এপি, ইকুয়েডর :
ইকুয়েডরের আসন্ন নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ফার্নান্দো ভিলাভিসেনসিওকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। স্থানীয় সময় বুধবার (৯ আগস্ট) রাজধানী কিতো’য় আয়োজিত একটি রাজনৈতিক সমাবেশে বক্তৃতা শেষে গাড়িতে উঠার সময় ফার্নান্দোকে গুলি করা হয়।
ধারণা করা হচ্ছে, দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশে সক্রিয় আন্তর্জাতিক অপরাধ সংগঠন মেক্সিকোর সিনালোয়া কার্টেলের দলের সদস্যরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
ইকুয়েডরের অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় ফার্নান্দোর মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে।
অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় জানায়, হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশের গুলিতে একজন সন্দেহভাজন মারা গেছেন এবং পুলিশ কুইটোতে অভিযান চালিয়ে ছয় সন্দেহভাজনকে আটক করেছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বুধবারের গোলাগুলির ওই ঘটনায় কমপক্ষে ৯ জন আহত হয়েছে। যার মধ্যে অফিসার ও একজন কংগ্রেস প্রার্থী রয়েছে।
মৃত্যুর আগে তার সর্বশেষ বক্তৃতায় ফার্নান্দো জনতাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি দেশের দুর্নীতির মূলোৎপাটন করবেন এবং দেশের ‘চোরদের’ আটক করবেন।
ফার্নান্দো এসময় জানান, তিনি মেক্সিকোর সিনালোয়া কার্টেলের সহযোগীদের কাছ থেকে একাধিকবার মৃত্যুর হুমকি পেয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি জানি আমার আদর্শ এই ধরনের গোষ্ঠীর জন্য হুমকি। তবে আমি ওইসব দুর্বৃত্তদের ভয় পাই না।’
আগামী ২০ আগস্ট ইকুয়েডরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা। মোট আটজন প্রার্থী প্রেসিডেন্ট পদে লড়ছেন।
জনমত সমীক্ষায় পাঁচ নম্বরে ছিলেন ৫৯ বছর বয়সী ফার্নান্দো। তার দলের নাম বিল্ড ইকুয়েডর মুভমেন্ট।
ফার্নান্দো ছিলেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে দেশের অন্যতম কণ্ঠস্বর। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরেয়ার সরকারের সময় (২০০৭-২০১৭) তিনি বেশ সক্রিয় ছিলেন।
তিনি একজন স্বাধীন সাংবাদিকও ছিলেন। এ ছাড়া সাবেক সরকারের দুর্নীতির তদন্ত করেছিলেন এবং পরে দুর্নীতিবিরোধী প্রচারক হিসেবে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।
সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রার্থী অটো সোনেনহোলজনার বুধবারের হত্যাকাণ্ডের পর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা শোকাহত, কান্নার সাগরে ডুবে যাচ্ছি এবং আমরা এভাবে বেঁচে থাকতে চাই না। আমরা দাবি করছি আপনারা (সরকার) কিছু করুন।’
ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট গুইলারমো লাসো বলেন, ‘ফার্নান্দোর স্মৃতি এবং তার লড়াইকে সম্মান জানাতে সব দোষীদের ধরে শাস্তি দেওয়া হবে।’
লাসো বলেন, ‘হত্যাকারীরা’ রাস্তায় একটি গ্রেনেড ছুঁড়েছিল, কিন্তু এটি বিস্ফোরিত হয়নি। পরে পুলিশ একটি নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ ঘটিয়ে গ্রেনেডটি ধ্বংস করে।
গুইলারমো লাসো বলেন, ‘এই ধরনের সংগঠিত অপরাধীদের সাহস বেড়ে গেছে। এবার সর্বশক্তি নিয়ে তাদের মোকাবিলা করবে আইন। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অফিসারদের নিয়ে আমি জরুরি বৈঠকে বসব।’
চলতি মাসেই বন্দর নগরী মান্তার মেয়রকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এরপর সহিংসতা রোধে প্রেসিডেন্ট লাসো ২৬ জুলাই দুটি প্রদেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন।
ফার্নান্দোর নির্বাচনী প্রচারণার দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার প্যাট্রিসিও জুকুইল্যান্ড বলেন, ফার্নান্দো কমপক্ষে তিনবার হত্যার হুমকি পেয়েছিলেন। যা তিনি কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছিলেন। এই অভিযোগে একজনকে আটক করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘ইকুয়েডরের মানুষ কাঁদছে। রাজনীতির কারণে এভাবে যেন আর কারো মৃত্যু না হয়।’
তিনি ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও মাদক পাচারকে দায়ী করে সহিংসতার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
সাবেক সামরিক গোয়েন্দা কর্নেল এডিসন রোমো বলেছেন, দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান ফার্নান্দোকে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধী সংস্থার জন্য হুমকি’ করে তুলেছিল।
এদিকে, এই হত্যাকাণ্ডের ফলে অন্য প্রার্থীরাও শঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
সিটিজেন রেভুলোশনারি পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী রানার লুইসা গনজালেজ বলেন, ‘যখন তারা (দুর্বৃত্তরা) আমাদের একজনের নাগাল পায়, তখন তারা আমাদের সবারই নাগাল পেয়ে যায়।’
ইকুয়েডরে মাদক ভয়াবহ বৃদ্ধি পেয়েছে। মাদক পাচারকারীরা দেশের উপকূলীয় বন্দরগুলো ব্যবহার করতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে জড়িতরা প্রভাব বিস্তার করছে। ফলে সেখানে সহিংস অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২