছিল; কিন্তু রিটার্ন জমা দেননি। সেক্ষেত্রে কর কর্মকর্তা জরিমানা করতে পারবে।
সূত্র আরো জানায়, নতুন করদাতাদের রিটার্ন জমার বিষয়ে এবারের পরিপত্রে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেয়া হয়নি। এ ধরনের করদাতাদের জরিমানা করা হবে নাকি জরিমানা ছাড়াই রিটার্ন নিষ্পত্তি করা হবে তা নিয়েও একেক কর অঞ্চলে একেক ধরনের পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে এনবিআরের একটি ব্যাখ্যা প্রদান খুবই জরুরি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অনেক করদাতাই রিটার্ন জমা দিতে ভয় পাচ্ছে। সামান্য অঙ্কের জরিমানা আরোপ করা হলে করদাতারা নির্ভয়ে রিটার্ন জমা দিতে পারতো। কিন্তু বর্তমানে নতুন করদাতাদের রিটার্ন জমায় কোথাও জরিমানা নিচ্ছে না, আবার কোথাও নেয়া হচ্ছে।
এদিকে এ বিষয়ে এনবিআরের সদস্য (কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) শাহীন আক্তার জানান, নভেম্বর জুড়েই রিটার্ন জমার চাপ থাকে। যে কারণে কোথাও কোথাও ওয়েবসাইটে অন টাইমে তথ্য আপলোড করা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি নজরে এসেছে এবং তা নিয়ে কাজ চলছে।