November 24, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, April 17th, 2022, 9:50 pm

ঈদে ঢাকা ছাড়বে দ্বিগুণ মানুষ, রাজধানী অচল হয়ে যাওয়ার শঙ্কা

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

করোনাভাইরাস প্রকোপ কমে আসায় এবারের ঈদে গেল বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ সংখ্যক মানুষ গ্রামের বাড়িতে যাবেন বলে ধারণা করছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটি সতর্ক করে বলেছে, ‘যানজট ও নানা অব্যবস্থাপনার কারণে গণপরিবহনে সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলে এবারের ঈদযাত্রায় নারকীয় পরিস্থিতি হতে পারে।’ সেই সঙ্গে আসন্ন ঈদযাত্রায় অসহনীয় যানজট, পথে পথে যাত্রী হয়রানি, ভাড়া নৈরাজ্য ও সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে। রোববার (১৭ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘ঈদযাত্রায় অসহনীয় যানজট, পথে পথে যাত্রী হয়রানি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও সড়ক দুর্ঘটনা’ বন্ধের দাবিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করে, এবারের ঈদে ঢাকা থেকে ১ কোটির বেশি মানুষ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করবে। এছাড়াও এক জেলা থেকে অপর জেলায় আরও প্রায় ৫ কোটি মানুষ যাতায়াত করতে পারে। এতে আগামী (২০ এপ্রিল থেকে ১০ মে) পর্যন্ত ঈদবাজার, গ্রামের বাড়ি যাতায়াতসহ নানা কারণে দেশের বিভিন্ন শ্রেণির পরিববহনে বাড়তি প্রায় ৬০ কোটি ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াত হতে পারে। এজন্য প্রয়োজন বাড়তি নিরাপত্তা, সর্বোচ্চ সতর্কতা, সকল পথের প্রতিটি যানবাহনের সর্বোচ্চ ব্যবহার সুনিশ্চিত করা। মোজাম্মেল হক চৌধুরী কিছু অসাধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও পরিবহন নেতাদের চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন টোল পয়েন্টের কারণে জাতীয় মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট হয় দাবি করে ঈদযাত্রায় সড়কে চাঁদাবাজি ও যানজটমুক্ত করার দাবি জানান।

রাজধানী অচল হয়ে যাওয়ার শঙ্কা

লিখিত বক্তব্যে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এবারের ঈদযাত্রায় রাজধানীবাসী যানজটের কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়বে। তাই এই মুহূর্ত থেকে রাজধানীর সকল পথের ফুটপাত, রাস্তা হকার ও অবৈধ পার্কিং মুক্ত করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে জোর দাবি জানান মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতের প্রবেশদ্বারগুলোতে অসহনীয় যানজটে পড়তে হবে। এসব যানজট নিয়ন্ত্রণে রাস্তার মোড় পরিস্কার রাখা ও ছোট যানবাহন বিশেষ করে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক প্রধান সড়কে চলাচল বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহনের দাবি জানান। তা না হলে আগামী ২৫ রমজান থেকে ঈদের দিন পর্যন্ত দুপুরের পর থেকে গভীর রাত অবধি রাজধানী অচল হয়ে যাবে।
অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়ে সতর্কতা
অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ ও পরিবহন সংকট, করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চালাতে কিছুকিছু পরিবহন মালিক-চালকেরা মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির এই নেতা। তিনি বলেন, ভাড়া নৈরাজ্যকারীদের বিরুদ্ধে সরকার কাগুজে বাঘের মতো হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেও দৃষ্টান্তমূলক কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতার কারণে এবারের সকল পথে দ্বিগুণ-তিনগুণ অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য হবে। তাই, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
দ্বিগুণ দুর্ঘটনার আশঙ্কা
অতিরিক্ত যাত্রী ও বেশি ভাড়া আদায়ের লোভে প্রতিবছর সড়ক ও নৌ পথে ফিটনেসবিহীন যানবাহনে যাত্রী বহন, পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী বহন, নৌ পথে পর্যাপ্ত বয়া-বাতি ও জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম না থাকা, একজন চালককে বিশ্রামহীনভাবে ১০ থেকে ১৫ ঘণ্টা বিরামহীনভাবে যানবাহন চালাতে বাধ্য করার কারণে এবং অদক্ষ চালক দিয়ে আনফিট যানবাহন চালানোর কারণে সড়ক ও নৌ দুর্ঘটনায় প্রতি বছর ঈদে কয়েকশ যাত্রীর প্রাণহানী ঘটে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে, ২০২১ সালে ঈদুল ফিতরে ৩১৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৩ জন নিহত ৬২২ জন আহত হয়েছে। এবার অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ দ্বিগুণ থাকায় সড়ক ও নৌ দুর্ঘটনার সংখ্যা দ্বিগুণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ট্রেনের টিকিট কালোবাজারিদের হাতে
সম্প্রতি রেল ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে রেলওয়ে ব্যাপক সিডিউল বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এটি কাটিয়ে উঠা না গেলে ঈদযাত্রায় ভোগান্তি বাড়াবে। অনলাইনে রেলের টিকিট প্রদানের বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় যাত্রীর টিকিট কাউন্টার থেকে কালোবাজারিদের হাতে চলে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ফলে কালোবাজারিদের কাছ থেকে এসব টিকিট যাত্রীদের চড়া দামে কিনতে হবে।
ফ্লাইটের টিকিট পেতে গুণতে হবে বাড়তি দাম
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রুটের আসন্ন ঈদে আগে ও পরে ১০ দিনের বাংলাদেশ বিমানসহ বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর টিকিট বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সিগুলো দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এর ফলে এবারের ঈদে যাত্রী সাধারণকে এসব ফ্লাইটে টিকিট কয়েকগুণ বাড়তি দামে কিনতে হবে।
ফেরির সংখ্যা কমেছে
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, ‘নৌ-পথে ভাড়া নৈরাজ্যের পাশাপাশি বিআইডাব্লিউটিএ ও জেলা পরিষদের মালিকানাধীন সারাদেশে ৪০০ নৌ ও ফেরিঘাটে নিয়োজিত ইজারাদারেরা ঈদে যাত্রী পারাপারে বাড়তি টোল আদায়ের নৈরাজ্য চালায়। এবারও তারা তৎপর হয়ে উঠেছে। যাত্রী সাধারণ এসব পথে যাতে হয়রানি না হয় তার বিহিত ব্যবস্থা নিতে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’ একইসঙ্গে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়াসহ বিভিন্ন ফেরিঘাটে যানবাহন চলাচল প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়লেও ফেরির সংখ্যা কমেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এর ফলে এই ঈদে এখানে শত শত যানবাহন উভয় পাড়ে আটকা পড়বে বলেও তাদের ধারণা। মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘এসব ফেরিঘাটে ফেরির সংখ্যা বাড়ানো, বিদ্যমান ফেরিগুলো যথাযথ ব্যবহার সুনিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।’ এবারের ঈদে কালবৈশাখীর শঙ্কা থাকায় নৌপথ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই আনফিট নৌযান বন্ধসহ ফিটনেসধারী নৌযানে যাতে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করতে না পারে তার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানান তিনি।
অজ্ঞান পার্টিসহ প্রতারক চক্রের দৌরাত্ম্য বেশি থাকবে
করোনা সংকটসহ নানা কারণে এবারের ঈদ যাত্রায় যাত্রী সাধারণ ব্যাপকভাবে অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টি, টানাপার্টিসহ টার্মিনালে নানা প্রতারক চক্রের খপ্পরে পরে সর্বস্ব খুয়ে ঈদ আনন্দ মাটি হতে পারে। তাই প্রতিটি বাস, লঞ্চ ও রেল স্টেশনে সিভিল পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানোর দাবী জানাচ্ছি। এছাড়াও মহাসড়কে ডাকাতি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য দাবি জানান তিনি।