নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামীকাল বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে টানা ৫ বা ৬ দিনের ছুটি। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী শনি বা রোববার দেশে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। বুধবার শবে কদরের ছুটির পর বৃহস্পতিবার খোলা থাকলেও সরকার টানা ছুটির সুবিধার জন্য ওইদিন (বৃহস্পতিবার) সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। ঈদের ছুটিতে দূর-দূরান্তে প্রিয়জনদের সঙ্গে নির্বিঘ্নে যাতে ঈদ করতে যেতে পারেন সেজন্য শবে কদর ও ঈদের ছুটির মাঝখানে একদিন কর্মদিবসেও ছুটির ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
২০ এপ্রিল সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে গত ১০ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এদিকে ছুটি শুরু হওয়ার প্রাক্কালে ফাঁকা হতে শুরু করেছে রাজধানী। পরিপূর্ণভাবে ছুটি শুরু না হলেও ঢাকায় ছুটিভাব দেখা যাচ্ছে। মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর অফিস এলাকাগুলোয় যানবাহনের চাপ লক্ষ্য করা গেলেও দুপুর ১২ টার পর থেকে কমে যেতে শুরু করে। রাজধানীর ব্যস্ত রাস্তাগুলো এখন প্রায় ফাঁকা। বিশেষ করে বিজয় স্মরণী থেকে তেজগাঁও, মহাখালী, বনানী, ফার্মগেট এলাকা ঘুরে এ পরিস্থিতি দেখা গেছে। মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) কার্যত সরকারি অফিসে শেষ কার্যদিবস।
যারা ঈদের ছুটিতে যাচ্ছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই অগ্রিম ছুটি নিয়েছেন। এদিক, এবার ঈদের ছুটি পাঁচ দিন, রোজ যদি ৩০টি হয়, ছুটি বাড়বে আরও একদিন। সন্ধ্যা থেকে রাজধানীর মানুষ বাড়ি ফিরতে শুরু করলে যানজট হতে পারে বাস টার্মিনাল কেন্দ্রিক এলাকাগুলোয়। সকালে যেসব বাস রাজধানী থেকে বেরিয়ে যায়, সে সময় কিছুটা যানজট দেখা দেয়। আবার যে বাসগুলো বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে ঢাকা ঢুকছে সেগুলোকে জায়গা দিতে গিয়েও কিছু সময় যানজট ছিল। বিশেষ করে মহাখালী ও গাবতলি এলাকায় এ পরিস্থিতি বেশি দেখা গেছে। গুলশান বিভাগের মহাখালী জোটের ট্রাফিক কর্মকর্তা (টিআই) মো. মাসুদ রহমান বলেন, সকাল থেকে রাজধানীর মানুষ ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন।
রাজধানীকে যানজট এখন কম। ঢাকাও ফাকা হতে শুরু করেছে। বিকেলের দিক থেকে রাত পর্যন্ত গাড়ির চাপ কিছুটা বাড়তে পারে; কারণ তখন ঢাকার বাইরে থেকে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বাস ঢুকবে। তিনি আরও বলেন, আগামী দুয়েকদিন আরও চাপ বাড়বে; কারণ গার্মেন্টস এখনো ছুটি হয়নি। চাপ যতটুকু হবে সেটি টার্মিনাল কেন্দ্রিক। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) উপ-পরিচালক প্রশাসন আবদুর রাজ্জাক বলেন, ঈদকে সামনে রেখে মানুষ ঢাকা ছাড়ছে। তারপরও আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত পাঁচটি টার্মিনাল স্পটে কাজ করছে। গাবতলি, সায়দাবাদ, মানিক মিয়া এভিনিউ, মহাখালী ও উত্তরায় তারা দায়িত্ব পালন করছে। আমাদের লক্ষ্য রাজধানী থেকে যারা বেরিয়ে যাচ্ছেন বা আসছেন তাদের সুন্দর যাতায়াত নিশ্চিত করা। আমরা ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি।
ঘরমুখি মানুষের রাজধানী থেকে বের হতে যেন কোনো ভোগান্তি পোহাতে না হয়, আমরা সে চেষ্টা করে যাচ্ছি। এদিকে ছুটি শুরুর আগে শেষ কর্মদিবস ছিল গতকাল মঙ্গলবার। শেষ কর্মদিবসে সচিবালয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতি স্বাভাবিক দেখা গেছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ঘুরে দেখা গেছে, শেষ কর্মদিবসেও অন্যান্য দিনের মতো স্বাভাবিক কাজকর্ম চলছে।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, দুযোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়সহ সচিবালয়ের বিভিন্ন দপ্তর ঘুরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাভাবিক উপস্থিতি দেখা গেছে। ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস হওয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। সচিবালয়ে গাড়ি পার্কিংয়ের স্থানগুলোও ছিল অন্যান্য দিনের মতোই গাড়িতে পূর্ণ। অভ্যর্থনা কক্ষেও সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য দর্শনার্থীদের আনাগোনা দেখা গেছে। লিফটম্যানদের সচিবালয়ে যাতায়াতকারী বিভিন্ন ক্ষেত্রের কর্তাব্যক্তিদের কাছ থেকে ঈদের বখশিস আদায়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে।
এবার রমজান মাস ২৯ দিন ধরে ২২ এপ্রিল (শনিবার) ঈদুল ফিতরের তারিখ নির্ধারণ করে ছুটির তালিকা করেছে সরকার। এ ক্ষেত্রে ২১ থেকে ২৩ এপ্রিল (শুক্র, শনি ও রোববার) ঈদের ছুটি থাকবে। ২০ এপ্রিল ছুটি ঘোষণা হওয়ায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ১৯ থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত টানা পাঁচ দিনের ছুটি পাবেন। এর মধ্যে ২১ ও ২২ এপ্রিল পড়েছে সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবার। তবে রমজান মাস ৩০ দিন হলে ঈদুল ফিতর হবে ২৩ এপ্রিল (রোববার)। সেক্ষেত্রে ছুটি একদিন বাড়বে। ২৪ এপ্রিলও (গত সোমবার) ছুটি থাকবে। ২০ এপ্রিল ছুটি হওয়ায় ১৯ থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ছয়দিনের ছুটি ভোগ করতে পারবেন সরকারি কর্মচারীরা।
গত ১০ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, ঈদ পরবর্তী দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস রোববার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে। জরুরি পরিষেবাসমূহ নতুন অফিস সময়সূচির আওতার বাইরে থাকবে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এবং ব্যাংক, বিমা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অফিস সময়সূচি নিজ নিজ কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে। অন্যান্য বছরের মতো এবারও রমজান মাসে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত অফিস করছেন।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি