November 15, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, March 15th, 2022, 9:51 pm

উপস্থিতিতে মুখরিত শিক্ষাঙ্গন, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দীর্ঘ দুই বছর পর আবারও আগের রূপে ফিরেছে শিক্ষাঙ্গন। মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) সকাল থেকে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে মুখরিত স্কুল-কলেজের ক্যাম্পাস। তবে পুরোদমে ক্লাস শুরু হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি চরমভাবে উপেক্ষিত হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে গাদাগাদি করে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের বসানো হয়। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই ছিল না হাত ধোয়া ও মাস্ক পরার কড়াকড়ি। মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজ সরেজমিন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। মিরপুর মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী জান্নাতুল মাওয়া আয়েশা। এতদিন সপ্তাহে একদিন করে ক্লাস করলেও মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) সকাল ৭টা ২০ মিনিটে স্কুলে উপস্থিত হতে হয়েছে। দুইটি ক্লাস শেষে বিরতির সময় সে খেলাধুলায় ব্যস্ত। এই ছাত্রী বলেন, অনেকদিন পর আমাদের পুরোদমে ক্লাস শুরু হয়েছে। অন্যান্য দিন উপস্থিতি কম থাকলেও আজ (মঙ্গলবার, ১৫ মার্চ) অনেকে এসেছে। পুরোদমে ক্লাস শুরু হওয়ায় পেছনের ঘাটতি কাটানো সম্ভব হবে। তার মতো অন্যান্য ক্লাসের শিক্ষার্থীদেরও বিরতির সময়ে খেলাধুলা, আড্ডা, গল্প, টিফিন খাওয়ায় ব্যস্ত দেখা গেছে। তাদের অনেকেরই মুখে মাস্ক নেই, গাদাগাদি করে বসা। ক্লাসের চিত্রও প্রায় একই। এই স্কুলের শিক্ষক আবদুর রহমান বলেন, ক্লাসে আমাদের উপস্থিতি অনেক ভালো। প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে ক্যাম্পাস মুখরিত হয়ে উঠেছে। তবে ক্লাসরুম সংকট থাকায় স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা মাস্ক খুলে ফেললে কিছু করার থাকে না। তবে শিক্ষকরা বারবার স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে সর্তক করছেন। মিরপুরে উপশহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (সকাল) ছাত্রী বৃষ্টি আক্তার এতদিন সপ্তাহে একটি ক্লাস করে বাড়ি ফিরলেও সকাল সকাল স্কুলে আসতে হয়েছে। সকাল এগারটা পর্যন্ত দুটি ক্লাসের পর সহপাঠীদের সঙ্গে গল্পে মেতে ওঠে সে। এ সময় তার সঙ্গে কথা হলে জানায়, সপ্তাহে একটি ক্লাস হওয়ায় ক্লাসে অনেকে নিয়মিত আসত না। আজকে আমাদের ক্লাসে ৬১ জনের মধ্যে ৫২ জন এসেছে। ক্লাসে দেখা যায়, তিন ফুটের বেঞ্চে দুজন করে বসানো হয়েছে। অনেকের মুখেই মাস্ক নেই। ৬১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাঁচজন করোনার একটি টিকা পেয়েছে। বাকিরা দুই ডোজ টিকার আওতায় এসেছে। এদিকে প্রাক-প্রাথমিক স্তরের শিশুদের ক্লাসও শুরু হয়েছে। জীবনের প্রথম ক্লাসে আসা শিক্ষার্থীদের ফুল ও বেলুন দিয়ে বরণ করে নিয়েছেন ক্লাস শিক্ষকরা। এ স্তরের খাদিজা নামে এক ছাত্রীর মা তানজিলা বলেন, গত জানুয়ারিতে মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করালেও তিন মাস পর স্কুলে আসতে পেরেছে। স্কুলে এসে অনেক আনন্দিত। প্রতিদিন সে স্কুলে আসতে চায়। বাসায় থাকতে তার ভালো লাগে না। ক্লাস শিক্ষক আয়শা হোসেন বলেন, ওরা প্রথমদিন স্কুলে আসায় ফুল ও বেলুন দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়েছে। তিনি নিজের অর্থ ব্যয় করে এ আয়োজন করেছেন। প্রথম দিন পরিচয়, নাচ-গান ও গল্প বলা হয়েছে বলে জানান তিনি। এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দিন বলেন, ক্লাস ও শিক্ষক সংকট থাকায় বাড়তি ক্লাসের ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না। আগে যেভাবে ক্লাস নেওয়া হতো, সেভাবে নেওয়া হচ্ছে। প্রথম দিন ক্লাসে ৮০ শতাংশের মতো শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছে। তিনি বলেন, ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী আমাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে করোনার দুটি টিকা দেওয়া হয়েছে। ৫ শতাংশের মতো একটি টিকা নেওয়া রয়েছে। দ্রুত সময়ে তাদের বাকি টিকা দেওয়া হবে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে সব শিক্ষার্থী নিয়মিত ক্লাস শুরু হওয়ায় আনন্দিত। মিরপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাথী আক্তার। সকাল সাড়ে ৭টায় স্কুলে এসে ১১টা পর্যন্ত তিনটি ক্লাস করেছে। তবে অনেক দিন পর পুরোদমে ক্লাস শুরু হওয়ায় তাদের ক্লাসের অনেকের মধ্যে অস্বস্তি লাগছে বলে জানায়। এ স্কুলের প্রধান শিক্ষক নাসরিন সুলতানা বলেন, সকল ক্লাস শুরুর ঘোষণা গত সোমবার সরকারি নির্দেশনা দেরি করে দেয়ায় আমাদের শিক্ষার্থীদের গ্রুপে এ বিজ্ঞপ্তি দিতে বিলম্ব হয়েছে। সে কারণে প্রথম দিন ৫০ শতাংশের মতো উপস্থিত হয়েছে। আগামীকাল (আজ বুধবার) থেকে স্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হবে। ইস্পাহানি গ্লার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সাদেকা বেগম বলেন, আবারও আগের চেহারায় ফিরলো স্কুল। বিষয়টি একজন শিক্ষক হিসেবে আমার জন্য আনন্দের। ইস্কাটন গার্ডেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক দুলাল চন্দ্র চৌধুরী বলেন, বিষয়টি ভাবলেই অবাক লাগে, গত দুই বছর আমরা স্বাভাবিক শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নিতে পারিনি। মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) আবার সেই আগের অবস্থায় ফিরলো স্কুল। বিষয়টি নিয়ে আমি খুবই আনন্দিত। প্রভাতী বিদ্যানিকেতনের সিনিয়র শিক্ষক পুলিং মালাকার বলেন, আজ মনে হচ্ছে দুই বছর আগের দিনে ফিরে গেলাম। এই পরিস্থিতি যেন বজায় থাকে এইজন্য আমি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ করবো।