April 20, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, April 26th, 2022, 9:16 pm

ঈদ যাত্রায় ফেরি নিয়ে ভোগান্তির আশঙ্কা

ফাইল ছবি

অনলাইন ডেস্ক :

আসন্ন ঈদে ঢাকা থেকে যাত্রায় ফেরি নিয়ে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি শিকারের আশঙ্কা রয়েছে। কারণ মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের (মাওয়া) শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও শিমুলিয়া-মাঝিকান্দি রুটে ঈদেও বাসসহ ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকছে। আর পদ্মা সেতুতে ধাক্কা লাগার পর প্রায় ৮ মাস রাতে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া দেশের ৬টি নৌপথে ৫১টির মধ্যে ৪০টি ফেরির মধ্যে চালু আছে। বাকিগুলো বিকল বা মেরামতের অবস্থায় রয়েছে। তবে শরীয়তপুরের জাজিরার মাঝিকান্দিতে নতুন একটি ঘাট স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হলেও সেখানে পার্কিং ইয়ার্ড নেই। পাশাপাশি রাস্তাও সরু। আর কর্তৃপক্ষ বলছে ঘাট সঙ্কটের কারণে ঈদের চাপ সামলাতে ফেরির সংখ্যাও বাড়াতে না পারার কথা। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ) ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডাব্লিউটিসি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এবারের ঈদ যাত্রায় মাওয়া পথে দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীরা চরম হয়রানিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্য প্রধান ফেরিঘাট মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট রুটেও প্রায় একই চিত্র। বিকল্প ঘাট কাঁঠালবাড়ী-কাওড়াকান্দি সচল না থাকা এবং পুরনো ফেরির কারণে সংকট চরম হওয়ার শঙ্কায় ভুগছেন সংশ্লিষ্টরা। এবার মাওয়া রুটে ভারী যান চলাচল বন্ধ থাকায় ঈদের সময় বাস-ট্রাকের সঙ্গে ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ বাড়বে। অথচ চলাচলকারী ফেরিগুলোর ইঞ্জিন প্রায়ই বিকল হয়ে বন্ধ থাকে।
সূত্র জানায়, দেশে ফেরি চলাচলের ৬টি রুটের ৫১টি ফেরির মধ্যে ১১টিই বিকল হয়ে পড়ে আছে। ঈদের চাপ সামলাতে শিমুলিয়ার দুটি রুটে ৪টি ফেরি, পাটুরিয়ায় ২টি এবং আরিচায় একটি ফেরি বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর বিকল পড়ে থাকা ফেরিগুলো সচল করে ঈদের সময় ৬টি রুটে যুক্ত করার কাজ চলছে। তবে বিআইডাব্লিউটিসি শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে ২৪ ঘণ্টাই হালকা যানবাহন পারাপার করতে চাইছে। সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। ঘাটের ইয়ার্ড ও রাস্তা তৈরির জন্য সংস্থাটির পক্ষ থেকে সড়ক ও জনপদ বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে দেশের সবচেয়ে আরামদায়ক রাস্তা হলেও শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও শিমুলিয়া-মাঝিকান্দি নৌপথ ঈদে দক্ষিণবঙ্গের যাত্রীদের চরম দুর্ভোগের কারণ হতে পারে। মাসখানেক ধরে ওসব ঘাট ভিআইপি গাড়ি পারাপারেই বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। মাঝিকান্দিতে মাত্র একটি ঘাট বা টার্মিনাল থাকায় কর্তৃপক্ষসেখানে ফেরি বাড়াতে পারছে না। তবে বিআইডাব্লিউটিএ সেখানে ২৮ এপ্রিলের আগে আরেকটি ঘাট চালু করতে যাচ্ছে। কিন্তু ইয়ার্ড ও পর্যাপ্ত রাস্তা না থাকায় সংস্থাটি সেখানে ফেরি বাড়াতে পারছে না। ফলে ঈদ যাত্রায় অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ সামাল দিতে হিমশিম ঘাট কর্তৃপক্ষকে খেতে হবে। চলাচলকারী ১৯টি ফেরির মধ্যে ছোটগুলোর ফিটনেস ভালো থাকলেও বড়গুলো প্রায়ই বিকল হয়ে যায়।
সূত্র আরো জানায়, পদ্মা সেতুর নিরাপত্তার কারণে মাওয়া রুটে চলাচল সীমিত হওয়ায় আরিচা-পাটুরিয়ায় চাপ বেড়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে আগে তা দৃশ্যমান না হলেও এবার ঈদে তা প্রকট রূপ নেবে। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে ওই ঘাট দিয়ে দিনে গড়ে আড়াই হাজার গাড়ি পার হয়েছে। গত মার্চে সংখ্যাটি তিন হাজার ৬০০ ছাড়িয়ে গেছে। ওই ঘাটে বাসের চাপও পড়ছে।
অন্যদিকে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি ঈদে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাটের শৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার দাবি জানিয়েছে। সংগঠনটি শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও শিমুলিয়া-মাঝিরঘাট নৌপথে ফেরিসংখ্যা বৃদ্ধি, সার্বক্ষণিক ফেরি চলাচল অব্যাহত রাখা এবং দুর্ঘটনা এড়াতে ওই দুটি নৌপথসহ পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে লঞ্চ চলাচলের ওপর কঠোর নজরদারির আহ্বান জানিয়েছে। সংগঠনটির সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণে, বিগত বছরগুলোতে ওসব নৌপথে ফেরির সংখ্যা বেশি থাকলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। সরকার নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর নিরাপত্তার স্বার্থে ফেরি চলাচল সীমিত ও সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে। তাতে যাত্রীবাহী গাড়ি পারাপারে সংকট সৃষ্টি ও ঘরমুখী মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঈদ যাত্রা নির্বিঘœ করতে ওই দুটি নৌপথসহ পদ্মার মোট তিনটি নৌপথে লঞ্চ ও স্পিডবোটে অতিরিক্ত যাত্রী বহন রোধ এবং শিমুলিয়া ও পাটুরিয়া ফেরিঘাটের শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।
ফেরি সঙ্কট বিষয়ে বিআইডাব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের এজিএম শফিকুল ইসলাম জানান, ফেরি সংকটের কারণে ঈদে শিমুলিয়া ঘাটে যাত্রী ভোগান্তি হতে পারে। আগে ঈদের সময় ১৮-২০টি ফেরিও চালানো হয়েছে। এখন সেখানে মাত্র ৯টি রয়েছে। বর্তমানে বেগম রোকেয়া ও ফরিদপুর নামে ৩টি ফেরি ডক ইয়ার্ডে থাকায় মাত্র ৫টি ফেরি দিয়ে শিমুলিয়া ঘাট থেকে দুটি নৌপথ সচল রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিআইডাব্লিউটিসির পরিচালক (বাণিজ্য) এস এম আশিকুজ্জামান জানান, শিমুলিয়া, পাটুরিয়াসহ দেশের ৬টি নৌপথে ৫১টি ফেরি রয়েছে। তার মধ্যে ৪০টি চালু থাকে। বাকিগুলো নষ্ট বা মেরামতে থাকে। ঈদের জন্য সব কটি ফেরি একযোগে চালু করার চেষ্টা করা হচ্ছে।