April 20, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, December 15th, 2022, 8:28 pm

ইউরোপের বেঁধে দেওয়া মূল্যসীমার নিচেই ভারতকে তেল বেচছে রাশিয়া

অনলাইন ডেস্ক :

ইউরোপ সমুদ্রপথে রুশ তেল আমদানি নিষিদ্ধ করার পর চলতি মাসে রাশিয়ার উরালস তাদের পরিশোধিত তেল ব্যাপক ছাড়ে বিক্রি করছে। এই সুযোগে প্রভাবশালী ক্রেতা ভারতও ইউরোপের বেঁধে দেওয়া ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলার মূল্যসীমার অনেক নিচেই তেল কিনছে বলে জানিয়েছে তেলের আন্তর্জাতিক বাজার সংক্রান্ত চারটি সূত্র। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৫ ডিসেম্বর থেকে সমুদ্রপথে রুশ তেলের আমদানি নিষিদ্ধ করায় মস্কোকে বাধ্য হয়ে প্রতিদিন ১০ লাখ ব্যারেল তেল বিক্রিতে বিকল্প বাজার, বিশেষ করে এশিয়ার দিকে মুখ ঘোরাতে হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ইউক্রেইনে যুদ্ধ চালাতে রাশিয়ার যে খরচ, তাতে লাগাম টানতে সমুদ্রপথ দিয়ে যাওয়া রাশিয়ার তেল ৫ ডিসেম্বর থেকে ব্যারেলপ্রতি সর্বোচ্চ ৬০ ডলারে কেনার সীমাও বেঁধে দিয়েছে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশের জোট জি-৭। রাশিয়া বলেছে, উৎপাদন কমানো সত্ত্বেও তারা ওই মূল্যসীমা মেনে তেল বিক্রি করবে না। পশ্চিমাদের নেওয়া পদক্ষেপের কারণে রাশিয়ান উৎপাদকদের এখন নিজেদের পাশাপাশি এশিয়া, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের সরবরাহকারীদের সঙ্গেও তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জড়াতে হচ্ছে, ক্রেতা পেতে দামও কমাতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দুই ব্যবসায়ী। ইউক্রেইনে রাশিয়া তাদের ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করার পর থেকে সমুদ্রপথে উরালসের পরিশোধিত তেলের কার্গোর প্রধান রুট হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারত। কিছু কিছু চুক্তির কারণে চলতি মাসে ভারতের বন্দরগুলোতে বীমা, জাহাজে পরিবহনের খরচসহ উরালসের তেলের ব্যারেলপ্রতি দাম ব্রেন্টের পরিশোধিত তেলের গড় মাসিক দামের চেয়েও ১২ থেকে ১৫ ডলার কম পড়েছে বলে জানিয়েছে বেশ কয়েকটি সূত্র। এই পরিমান ছাড় দেওয়ার অর্থ হল, কোনো কোনো সময় রুশ কোম্পানিগুলোকে তাদের তেল স্থানীয় পর্যায়ে দেওয়া করসহ তাদের মোট উৎপাদন খরচের চেয়ে কমেই বিক্রি করতে হচ্ছে। রাশিয়ার শীতকালীন আবহাওয়ায় মানিয়ে চলতে সক্ষম এমন নৌযানের ঘাটতি মালামাল পরিবহনে খরচ বাড়িয়ে দেওয়ায় রুশ তেল উৎপাদকদের ওপর চাপ আরও বেড়েছে। চুক্তিতে থাকলে বাড়তি এই পরিবহন খরচ বিক্রেতাকেই বহন করতে হয়।
সমুদ্রপথে পরিবহনের খরচ বেড়ে এখন ব্যারেলপ্রতি ১১ থেকে ১৯ ডলারে দাঁড়িয়েছে, অথচ ফেব্রুয়ারির আগেও এই খরচ ছিল ৩ ডলারের কম। রয়টার্সের হিসাব বলছে, কিছুকিছু চুক্তির আওতায় পরিবহন খরচ বাদে রাশিয়ার বন্দরগুলো থেকে ভারতে তেল বিক্রিতে ছাড় বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৩২ থেকে ৩৫ ডলারেও দাঁড়াচ্ছে। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে ব্রেন্ট পরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলারের সামান্য নিচে ছিল; অন্যদিকে উত্তোলন, কর ও ক্রেতার বন্দরে তেল পৌঁছে দেওয়ার পরিবহন খরচসহ রুশ উৎপাদকদের ব্যারেলপ্রতি আনুমানিক ১৫ থেকে ৪৫ ডলার করে খরচ পড়ে বলে গত বছর বলেছিলেন রাশিয়ার উপজ¦ালানি মন্ত্রী পাভেল সোরোকিন। রুশ তেল উৎপাদকরা এখন ভারতে উরালসের তেল পৌঁছে দিতে নিজেদের ও পরিবহন অংশীদারদের নৌযান ব্যবহারের চেষ্টা করছেন, যাতে পরিবহন খরচ আরও কমিয়ে আনা যায়, বলছেন ব্যবসায়ীরা। তবে অনেক উৎপাদক এখনও বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের উপরই নির্ভর করছেন, যার মানে হচ্ছে, ওই প্রতিষ্ঠানগুলোকেও তাদের লাভের ভাগ দিতে হচ্ছে। ভারত এশিয়ায় জ¦ালানি তেলের দ্বিতীয় বৃহৎ ভোক্তা হলেও পরিবহন রুট তুলনামূলক ছোট হওয়ায় চীনের তুলনায় তারা উরালসের তেল বেশি কেনার সুযোগ পাচ্ছে। দেশটির শোধনাগারগুলোও রাশিয়ার তেল পরিশোধনে সিদ্ধহস্ত। বিভিন্ন রুশ সংস্থার দেওয়া বীমা ও তেল পরিবহনকারী জাহাজগুলোর ব্যবসাকে বৈধ হিসেবে স্বীকৃতিও দিয়েছে নয়া দিল্লি; ইউরোপ এখন আর এ স্বীকৃতি দিচ্ছে না। ভারতে উরালসের সরবরাহ নভেম্বরে বেড়ে ৩৭ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে বলে জানাচ্ছে রেফিনিটিভ এইকনের তথ্য। একই মাসে রাশিয়া ইরাককে টপকে ভারতে সবচেয়ে বেশি তেল সরবরাহকারী দেশেও পরিণত হয়েছে বলে একাধিক ব্যবসায়িক সূত্র নিশ্চিত করেছে। “বাজারজুড়ে উরালসের প্রচুর তেল রয়েছে। প্রচুর তেল। অনেক ব্যবসায়ীই ডিসেম্বর, জানুয়ারি উভয় মাসেই উরালসের তেল দিতে চাইছে,” বলেছে ভারতীয় শোধনাগার সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র। গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত না হওয়ায় রয়টার্স এ সূত্রগুলোর কোনোটিরই পরিচয় প্রকাশ করতে পারেনি।