নিজস্ব প্রতিবেদক:
তৃতীয় ধাপে ১ হাজার ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) ভোটগ্রহণ রোববার সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়, এবং বিরতিহীনভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। একইসঙ্গে দেশের ১০টি পৌরসভায়ও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা হওয়ায় এবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে বলে কমিশন সূত্রে জানা যায়।
এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা বলেন, নির্বাচনে সহিংসতারোধে আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে আগাম গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও নজরদারি বাড়ানোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। অনেকে গ্রেফতার হয়েছে। আরও অনেককে গ্রেফতারের তৎপরতা চলছে। এলাকার মাস্তান, যারা বিশৃঙ্খলা করতে পারে তাদের আগাম গ্রেফতারের জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।
সূত্র জানায়, তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে ২০টি রাজনৈতিক দল চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী দিয়েছে। স্বতন্ত্রসহ চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন ৫ হাজার ২২২ জন। প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন ৪ হাজার ৪০৯ জন। সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন ১১ হাজার ৬০৯ জন। প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন ১১ হাজার ১০৫ জন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ১৩২ জন। এ ছাড়া সাধারণ সদস্য পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন ৩৭ হাজার ৬৯ জন। প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে প্রতিদ্ব¦ন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন ৩৪ হাজার ৬৩২ জন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ৩৩৭ জন।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সহিংসতারোধে আপ্রাণ চেষ্টা চালানোর কথা বলা হলেও জায়গায় জায়গায় নানামুখী সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। সূত্র জানায়, লক্ষ্মীপুর রামগঞ্জ উপজেলার ইউপি নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করে নৌকা মার্কায় সিল মারার অভিযোগে ৩৭টি ব্যালট পেপার বাতিল করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি। রোববার বেলা সাড়ে ১১ নম্বর চন্ডিপুর ইউনিয়নের ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ওই ভোট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার বোরহান উদ্দিন।
জানা যায়, ভোট গ্রহণকালে নৌকা প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা কেন্দ্রে প্রবেশ করে ব্যালট পেপারে সিল দেওয়া শুরু করে। এ সময় আয়েশা বেগম নামে এক নারী ভোটার ওই বুথে ভোট দিতে গেলে আগে থেকে ব্যালটে নৌকা মার্কায় সিল মারা দেখান। এ সময় তিনি বিষয়টি প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে জানিয়ে ভোট না দিয়ে চলে যান। পরে কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এসে আগে থেকে নৌকা মার্কায় সিল মারে রাখা ৩৭টি ব্যালট পেপার বাতিল করেন।
যশোরের শার্শায় নির্বাচনী সহিংসতায় এক স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থক নিহত হয়েছেন বলেও জানা গেছে। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৫ জন। নিহত কুতুবউদ্দিন (৪৫) রুদ্রপুর গ্রামের মহিউদ্দিন সরদারের ছেলে।
শনিবার (২৭ নভেম্বর) রাত ৮ টার দিকে শার্শা উপজেলার কায়বা ইউনিয়নের রুদ্রপুর গ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন, কায়বা ইউনিয়নের রুদ্রপুর গ্রামে মহিউদ্দিন সরদারের ছেলে নিহত কুতুবুদ্দিনের ভাই শাহাবুদ্দিন (৩২), একই এলাকার মৃত ফকির চাঁনের ছেলে আলাউদ্দিন (৫০) ও আরশাদ আলী (৬০), আব্বাস আলীর ছেলে ইহতিয়ার আলী (২৫) ও আফছার আলীর ছেলে ইউনুস আলী (৪০)। আহতদের সবাইকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানান, আহতদের মধ্যে কুতুবউদ্দিনের মাথায় গুরুতর আঘাত লাগায় রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আরো একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে খুলনায় রেফার্ড করা হয়েছে।
নির্বাচনী সহিংসতায় খুলনার তেরখাদা উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নে বাবুল শিকদার (৩৮) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলেও জানা গেছে। রোববার ভোরে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হসপাতালে কিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তেরখাদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহুরুল আলম।
নিহত বাবুল শিকদার মধুপুর ইউনিয়নের কুলাপাটগাতি গ্রামের মো. সিরাজ শিকদারের ছেলে। তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. মহসিনের সমর্থক ছিলেন।
পুলিশ জানায়, নির্বাচনী বিরোধকে কেন্দ্র করে শনিবার (২৭ নভেম্বর) দিনগত রাত ১১ টার দিকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. মহসিনের জন্য বাবুলসহ অন্যান্যরা কুলাপাটগাতি গ্রামে ভোট চাইতে যান। এ সময় বাবুল শিকদারকে বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীর লোকজন হাতুড়িসহ ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে পালিয়ে যায়। পরে এলাকাবাসী মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত বাবুল শিকদারকে মূমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতাল পাঠান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার (২৮ নভেম্বর) ভোর ৬টা ১৫ মিনিটে বাবুল শিকদার মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমানে তার মরদেহ খুমেক হাসপাতালে রয়েছে।
এদিকে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে জাল ভোট দেওয়ার সময় আটক একজনকে ছয় মাসের সাজা দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। সাজাপ্রাপ্ত আলাউদ্দিন (২৭) টিঘর গ্রামের হিরা মিয়ার ছেলে।
রোববার (২৮ নভেম্বর) সকালে ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য প্রার্থী লায়েছ মিয়ার তালা প্রতীকে জাল ভোট দিতে এসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হন তিনি। আলাউদ্দিন ইদ্রিস মিয়া নামের এক ভোটারের ভোট দিতে আসেন।
পুলিশ জানায়, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সাফফাত আরা সাঈদ এর সম্মুখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধৃত হন তিনি। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) নির্বাচন বিধিমালা ২০১০ এর ৭০(১)(গ) ধারার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) নির্বাচন বিধিমালা ২০১০ এর ৭০(২) ধারায় ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদ- দেন।
এছাড়া, ৬ হাজার টাকা অর্থদ- অনাদায়ে আরও ১০ দিনের বিনাশ্রম কারাদ-ে দ-িত করা হয় তাকে।
গোলযোগ-সংঘাত-সহিংসতার মধ্য দিয়ে রোববার যখন সারাদেশে ইউনিয়ন পরিষদের তৃতীয় ধাপের নির্বাচন শুরু হয়, তখন ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে দেখা যায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ।
সূত্র জানায়, সেখানে নারী ভোটারদের সরব উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সে তুলানায় পুরুষ ভোটারের উপস্থিতি ছিল কম। উৎসব মুখর পরিবেশে ভোটাররা পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রদান করতে পারছে বলে জানান ভোটাররা।
জানা যায়, এ সময় একজন পুরুষের পিঠে চড়ে কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন রওশন আক্তার নামের এক নারী। সম্পর্কে তারা স্বামী-স্ত্রী। ত্রিশাল উপজেলায় আমিরাবাড়ী ইউনিয়নের ৯৮ নম্বর কাঁচাচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে ভোট দেন তিনি।
রওশন জানান, তার বয়স যখন ৫ বছর তখন টাইফয়েডে অচল হয়ে যায় তার দুই পা। হামাগুড়ি দিয়ে চলতে হয় তাকে।
ভোট দিয়ে তিনি বলেন, আমি আমার মূল্যবান ভোটটা নষ্ট করতে চাই না। তাই ভোট দিতে এসেছি। ভোট দিতে পেরে খুব ভালো লেগেছে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক