নিজস্ব প্রতিবেদক:
ইউরোপের শ্রমবাজারে জনশক্তি রপ্তানির চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। ওই লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো দক্ষ, আধাদক্ষ ও প্রশিক্ষিত শ্রমিক পাঠিয়ে অধিক হারে রেমিটেন্স আহরণের চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে সেজন্য দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় চুক্তি প্রয়োজন। ইতোমধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে মলদোভা, সার্বিয়া, যুগোশ্লাভিয়া, আলবেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া ও রোমানিয়ায় অল্পসংখ্যক শ্রমিক পাঠানো শুরু হয়েছে। আর ওই দেশগুলোও বাংলাদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক কর্মী নিতে সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। ওসব দেশ থেকে জিটুজি চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ ও অদক্ষ কর্মী নিতে আগ্রহী। সরকারও বৈধ পথে ইউরোপের দেশ গ্রিস, মাল্টা, আলবেনিয়া, সার্বিয়া, যুগোশ্লাভিয়া, ক্রোয়েশিয়া, রোমানিয়া ও মাল্টায় কর্মী পাঠাতে চায়। রোমানিয়ায় ইতোমধ্যে ৫ হাজারের বেশি মুলতবি ও নতুন ভিসা ইস্যু করা হয়েছে। তার আগে দীর্ঘদিন সেখানে কর্মী পাঠানো বন্ধ ছিল। তাছাড়া ইউরোপের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া চলছে। আশা করা যায় দেশগুলোর সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি সম্পন্ন হলে বিপুলসংখ্যক কর্মীর কর্মসংস্থান হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে মধ্য এশিয়া ও পূর্ব ইউরোপ, বলকান অঞ্চল ও পূর্ব এশিয়ার নতুন কিছু দেশে শ্রমিক রপ্তানির সম্ভাবনা খুঁজে দেখা হচ্ছে। তাছাড়া গ্রিস, আলবেনিয়া, রোমানিয়া, সার্বিয়া, উজবেকিস্তান ও কাজাখস্তান ছাড়াও জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং হংকংয়ের কথাও ভাবা হচ্ছে। তবে ওসব দেশে কর্মী পাঠানোর পর কর্মীরা যাতে ইউরোপের অন্য দেশগুলোতে অবৈধভাবে যাওয়ার চেষ্টা না করে সেজন্য খুব হিসাব করেই সামনে অগ্রসর হচ্ছে সরকার। বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো অবৈধ অভিবাসনের ব্যাপারে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। আর অতীতে ইতালিসহ ইউরোপের অন্য দেশে পালিয়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া বন্ধ ছিল। রোমানিয়ার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছিল। অতীতে সেখান থেকে শ্রমিকরা পালিয়ে ইউরোপের অন্য দেশে পাড়ি জমিয়েছে। অথচ সফলতার সঙ্গে রোমানিয়াতেই ৩ বছর কাটিয়ে দিলে রোমানিয়া থেকে বৈধ পথে তার ইতালিসহ অন্য দেশে যাওয়ার সুযোগ মিলতো। মূলত শ্রমিকদের ওই দেশের আইন সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণেই এমনটি ঘটেছে। সেজন্যই নতুন করে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে সরকার সতর্কতার সঙ্গে এগোচ্ছে।
সূত্র জানায়, মলদোভায় বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর তারা বাংলাদেশী শ্রমিক নিতে রাজি হয়েছে। ওই দেশটি এক দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশী শ্রমিক নেয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। এখন নতুন করে ভিসা দেয়া শুরু করায় দেশটিতে শ্রমিকদের যাওয়ার পথ সুগম হয়েছে। তাছাড়া রোমানিয়াতেও ৪০ হাজার শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। রোমানিয়া সরকারের সঙ্গে জনশক্তি রপ্তানি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা বিভিন্ন খাতে ৪০ হাজার শ্রমিক নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। ইতোমধ্যে মে, জুন ও জুলাই মাসে সেখানে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক কাজে গেছে। তার মধ্যে ৩ হাজার ৪শ’ মুলতবি ভিসা ছিল। আর বাকিটা নতুন ভিসা ইস্যু করা হয়েছে। বাংলাদেশে রোমানিয়ার স্থায়ী দূতাবাস না থাকায় ভিসার জন্য শ্রমিকদের ভারতে যেতে হতো। তাই রোমানিয়া সরকার ভিসা জটিলতা কাটাতে বাংলাদেশে তিন মাসের জন্য কনস্যুলার অফিস খুলেছিল।
সূত্র আরো জানায়, দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশ বুলগেরিয়া ভাল বেতনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি নিয়োগ করছে। এই প্রথম বাংলাদেশের আরএমজি কর্মীরা ইউরোপের কোন দেশে পেশাগত যাত্রা শুরু করছে। বুলগেরিয়ার কারখানায় কাজের প্রস্তাব বাংলাদেশী শ্রমিকদের ভাল জীবনযাপনে সহায়ক হবে। একইসঙ্গে দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য আরো বেশিসংখ্যক লোককে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া সার্বিয়া বাংলাদেশ থেকে সরাসরি ব্যবস্থাপনায় দক্ষ ও আধাদক্ষ কর্মী নেয়ার বিষয়ে আগ্রগের কথা জানিয়েছে। সার্বিয়ার চলমান উচ্চাভিলাষী উন্নয়ন কর্মসূচীর জন্য যে বিপুল মানবসম্পদ প্রয়োজন, তা পূরণে বাংলাদেশের দক্ষ ও আধাদক্ষ আইটি পেশাজীবী, ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বারদের (কলমিস্ত্রি) অনেক চাহিদা রয়েছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে সরকারের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মোঃ শহীদুল আলম এনডিসি জানান, নতুন যেসব দেশে সরকার শ্রমবাজারের সম্ভাবনা দেখছে তার মধ্যে ইউরোপ ছাড়াও মধ্য এশিয়া ও পূর্ব এশিয়া রয়েছে। মরুভূমির চেয়ে ওসব দেশে আবহাওয়া সহনীয়। তাছাড়া ওসব দেশে কাজগুলোর ধরন ভাল, শুধু ক্লিনারের কাজ না। বেতনও বেশি, আবার শ্রমিকদের অধিকারের পরিস্থিতিও ভাল।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি