ঈদুল-ফিতর মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব, আর উৎসব মানে আনন্দ: এই দিনটিকে নতুন পোশাক কিনে বিশেষ খাবারের সঙ্গে উপভোগ করা হয়। কিন্তু গাইবান্ধার ১৬৫টি চর এলাকার তিন লাখের বেশি পরিবারের জন্য তা নয়। খুবই দারিদ্রতার কারণে নতুন জামা-কাপড় কেনা ও উৎসবের জন্য বিশেষ খাবার তৈরি করতে পারে না তারা।
এ বছরও কোনো আনন্দ হবে না কারণ চরের মানুষ তিন বেলা খাবারেরই ব্যবস্থা করতে পারে না।
বাংলাদেশে মঙ্গলবার ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। কিন্তু ঈদ মানেই তাদের জন্য বিশেষ কোনো দিন নয় কারণ চর এলাকার অধিকাংশ মানুষ বেকার ও ভূমিহীন। ঈদ উপলক্ষে ভালো খাবার ও নতুন পোশাকের ব্যবস্থা করা তাদের জন্য কঠিন। তাদের নিজস্ব কোন জমি নেই তাই তারা বিভিন্ন জেলায় দিনমজুর হিসেবে কাজ করে।
চরের মানুষ শিক্ষা, কাজ, খাদ্য, স্বাস্থ্য ও বাসস্থান সহ তাদের মৌলিক চাহিদা মেটাতে পারেনা। এসব এলাকার বাসিন্দারা চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে। এছাড়া বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাথে লড়াই করে তাদের বেঁচে থাকার হয়। এমনকি সরকারি কর্মসূচির আওতায় ত্রাণ পাওয়া থেকেও তারা বঞ্চিত।
জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া, বেলকা, শ্রীপুর ও হরিপুর তিস্তা নদীর তীরে চারটি চর রয়েছে।
সম্প্রতি গাইবান্ধা জেলা শহরের উত্তর-পূর্ব কাপাসিয়ার চর পরিদর্শনে গিয়ে কয়েকজন পরিবারের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের।
লালচামার গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, তারা কোনো ত্রাণসামগ্রী পাননি। ফলে ধান কাটার মৌসুমে দিনমজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহের জন্য পুরুষদের বিভিন্ন জেলায় যেতে হয়।
ওই গ্রামের নারী ময়না বেগম জানান, তার স্বামী ময়নুল মিয়া কাজে বের হয়ে এখনও ফেরেননি। তবে স্বামী ফোন করে বলেছেন তিনি আসার সময় তার জন্য শাড়ি আনবেন । আর গাইবান্ধা থেকে সন্তানদের জন্য যা লাগে কিনে দিবেন।
সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া, ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া, উড়িয়া, ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া, কামারজানি, মোল্লারচর, গাইবান্ধা সদর উপজেলার আরেন্দাবাড়িসহ জেলার ১৬টি ইউনিয়নের দরিদ্র দিনমজুর পরিবারের অবস্থা ভালো নয়।
চর এলাকার লোকজন দল বেধে কাজে জন্য অন্য জেলায় গেছেন। সেকান থেকে চাঁন রাতে ফিরবেন এবং পরিবারের সাথে ঈদ পালন করবে।
লালচামার চরের আইনুল হক বলেন ,এবার অনেকেই ইটের ভাটা ,ধান কাটার কাজে স্বামীরা বাহিরে গেলেও ফিরতে পারেনি । কেউ টাকাও পাঠাতে পারেনি পরিবারের জন্য। কি দিয়ে ঈদের জন্য নতুন কাপড় কিনবেন ও সন্তানদের গায়ে তুলে দেবেন। ধার দেনা করে সেমাই চিনি কিনতে পারলেও মাংশ ভাত ও নতুন কাপড় তাদের কপালে নেই। অন্যান্য দিনের মতো তাদের ঈদের দিনটাও কাটবে বলে জানান।
সদর উপজেলার মোল্লারচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান বলেন, সরকারের কাছ থেকে যে ত্রাণ পাওয়া যায় তা দিয়ে সবার চাহিদা মেটানো কঠিন।
ঘাগোয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুজ্জামান রিংকু বলেন, চর এলাকার মানুষের কোনো কাজ নেই এবং বেশিরভাগ সময় পরিবারের পুরুষরা অন্য জেলায় কাজের জন্য বাড়ির বাইরে থাকে।
তিনি বলেন, এখানে ঈদ তাদের জন্য বিশেষ কিছু বয়ে আনে না।
—-ইউএনবি
আরও পড়ুন
ময়মনসিংহে বাসচাপায় নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সিএনজির ৩ যাত্রী নিহত
লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে নিহত যুবকের মরদেহ হস্তান্তর
চাঁদপুরে পিকআপের ধাক্কায় সিএনজির ২ জন নিহত, আহত ৩