অনলাইন ডেস্ক :
ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের শহর জেনিনে ইসরায়েলি বাহিনীর রাতভর অভিযানে অন্তত সাত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সোমবার (৩ জুলাই) দুপুররাত থেকে চলা এ অভিযানের সময় শুরু হওয়া বন্দুকলড়াই সকাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। অভিযানেরে সময় ড্রোনও ব্যবহার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এ নিয়ে দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে জেনিনে চালানো অভিযান তারা দ্বিতীয়বারের মতো ড্রোন ব্যবহার করলো। জেনিনের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরভিত্তিক গোষ্ঠী জেনিন ব্রিগেডস জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলি বাহিনীকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছে। ফিলিস্তিনের বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর যোদ্ধাদের নিয়ে এই ব্রিগেডটি গঠিত হয়েছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী অভিযান শুরু করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শহরজুড়ে গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যেতে থাকে, মাথার ওপর উড়তে থাকা ড্রোনের শব্দও শোনা যায়। অন্তত ছয়টি ড্রোনকে শহরটি ও সংলগ্ন শরণার্থী শিবিরের ওপর দিয়ে চক্কর দিতে দেখা যায়।
জেনিনের এই শরণার্থী শিবিরটিতে আধা বর্গ কিলোমিটারেরও কম জায়গার মধ্যে প্রায় ১৪ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়ে আছে। ঘটনা চলাকালে ফিলিস্তিনি অ্যাম্বুলেন্স চালক খালেদ আলাহমাদ বলেন, “শরণার্থী শিবিরটিতে যা চলছে তা সত্যিকারের যুদ্ধ। শিবির লক্ষ্য করে আকাশ থেকে হামলা চালানো হচ্ছে। প্রতিবার আমরা পাঁচ থেকে সাতটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যাই আর গাড়ি ভর্তি করে আহতদের নিয়ে ফিরে আসি।”জেনিনে অন্তত সাতজন নিহত ও ২৭ জন আহত হয়েছেন বলে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে। এর বাইরে রামাল্লা শহরের একটি চেকপয়েন্টে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আরেক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে তারা। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তাদের বাহিনীগুলো জেনিন ব্রিগেডের যোদ্ধাদের কমান্ড সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত একটি বিগ্রেডে আঘাত হেনেছে। নিজেদের অভিযানকে একটি ‘ব্যাপক সন্ত্রাসবাদ দমন প্রচেষ্টা’ হিসেবে অভিহিত করেছে তারা। গত ২১ জুন জেনিনের কাছে আরেকটি সামরিক অভিযান চালিয়েছিল ইসরায়েলি বাহিনী। ২০০৬ সাল থেকে তার আগ পর্যন্ত পশ্চিম তীরে চালানো অভিযানে তারা ড্রোন ব্যবহার করেনি।
কিন্তু সহিংসতার মাত্রা ও মোতায়েন থাকা বাহিনীগুলোর ওপর চাপ বৃদ্ধি পেতে থাকায় এ ধরনের কৌশল অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্র। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমরা সত্যিই খুব চাপে আছি। এর কারণ মাত্রা বৃদ্ধি। আর আমাদের উপলব্ধি হচ্ছে, এটি সংঘর্ষ কমাবে।”‘সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের’ ভিত্তিতে ড্রোন হামলাগুলো চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। এ অভিযানে ইসরায়েলি বাহিনীর এক হাজার থেকে দুই হাজার সেনা অংশ নিয়েছে বলে ধারণা পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার সকালের আলো ফোটার পর জেনিনের আকাশে রাস্তাগুলোতে জ¦ালানো টায়ারের ঘন কালো ধোঁয়া উঠতে দেখা গেছে। এ সময় সেখানকার মসজিদের মাইকগুলো থেকে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সমর্থন দেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছিল। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের এক মুখপাত্র ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর এই অভিযানকে ‘আমাদের প্রতিরক্ষাহীন জনগণের বিরুদ্ধে নতুন একটি যুদ্ধাপরাধ’ বলে অভিহিত করেছেন।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২