নিজস্ব প্রতিবেদক:
উজান থেকে ভেসে আসা ক্ষতিকর পলিথিন ও প্লাস্টিকের কারণে বাড়ছে বাংলাদেশের পরিবশে দূষণ। জানা যায়, নিম্ন স্রোতধারার দেশ হিসেবে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে প্লাস্টিক চলে আসছে, যা নদীযোগে ছড়িয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এসব প্লাস্টিক থেকে প্রচুর রাসায়নিক পদার্থ পরিবেশে ছড়াচ্ছে, যা ফসলের ক্ষেত থেকে শুরু করে মানুষের খাবারের পাতেও পৌঁছে যাচ্ছে। বিভিন্ন গবেষণা সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বের শীর্ষ এক হাজার নদীর মাধ্যমে আসা প্লাস্টিক, ৮০ শতাংশ সমুদ্র দূষণের জন্য দায়ী। প্লাস্টিক বেশিরভাগ স্থানান্তর হয় নদীর মাধ্যমে।
এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অন্যতম ভুক্তভোগী। যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের জন্য বিশেষ কিছু সুবিধা থাকে সেই হিসেবে প্লাস্টিকের ভুক্তভোগী হিসেবেও সহায়তা প্রয়োজন। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সমুদ্রে প্লাস্টিক যায় নদীর মাধ্যমে। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় যে নদীগুলো আছে, এর মধ্যে বাংলাদেশেরও দুটি নদী আছে।
এই নদীর মাধ্যমে প্লাস্টিক পরিবহন হয়। এই নদীগুলোর ক্ষেত্রে কার্যকর কিছু উদ্যোগ নিলে উপকৃত হবে বাংলাদেশ। আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির এসিএস পাবলিকেশনসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামুদ্রিক প্লাস্টিকের ধ্বংসাবশেষের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ভূমিভিত্তিক উৎস থেকে উদ্ভুত হয় এবং নদীগুলো প্লাস্টিকের ধ্বংসাবশেষের জন্য একটি প্রধান পরিবহন পথ হিসেবে কাজ করে। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি নদী সমুদ্রে বৈশ্বিক প্লাস্টিকের ৮৮ থেকে ৯৫ শতাংশ পরিবহন করে।
এদিকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, আমাদের প্রত্যাশা এ বছরের শেষ দিকেই যেন আমরা একটা বাইন্ডিংসের মধ্যে যেতে পারি। সেটার জন্য বেশ কিছু কাজ আমাদের করতে হবে। আমরা যখন প্লাস্টিক নিয়ে কথা বলি, তখন দেখতে হয় প্রক্রিয়াটা কীভাবে শুরু হবে। আমাদের বিশেষ কিছু চাহিদা আছে। আমরা একটি নিম্ন স্রোতধারা দেশ হিসেবে কীভাবে বিশেষ কিছু সুবিধা আদায় করতে পারি সেটি দেখছি।
পরিবেশমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা যখন প্রথম এটি নিয়ে আলোচনা করি তখন দেখলাম পৃথিবীর অনেক দেশ বাংলাদেশের মতো নিম্ন স্রোতধারায় আছে। বড় বড় যে নদীগুলো আছে অ্যামাজনসহ সবগুলোর ক্ষেত্রে কিন্তু এটি প্রযোজ্য। আমরা এ জায়গায় বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। কারণ আমাদের আশপাশে যে দেশগুলো আছে তাদের যে প্লাস্টিক দূষণ সেটা কিন্তু আলটিমেটলি বাংলাদেশে আসছে। এটি আমাদের জন্য বড় একটি সমস্যা।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে উৎসের ক্ষেত্রে আমরা কতটুকু পেছনে যেতে পারি, কতটুকু আমরা সোর্সের কাছে যেতে পারি। আমরা সার্বিকভাবে বিষয়টা দেখছি। আমার মনে হয় জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আমাদের যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাখার যে সিদ্ধান্ত সেটার সাথে যুক্ত করে আমরা কী কী পদক্ষেপ নিতে পারি এবং সেই পদক্ষেপগুলো যেন আমাদের বৈশ্বিক প্লাস্টিক বিষয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের মধ্যে থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।
এ ছাড়া দেশে প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও ব্যবহারকারীদেরকে দূষণের জন্য দায়ী করে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থনৈতিক মূল্য নির্ধারণ করা হবে বলে জানান সাবের হোসেন চৌধুরী।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর ১০টি নদী সবচেয়ে বেশি দূষিত। এরাই সবচেয়ে বেশি দূষণ বহন করছে। এরমধ্যে দুটো বাংলাদেশের- পদ্মা ও যমুনা। এখানে শুধু আমাদের দেশের পলিথিন ও প্লাস্টিক না, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর দূষণও আছে। আমাদের যে অবস্থান, তাতে এসব দূষণ আমাদের নদী হয়ে বঙ্গোপসাগরে যাচ্ছে। কাজেই আমাদের নিজস্ব দূষণ ও পাশের দেশ থেকে আসা দূষণও আছে। তিনি বলেন, আমাদের ১০০ দিনের কর্মসূচিতে এক্সটেন্ডেন্ট প্রডিউসার রেসপনসিবিলিটির কথা আছে।
অর্থাৎ যারা প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করবে, আমরা তাদের দূষণের জন্য দায়ী করব। এজন্য তাদের একটি অর্থনৈতিক মূল্য নির্ধারণ করে দেব। উৎপাদন ও নকশায় কীভাবে তারা প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে আনবে, সেটাও বলা হবে। আমাদের ১০০ দিনের কর্মসূচিতে বলেছিলাম, চলতি মাসের মধ্যেই এ-সংক্রান্ত খসড়া চূড়ান্ত করব, আমাদের সেই কাজ চলছে।
মন্ত্রী বলেন, ইপিআরের খসড়া বড় বড় কোম্পানি ও চেম্বারের কাছে পাঠিয়েছি। তাদের সঙ্গে আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। আমরা যখন প্লাস্টিকের কথা বলি, সেটা ইপিআর পরবর্তী সার্কুলার ইকনোমির সঙ্গে জড়িত। আমরা ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছি। এদিকে সম্প্রতি জাতিসংঘের ইন্টার গভর্নমেন্টাল নেগোসিয়েশন কমিটির চতুর্থ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে প্লাস্টিক দূষণের দিক থেকে বাংলাদেশ মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছেন সম্মেলনে অংশ নেওয়া বিশেষজ্ঞরা। সেখানে অংশ নেওয়া সমাজবিজ্ঞানী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. শাহরিয়ার হোসাইন জানান, বৈঠকগুলোতে সব দেশই নিজস্ব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা করেছে, তাদের স্বার্থের বিষয়ে আলোচনা করেছে। কীভাবে এটি করলে তাদের স্বার্থ রক্ষা করা হবে, প্লাস্টিক দূষণও বন্ধ করা যাবে সেটি গুরুত্ব পেয়েছে সবার আলোচনায়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এটিও কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অবস্থান করছে। প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ৮২ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য আসছে প্রতিবেশী দেশ থেকে। এই প্লাস্টিক তৈরি করি না, কিন্তু সেটির চাপ আমরা নিচ্ছি। আমাদের অর্থনীতি, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য এটি হুমকি। এটি বাংলাদেশের পক্ষে সামাল দেওয়া খুব কঠিন।
এ কারণে বাংলাদেশ প্রস্তাব দিয়েছে নিম্ন স্রোতধারার দেশগুলোর জন্য একটি বিশেষ ব্যবস্থা থাকতে হবে আইনে। এখানে যাতে একটি তহবিলের পরিষ্কার নির্দেশনা থাকে যে এ ধরনের দেশগুলো অর্থনৈতিক সাপোর্ট পাবে, টেকনোলজিক্যাল সাপোর্ট, ক্যাপাসিটি বিল্ডিংয়ের সাপোর্ট পাবে, যার মাধ্যমে এ সমস্যা মোকাবিলা করা যেতে পারে। এটি বাংলাদেশ জোরালোভাবে তুলে ধরেছে। এখন পর্যন্ত বেশকিছু দেশ নীতিগতভাবে সেটি সমর্থন করেছে। আমরা আশা করছি, এ বিষয়টি এখানে সমাধান না হলেও পরবর্তী বৈঠকে সমাধান হবে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি