September 25, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, July 9th, 2023, 1:37 pm

উদ্ধার করা জমি ধরে রাখতে পারছে না পূর্বাচঞ্চল রেল

আগ্রাবাদ ডেবা

নিজস্ব প্রতিবেদক :

বেদখলদারের কবল থেকে উদ্ধার করা জমি ধরে রাখতে পারছে না বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল। বাজেট স্বল্পতায় রক্ষণাবেক্ষণের অভবে স্বল্পসময়েই তা আবারো বেদখল হচ্ছে। ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগ নিয়ে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল। গত এক বছরে রেলওয়ের ওই অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে হাজারো অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে অন্তত সাড়ে সাত হাজার অবৈধ দখলদারকে উচ্ছেদ করা হয়। দখলমুক্ত করা হয় ১০ একর জায়গা। কিন্তু দখলমুক্ত করার পর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেসব জায়গা ধরে রাখা যাচ্ছে না। অবৈধ দখলদাররা ফিরে আসছে। এ নিয়ে এক ধরনের লুকুচুরি চলছে। রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পূর্ব রেলের মোট জমির পরিমাণ ২১ হাজার ৫০ একর। রেললাইনসহ অপারেশনাল কাজে ব্যবহৃত হয় ১৩ হাজার ৭৪৯ একর জায়গা। বাকি জায়গার মধ্যে ২০২২ সাল পর্যন্ত ২৮৫ দশমিক ৪৪৭ একর রেলের জমি (পুকুর ও জলাশয়) মৎস্য চাষের জন্য বেসরকারি পর্যায়ে লিজ দেয়া হয়েছে। নার্সারি করার জন্য লিজ দেওয়া হয়েছে ৪৪ দশমিক ৯৩ একর এবং অন্যান্য কাজে লিজ দেয়া হয়েছে ৮৬৫ দশমিক ৪৩২৯ একর রেলভূমি। বেদখলে রয়েছে ৪৮২ দশমিক ৫ একর জমি অবৈধ দখলে রয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়, ক্লাব, সামাজিক সংগঠন, ধর্মীয় স্থাপনা, দোকানপাট ও বসতঘরের মাধ্যমে এসব জায়গা বেদখল হয়ে আছে।

সূত্র জানায়, বন্দরনগরী চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে রেলের ‘আগ্রাবাদ ডেবা’ রয়েছে। তৎকালীন আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ে রেললাইন স্থাপনে মাটি সংগ্রহের জন্য বিশাল জমি খনন করলে ডেবাটি (দিঘি) তৈরি হয়। এখন পাড়সহ ২৭ একরের বেশি আয়তনের ডেবার চারপাশ বেদখল হয়ে গেছে। ভরাট করে ফেলা হচ্ছে জলাশয়ও। অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে কাঁচা-পাকা শত শত ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। দু-একবার অভিযান চালিয়ে কিছু স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলেও সেই জায়গায় নতুন করে গড়ে ওঠে অবৈধ স্থাপনা। ময়লা-আবর্জনায় ডেবাটির পানি অনেক আগেই দূষিত।

গত বছরের মার্চে চট্টগ্রামের সিআরবিসংলগ্ন গোয়ালপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে এক হাজার ৪০৩টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং তিন হাজার ৬৫১ জন অবৈধ বসবাসকারীকে উচ্ছেদ করে ৩ দশমিক ৩৩৮ একর জায়গা উদ্ধার করে রেলওয়ে। কিন্তু কিছুদিন পর থেকে বিশাল সেই জায়গা আবার বেদখল শুরু হয়েছে। এর আগে ২০১৪ ও ২০১৬ সালেও এই স্থানে বড় ধরনের অভিযান চালিয়েছিল রেলওয়ে। কিন্তু উদ্ধার করা জায়গা ধরে রাখতে পারছে না তারা। শুধু আগ্রাবাদ কিংবা গোয়ালপাড়া নয়; রেলওয়ের চট্টগ্রাম ঝাউতলা-ষোলশহর এলাকা, চট্টগ্রাম পে-অ্যান্ড ক্যাশ অফিস এলাকা, রেলওয়ে ম্যান্স স্টোর এলাকা, চাঁদপুর বড় রেলস্টেশনসংলগ্ন ৩ নম্বর কয়লাঘাট, তুলাতলীসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে রেলওয়ে ভূ-সম্পত্তি বিভাগ। এখন এসব এলাকার বেশিরভাগই আবার বেদখল হয়ে গেছে। অভিযোগ রয়েছে, খোদ একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে এলাকাভিত্তিক প্রভাবশালী লোকজন বেদখল করে নিচ্ছে রেলের মূল্যবান জায়গা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পর্যাপ্ত বাজেট না থাকায় উচ্ছেদ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা যাচ্ছে না রেলের জায়গা। কারণ উদ্ধার করা জায়গা রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে রেলের এক বিভাগ আরেক বিভাগকে দোষারোপ করছে। জানা যায়, রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগ দখল করা ভূমি উদ্ধার করার পর তা রক্ষণাবেক্ষণে রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগকে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার জন্য চিঠি দেয়। রেলভূমি যাতে দখল হয়ে না যায়, সে বিষয়টি দেখার জন্য অনুরোধ করা হয় রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর চিফ কমান্ড্যান্টকে। এতে কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। সূত্র আরো জানায়, বেদখল জমি উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযান চালাতে রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। উচ্ছেদ অভিযানে লাগে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ। ভাড়া করতে হয় এক্সক্যাভেটর, জোগাড় করতে হয় শ্রমিক। এরপর নামতে হয় অভিযানে। কিন্তু বিশাল এই অঞ্চলে রেলের বেদখল হয়ে যাওয়া ভূ-সম্পত্তি রক্ষায় বছরে বাজেট মাত্র ১০ লাখ টাকা। অথচ এক দিনের একটি অভিযান পরিচালনায় একটি এক্সক্যাভেটর ভাড়া নিতেই লেগে যায় ২০-৩০ হাজার টাকা। অভিযানভেদে শ্রমিক লাগে ১০ থেকে ৫০ জন পর্যন্ত। প্রত্যেক শ্রমিকের মজুরি নূন্যতম ৭০০ টাকা হলে গড়ে ২০ জন শ্রমিকের জন্য গুনতে হয় ১৪ হাজার টাকা। এ ছাড়া পুলিশ সদস্য, শ্রমিক-কর্মচারীদের চা-নাশতা বাবদ খরচ তো রয়েছেই। এর বাইরে সংকট রয়েছে লোকবলেরও।

অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী, রেলের পূর্বাঞ্চলের ভূ-সম্পত্তি বিভাগে ১৫৫ লোকবল থাকার কথা; রয়েছে মাত্র ৫১ জন। ফলে অভিযান চালানোর উদ্যোগ নিতে গিয়ে রেলওয়েকে হিমশিম খেতে হয়। এ বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা সুজন চেšধুরী জানান, লোকবল সঙ্কট ও বাজেটস্বল্পতার কারণে ব্যাপক হারে অভিযান চালানো যায় না। আবার একটি অভিযান চালাতে গেলে ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ এবং শ্রমিক লাগে। সবকিছু সমন্বয় করে একটি অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের মাধ্যমে ভূমি উদ্ধার করতে হয়। উদ্ধার করা ভূমি সংরক্ষণের জন্য রেলের প্রকৌশল বিভাগকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। বাস্তবতা হচ্ছে, এত আয়োজন করে ভূমি উদ্ধার করা হলেও নানা কারণে পরে সেটি রক্ষা করা যায় না।