March 28, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, April 13th, 2023, 8:19 pm

ইলন মাস্কের সাক্ষাৎকার থেকে যে ছয়টি বিষয় জানা গেলো

অনলাইন ডেস্ক :

বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকার নিজের টুইটার পরিচালনা পদ্ধতিকেই জোর সমর্থন করেছেন ইলন মাস্ক। সান ফ্রান্সিসকোতে টুইটার সদরদপ্তরে বিবিসির প্রযুক্তি বিষয়ক সংবাদদাতা জেমস ক্লেয়টনের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা কথা বলেছেন বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি।
১. টুইটারে ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগ প্রত্যাখ্যান : তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর টুইটারে বেশি বিদ্বেষমূলক কনটেন্ট গেছে, এমন মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করেন মাস্ক। যদিও চলতি বছরের শুরুতে মাস্কের নেতৃত্বে কিছু পরিবর্তন আনার পর টুইটারের ভেতর থেকেই কিছু ব্যক্তি বিবিসিকে বলেছিলেন যে টুইটার তার ব্যবহারকারীদের ট্রল, রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত ভুল তথ্য এবং শিশু যৌন হয়রানি থেকে সুরক্ষা দিতে অক্ষম। গত মার্চে টুইটার জানিয়েছে তারা ‘টুইটারকে নিরাপদ করতে’ প্রায় চার লাখ কনটেন্ট অপসারণ করেছে। মিস্টার মাস্কের এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে অবশ্য যে দুটি জিনিস দরকার তা আমাদের হাতে নেই। এগুলো হলো তার দায়িত্ব গ্রহণের আগের ও পরের সময়কার টুইটার তথ্যভা-ারে প্রবেশাধিকার এবং আরেকটি হলো তিনি কীভাবে অসত্য তথ্য ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের মধ্যে পার্থক্য করে সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নেওয়া। আমেরিকার আইনে ‘হেইট স্পিচ’ বা ‘বিদ্বেষমূলক’ বক্তব্যের কোনো পরিষ্কার সংজ্ঞা নেই। দেশটির সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর কারণে এটি অন্যদেশের তুলনায় সাধারণত কিছুটা ধারণামূলক।
২. বাইডেনকে ভোট দিয়েছেন : যুক্তরাষ্ট্রের গত নির্বাচনে দেশের প্রায় অর্ধেকের মতো ভোটারের ভোট পেয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মাস্ক বলেছেন, “আমি তাদের দলে নই। আমি বাইডেনকে ভোট দিয়েছি”। সাক্ষাৎকারের আরেক অংশে তিনি মিস্টার ট্রাম্পের ওপর টুইটার যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলো সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে আত্মপক্ষই সমর্থন করেছেন।সহিংসতা ছড়ানোর অভিযোগ করে টুইটার ২০২১ সালে মিস্টার ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট সরিয়ে নিয়েছিলো।
৩. মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে জয় : মাস্ক দাবি করেছেন, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর অটোমেটেড অ্যাকাউন্ট অপসারণে তার চেষ্টার কারণে টুইটারে ভুল তথ্য দেওয়া কমেছে।“আমার অভিজ্ঞতা হলো এখন আগের চেয়ে কম ভুল তথ্য সেখানে,” বলছিলেন তিনি। তবে বাইরের অনেক বিশেষজ্ঞ এর সঙ্গে একমত নন। অনলাইন মিসইনফরমেশন নিউজগার্ডের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, জনপ্রিয় ভুল তথ্য ছড়ানোর অ্যাকাউন্টগুলো তার দায়িত্ব গ্রহণের পর বরং স্পাইক করেছে। আরও কিছু সমীক্ষা থেকেও একই ধারণা পাওয়া গেছে। টুইটারের দায়িত্ব তিনি নেওয়ার পর সবচেয়ে জনপ্রিয় কিন্তু অবিশ্বস্ত অ্যাকাউন্টগুলোর লাইক ও রিটুইট এনগেজমেন্ট বেড়েছে ৬০ শতাংশ। বিবিসিও আগে নিষিদ্ধ করা প্রায় এক হাজার অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনা করেছে। এসব অ্যাকাউন্ট মাস্ক দায়িত্ব নেওয়ার পর আবার সচল হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত এক তৃতীয়াংশ হয়রানিমূলক ও অসত্য তথ্য ছড়িয়েছে। এর মধ্যে আছে ভ্যাকসিন বিরোধী অসত্য তথ্য, সমকামী বিরোধিতা এবং ২০২০ সালের মার্কিন নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যানের মতো বিষয়।
৪. তিনি টিকটক নিষিদ্ধের বিপক্ষে : মাস্ক বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হওয়া অ্যাপটি তিনি ব্যবহার করেন না। কিন্তু তিনি এটি বন্ধ করে দেওয়ার বিপক্ষে। চীনা মালিকানাধীন থাকায় নিরাপত্তা ইস্যুকে বিবেচনায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কথা বিবেচনা করছে। কিছু দেশ এর মধ্যেই সরকারি কর্মকর্তাদের মোবাইলে এটি ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। “আমি সাধারণত কোনো জিনিস নিষিদ্ধের বিপক্ষে,” মাস্ক বলছিলেন। যদিও তিনি বলেছেন নিষেধাজ্ঞা টুইটারকে সুফল দেবে কারণ আরও বেশি লোক এই প্লাটফর্মে বেশি সময় ব্যয় করবে।
৫. টুইটারের জন্য ৪৪ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান : মাস্ক প্রাথমিকভাবে দাবি করেছেন, তিনি যে দামে কিনেছেন টুইটার এখন কেউ সেই দামে কেনার প্রস্তাব দিলে তিনি সেটি প্রত্যাখ্যান করবেন।
তিনি যদি বিক্রি করেন, তাহলে এমন ক্রেতা পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ হবে যিনি কত দিয়ে কিনবেন তার চেয়ে বড় বিষয় হবে তিনি কতটা ‘সত্য’কে লালন করেন সেটি। কিন্তু মনে করুন তিনি চুক্তি থেকে বেরিয়ে যেতে কতটা চেষ্টা করেছিলেন। মাস্ক বলেন তিনি যখন দায়িত্ব নেন তখন টুইটারের অবস্থা ছিলো আর কয়েক মাস চলার মতো এবং এটি চলছিলো অলাভজনক সংস্থার মতো। মাস্কের দায়িত্ব নেওয়ার আগে পুরো বছরের যে চিত্র প্রকাশ করা হয়েছিলো তাতে ২০২১ সালে মোট বিক্রি ছিলো পাঁচ বিলিয়ন ডলারের আর খরচ ছিলো সাড়ে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের। সত্যি বলতে ২০১২ সালের পর থেকে মাত্র দু বছর এটি লাভ করেছিলো। তিনি বলেন, টুইটার এখন লাভ খরচের মাঝামাঝি অবস্থায়। প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কর্মী ছাঁটাইও এ ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে। তবে তিনি বিক্রি বাড়াতে আর সক্রিয় হয়ে নানা উপায় খোঁজার পক্ষে। যেমন ‘ব্লু টিক’ বা নীল ব্যাজ ভেরিফিকেশন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার কথা ভাবা হচ্ছে। সুতরাং এটি সত্যি যে টুইটার হয়তো খরচ মিটিয়ে লাভের কাছাকাছি ব্যাপক খরচ কমানোর কারণে। কিন্তু প্রশ্ন হলো এগুলো কতটা টেকসই হবে এবং কোম্পানিকে ৪৪ বিলিয়ন ডলারের মূল্য করে তুলবে।
৬. বিবিসির পরিচিতি পরিবর্তন : মাস্ক নিশ্চিত করেছেন যে টুইটারে তিনি বিবিসির পরিচিতি যেভাবে দিয়েছেন সেটি পরিবর্তন করা হবে। অর্থাৎ ‘সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত’ থেকে এটি হবে ‘জনগণের অর্থে পরিচালিত’। প্রায় এক সপ্তাহের বিতর্ক এবং ওই কয়েক ঘণ্টা পর এটি কার্যকর করেছে টুইটার।
বিবিসি তার পরিচিত যেভাবে দেওয়া হয়েছিলো তাতে আপত্তি করে সংস্থাটির স্বাধীনতার ওপর জোর দিয়েছিলো। এর অর্থায়ন হয় মূলত ব্রিটিশ জনগণের দেয়া টিভি লাইসেন্স ফি থেকে। বুধবারের সাক্ষাৎকারের মাস্ক বলেছেন, “বিবিসি নিজেকে যেভাবে বর্ণনা করে আমরা সেই শব্দগুলো ব্যবহার করাই মনে হয় যথার্থ হবে”। ২০২২ সালে বিবিসির মোট পাঁচ দশমিক তিন বিলিয়ন পাউন্ডের আয়ের ৭১ শতাংশ আসে লাইসেন্স ফি থেকে। বাকী বিজ্ঞাপন, গ্রান্টস, রয়্যালটি ও ভাড়া থেকে আসে। বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসকে সমর্থন দিতে ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে বছরে ৯০ মিলিয়ন পাউন্ড পেয়ে থাকে বিবিসি। তবে এর বড় অংশই যুক্তরাজ্যের বাইরের শ্রোতা দর্শকদের জন্য ব্যয় হয়।