রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে প্রয়োজনের তুলনায় ফেরি ও ঘাট স্বল্পতা থাকায় অতিরিক্ত গাড়ির চাপ নিয়েই নৌযান পারাপার চলছে। এছাড়া শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ফেরি সার্ভিস বন্ধ থাকায় এই দুটি ঘাটে বাড়তি চাপ পড়ছে।
ইতোমধ্যে প্রায় দুই মাস ধরে দৌলতদিয়া প্রান্তে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে শত শত গাড়ির লাইন থাকছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে ভোগান্তিতে পড়ছেন হাজারো মানুষ। ফেরি ও ঘাট স্বল্পতার দ্রুত সমাধান করতে না পারলে আসন্ন ঈদযাত্রায় বাড়তি ভোগান্তিতে পড়ার শঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি যানবাহন ও যাত্রী পারাপারের বিশেষ ব্যবস্থার প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া ফেরি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা কার্যালয় জানায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে এক বছর আগে ১৮টি ফেরি নিয়মিত চলাচল করতো। গত বছরের আগস্ট মাসে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে পদ্মা সেতুর সঙ্গে ফেরির ধাক্কা লাগায় ফেরি বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। ওই রুটের অধিকাংশ যানবাহন নদী পাড়ি দিতে দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাট ব্যবহার শুরু করে। এরপর থেকে এই রুটে ছোট-বড় মিলে মোট ২৩টি ফেরি চালু হয়। বর্তমানে ২৩টির মধ্যে ১৭টি ফেরি সচল রয়েছে। বাকি পাঁচটি ফেরি ডক ইয়ার্ডে এবং একটি পাটুরিয়ার ভাসমান কারখানা মধুমতিতে মেরামতে রয়েছে।
এছাড়া দৌলতদিয়ার সাতটি ঘাটের মধ্যে চারটি ফেরিঘাট সচল রয়েছে। বাকি তিনটির মধ্যে ১ ও ২ নম্বর ঘাট ২০১৯ সালের ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়ে গেছে। পরবর্তীতে ঘাট দুটি সংস্কার করলেও ব্যবহার উপযোগী হয়নি। আর ৬ নম্বর ঘাটটি মিডওয়াটাল লেভেলে হওয়ায় প্রায় আট মাস ধরে বন্ধ রয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয় জানায়, করোনার আগে দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে গড়ে ৩ হাজার গাড়ি পার হতো। দুই ঘাট মিলে দ্বিগুণ সংখ্যক অর্থাৎ ছয় হাজার গাড়ি পারাপার হতো। অথচ বর্তমানে ২০২২ সালে এসে গাড়ির সংখ্যা প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার বেড়েছে।
এ অবস্থায় দ্রুত ফেরি ও ঘাট সংখ্যা বাড়ানো না হলে ঈদের আগে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ঘাট সংশ্লিষ্ট শ্রমিক ও ফেরি চালকেরা। পরিবহন শ্রমিকেরা ফেরি পারাপারের পরিবর্তে লঞ্চ পারাপারের প্রতি জোর দিচ্ছেন।
ঢাকাগামী সৌহার্দ্য পরিবহনের ঘাট প্রতিনিধি মনির হোসেন বলেন, প্রায় দুই মাস ধরে দৌলতদিয়া ঘাটে যানজট লেগেই আছে। প্রতিদিনি সৌহার্দ্য পরিবহনের আটটি যাত্রীবাহী বাস ফেরিতে নদী পাড়ি দেয়। বেশ কয়েকদিন আগে আমরা মালিক পক্ষকে ঈদের আগে ফেরির পরিবের্ত লঞ্চ পারাপার চালু রাখার দাবি জানিয়েছি।
ঘাট রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিআইডব্লিউটিএ’র দৌলতদিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম বলেন, হিসাব মতে পাঁচটি ঘাট সচল রয়েছে। এখন ২ নম্বর ঘাটে যদি ফেরি না ভিড়ে সেখানে আমাদের করণীয় কী আছে। তারপরও কর্তৃপক্ষ চাইলে প্রয়োজনে আমরা বিকল্প ঘাট তৈরি করতে প্রস্তুত আছি।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক শিহাব উদ্দিন বলেন, ১৮-২০টি ফেরি এবং চারটি ঘাট সচল থাকলেও আমরা সর্বোচ্চ চার থেকে সাড়ে চার হাজার গাড়ি পার করতে পারবো। ঈদের আগে গাড়ির সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ফেরি বাড়লেও এতো গাড়ি পার করা সম্ভব হবে না। এতে প্রতিদিন ঘাট থেকে মহাসড়কে চার-পাঁচ কিলোমিটার করে যানজট লেগে থাকবে বলে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন।
—ইউএনবি
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক