নিজস্ব প্রতিবেদক:
উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে দেশের চারটি স্থলবন্দর। এর মধ্যে ময়মনসিংহে দুটি এবং ফেনী ও খাগড়াছড়িতে রয়েছে একটি করে স্থলবন্দর। আশা করা হচ্ছে, চারটি স্থলবন্দর উদ্বোধনের মাধ্যমে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। জানা গেছে, তিনটি বন্দরে ইমিগ্রেশন চালু হবে, যার মধ্যে এখন দুটিতে শুধু কয়লা আমদানি করা হয়। এগুলো হলো- ময়মনসিংহের গোবরাকুড়া ও কড়ইতলী। এছাড়া খাগড়াছড়ির রামগড় স্থলবন্দরেও ইমিগ্রেশন চালু হবে। আর ফেনীর বিলোনিয়া বন্দর দিয়ে শুধু পণ্য আমদানি-রপ্তানি হবে। জানা গেছে, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের গোবরাকুড়া ও কড়ইতলীর নদীর নদীর পাশেই নির্মিত গোবরাকুড়া ও কড়ইতলী স্থলবন্দর। হালুয়াঘাট উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে এক পাশে গোবরাকুড়া এবং ছয় কিলোমিটার দূরে আরেক পাশে কড়ইতলী স্থলবন্দর। এ দুই বন্দর নির্মাণে ৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি স্থলবন্দরের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এখানকার বন্দর দিয়ে আগে কয়লা আমদানি হতো, কিন্তু সেটা এখন বন্ধ। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণ, যোগাযোগ স্থাপন ও সরকারি রাজস্ব আদায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে সহায়তার জন্য ‘গোবরাকুড়া-কড়ইতলী স্থলবন্দর উন্নয়ন’ নামের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। পুরোপুরি চালু করা গেলে অদূর ভবিষ্যতে কড়ইতলী বন্দর দিয়ে মানুষ পারাপার এবং গোবরাকুড়া বন্দর দিয়ে পণ্য পারাপার হবে। কড়ইতলী-গোবরাকুড়ার ওপাশে (ভারতের অংশে) মেঘালয় রাজ্যের তোড়া জেলায় গান্ধীনগর গাছুয়াপাড়া শুল্ক স্টেশন অবস্থিত। অর্থাৎ ওই স্টেশনের সঙ্গেই সংযোগ ঘটবে কড়ইতলী-গোবরাকুড়ার। বন্দর দুটি চালু হলে কেবল কয়লা নয়, ভারতে বিভিন্ন ধরনের পণ্যও রপ্তানি করা হবে। ভারতের মেঘালয় ও আসাম রাজ্য এবং ভুটান ও নেপালে পণ্য পাঠাতে পারবেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। তখন উত্তর-পূর্বের রপ্তানি বাজারে প্রবেশের অন্যতম দরজা হবে গোবরাকুড়া ও কড়ইতলী স্থলবন্দর। প্রকল্পের আওতায় স্থলবন্দর দুটিতে ওয়্যারহাউজ, পার্কিং ইয়ার্ড, অফিস ভবন, ওয়েব্রিজ স্কেল, ডরমিটরি ভবন, নিরাপত্তা রক্ষীদের থাকার ব্যারাক ভবনসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে ২০২২ সালের জুনে। ঢাকা থেকে এই দুটি স্থলবন্দরের দূরত্ব সব থেকে কম, মাত্র ১৮০ কিলোমিটার। এদিকে খাগড়াছড়ির রামগড় স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন চালু হবে। ফলে মানুষ যাতায়াত করতে পারবে। অনেকে স্বল্প খরচে এই স্থলবন্দর হয়ে উন্নত চিকিৎসা নিতে ভারতের যেতে পারবেন। এ ছাড়া দু’দেশের মধ্যে পণ্য রপ্তানি-আমদানিও বাড়বে। রামগড় স্থলবন্দর পুরোদমে চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্য, উচ্চশিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে দুই দেশের মানুষ উপকৃত হবে। এরইমধ্যে স্থলবন্দর ঘিরে ১০ একর জায়গায় বন্দর টার্মিনাল, সড়কপথ, গুদামঘর, চেকপোস্ট, কাস্টম ও বিজিবি’র জন্য জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১১২ কিলোমিটার দূরত্বের এই স্থলবন্দর দিয়ে মাত্র তিন ঘণ্টায় ট্রান্সশিপমেন্টের পণ্য পৌঁছাবে ভারতের ত্রিপুরার সাব্রুমে। ২০১৫ সালের ৬ জুন ঢাকা সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রামগড় স্থলবন্দর ফেনী নদীর ওপর বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ এর ভিত্তিপ্রস্তর প্রতিস্থাপন আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। ফলে দীর্ঘদিনের আশা পূরণ হতে যাচ্ছে রামগড় স্থলবন্দর। অন্যদিকে ফেনীর বিলোনিয়া স্থলবন্দরের নির্মাণকাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। ১০ একর জমিতে নির্মিত বন্দরটি এখন উদ্বোধনের অপেক্ষা। এই বন্দর দিয়ে দ্বিমুখী বাণিজ্য চালু হবে। ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে এটা নির্মিত হয়েছে। ১০ একর জমিতে ওপেন স্ট্যাক ইয়ার্ড, পার্কিং ইয়ার্ড, গুদামঘর, তিনতলা অফিস ভবনসহ যাবতীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। এখন চালুর অপেক্ষায়। আগে থেকেই এটি শুল্ক স্টেশন হিসেবে কার্যকর ছিল। স্থলবন্দরটি চালু হলে প্লাস্টিক পণ্য, জুস, নানা ধরনের পানীয় ভারতের রপ্তানি বাড়বে। ইট, পাথর, সিমেন্ট ও রড রপ্তানি হচ্ছে ভারতে। অন্যদিকে ভারত থেকে মাছের পোনা, তাজা ফলমূল, কাঠ, বীজ, কয়লা, গম, চুনাপাথর, পেঁয়াজ, মরিচ, হলুদ ও আদা আমদানির অনুমোদন থাকলেও দীর্ঘ এক যুগ ধরে শুধু একমুখী বাণিজ্য চলে আসছে। প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাবে ব্যবসায়ীরা পণ্য রপ্তানি-আমদানিতে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতেন। তবে সেই চিরচেনা সমস্যা আর থাকবে না। মালবাহী ট্রাক সড়কে থাকবে না এখন থেকে পার্কিং ইয়ার্ডে থাকবে। চালকরা টয়লেটসহ বিশ্রামের সুবিধা পাবেন। প্রতিদিন গড়ে ৩০-৪০ ট্রাক মালামাল লোড-আনলোড হয়। অবকাঠামোগত সমস্যাসহ নানা কারণে বিলোনিয়া সীমান্তে দীর্ঘ সময় ধরে ট্রাক আটকে থাকে। তবে উদ্বোধনের পরে সেই সমস্যা নিরসন হবে। বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, চারটি স্থলবন্দরের কাজ আমরা শতভাগ সম্পন্ন করতে পেরেছি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের যেদিন সময় দেবেন সেই দিনই উদ্বোধন করতে পারবো। চলতি বছরের জুন মাসে চারটির কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়। চারটি স্থলবন্দরের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। গোবড়াকুড়া-কড়াইতলী দিয়ে এখন কয়লা আমদানি করা হয়। এখানে ইমিগ্রেশন চালু করা হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে নানা ধরনের খাদ্যপণ্য ভারতের মেঘালয়সহ অন্যান্য রাজ্যে রপ্তানি করতে পারবো। রামগড় স্থলবন্দরের কাজও সমাপ্ত হয়েছে। এখানেও ইমিগ্রেশন চালু হবে। এই স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য-সেবাও আমদানি রপ্তানি হবে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি