কুবি প্রতিনিধি:
টেন্ডার, চাকরিসহ বিভিন্নখাতে প্রভাব বিস্তার না করতে পেরে নেতাকর্মীদের মাঠে নামিয়ে উপাচার্যকে চাপে ফেলার অভিযোগ উঠেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজের বিরুদ্ধে। বিভিন্নসময় নিয়োগ ও টেন্ডারের অনৈতিক দাবি নিয়ে উপাচার্য দপ্তরে চাপ প্রয়োগ ও গাড়ি আটকানোর নজির আছে ইলিয়াসের। সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, নতুন উপাচার্যের কাছ থেকে অতীতের ন্যায় টেন্ডার ও নিয়োগে একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তারের সুযোগ না পেয়ে এবার নেতাকর্মীদের নিয়ে উপাচার্যকে চাপে ফেলতে মাঠে নেমেছেন ইলিয়াস।
বুধবার (২০ জুলাই) মানববন্ধনের ডাক দিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট দেন। পরবর্তীতে মানবন্ধন শেষে উপাচার্যের কার্যালয়ে অনুমতি ছাড়াই সদলে স্মারকলিপি নিয়ে প্রবেশ করে বাগবিতন্ডায় জড়ান ইলিয়াস। সেখানেও টেন্ডার নিয়োগ প্রসঙ্গ উঠে আসে বলে জানান ঘটনাস্থলে উপস্থিত একাধিক শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মী।
তারা জানান, ইলিয়াস ও তাঁর নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে একপর্যায়ে উপাচার্য বলেন, তোমরা তো এখানে এর আগে শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে আসো নি, নিয়োগ-টেন্ডারের দাবি নিয়ে এসেছো। শিক্ষার্থীদের যে-কোন যৌক্তিক দাবি হলে তোমরা বললেও আমার প্রশাসন মানবে, এমনকি না বললেও তা করবো। উত্তরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পাল্টা প্রশ্ন করে বলে, ঐ দাবিগুলো (টেন্ডার/নিয়োগ) কি ন্যায্য দাবি ছিলো না?
এদিকে ছাত্রলীগের বেশ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, ইলিয়াস আগের রাতেই সভা করে তার অনুসারীদের এই মানবন্ধনের ব্যাপারে নির্দেশনা দেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে অবস্থানরত সবাইকে অবশ্যই সেখানে থাকতে বলা হয়। এর আগে গত ১৯ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগ এবং ২০ জুলাই নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হল শাখা ছাত্রলীগকেও বিভিন্ন দাবি নিয়ে মানববন্ধনে নামান তিনি।
এসব মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীসংশ্লিষ্ট চলমান কিছু সংকট তুলে ধরে সেগুলো সমাধানের দাবি জানানো হয়। তবে এসব দাবির সাথে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো বলছে, এসব দাবির অনেকগুলোই প্রক্রিয়াধীন। আবার কিছু কিছু দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না।
শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি দেখানো হলেও মূলত লাগাতার মানববন্ধনের মাধ্যমে টেন্ডার-নিয়োগের দাবিগুলোর জন্য প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ চাপ সৃষ্টিকে করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট অনেকেই।
বিশ্ববিদ্যালয়টির রসায়ন বিভাগের বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমান বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীত ইতিহাস সম্পর্কে আমি অবগত আছি। গত চার বছর এই বিশ্ববিদ্যালয় একটা প্রশাসনের নেতৃত্বে চলে এসেছে। তখন কেন এসব দাবি উত্থাপন করা হয়নি? আমি অবশ্যই শিক্ষার্থীবান্ধব সকল দাবির সাথে একমত। আমিও চাই সকল সুযোগ-সুবিধা শিক্ষার্থীরা পাক। শাখা ছাত্রলীগের এই কমিটিই তো গত চার বছর ধরে ছিল এবং এখনো আছে। তাহলে তারা তখন কেন এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেনি। হঠাৎ এরকম লাগাতার মানববন্ধনের পিছনে নিশ্চয়ই কোন লুকায়িত এজেন্ডা আছে। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো পূরণ হোক আমি চাই। সেই সাথে লাগাতার মানববন্ধনের পেছনের কারণগুলো খুঁজে বের করা হোক।
এ বিষয়ে প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, তারা যেসব দাবি নিয়ে এসেছিল এর বেশিরভাগ দাবি আবাসিক হল কেন্দ্রিক। এখন আমার প্রশ্ন হলো হলের সমস্যা থাকলে সমাধান করবে হল প্রাধ্যক্ষ। সেটা সরাসরি উপাচার্যকে বলা স্বাভাবিক নয় বলে মনে করি। এভাবে হুট করে টানা তিনদিন মানববন্ধন করার পিছনে কারো ভিন্ন উদ্দেশ্য থাকতেও পারে। এখন কি উদ্দেশ্য ছিল সেটা বলতে পারছি না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সহকারী অধ্যাপক বলেন, ভিসি স্যারকে চাপে রাখার জন্য এবার পরিকল্পিতভাবে শিক্ষার্থীদের দাবি নামক ব্যানারে ছাত্রলীগ মানববন্ধনে নেমেছে। এর আগে বিভিন্ন সময় তারা বিভিন্ন টেন্ডার ও নিয়োগের অযৌক্তিক দাবি নিয়ে ভিসি স্যারের কাছে গেলে ভিসি স্যার রাজি না হওয়ায় তারা চাচ্ছে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে। যাতে চাপে পড়ে ভিসি তাদের উপর নমনীয় হয় আর ইলিয়াসের নিয়োগ ও টেন্ডারের সকল অযৌক্তিক দাবি মেনে নেয়।
এদিকে ছাত্রলীগের দাবিগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ.এফ.এম আব্দুল মঈন বলেন,
শিক্ষার্থীবান্ধব দাবিগুলো যৌক্তিক। আমরা এগুলো যথাসম্ভব দ্রুত পূরণের চেষ্টা করবো। তবে আমি টাকার নয়-ছয় করি না। বাজেটে যে খাতে যতটুকু বরাদ্দ থাকে ততটুকুই ব্যয় করি। তাই সব দাবি পূরণে একটু সময়ও লাগবে।
মানববন্ধন করার পিছনে কোনো উদ্দেশ্য আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা তিনদিনে তিনটা মানববন্ধন করলো। হুট করে ছাত্রলীগের কর্মীদের নিয়ে এভাবে লাগাতার মানববন্ধনের পিছনে কী উদ্দেশ্য তা আমি জানি না। তবে এটুকু বলবো আমরা শিক্ষার্থীদের জন্যই কাজ করছি। সকল যৌক্তিক দাবি মেনে নিব, তবে কারো কোনো অযৌক্তিক দাবি মেনে নিবো না।
নিয়োগ টেন্ডারের অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, গত তিন মাস আমরা উপাচার্যের কাছে কোনো টেন্ডার বা নিয়োগ নিয়ে কথা বলতে যাইনি। আমরা শুধু শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে কথা বলছি। এখন কেউ যদি বলে চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছি এটা সত্য নয়।
গণমাধ্যমকে ইলিয়াস আরও বলেন, রমজানে ঈদের আগে একটা কাজে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নাস্তা খরচের জন্য উপাচার্য কিছু টাকা দিয়েছিল। এ ছাড়া শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদকে একটা টেন্ডার দিয়েছিল। এর বাইরে গত কয়েক মাসে উপাচার্যের কক্ষে আমি শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া নিয়ে দুতিনবার গিয়েছি।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ মার্চ চাকরি-ঠিকাদারির নানা দাবিতে ইলিয়াসের নেতৃত্বে উপাচার্যের গাড়ি আটকায় কুবি শাখা ছাত্রলীগ। উপাচার্য তাদের অনৈতিক দাবির সাথে একমত না হওয়ায় সভাপতি ইলিয়াস উপাচার্যের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন- এমন সংবাদ প্রকাশ হয় দেশের বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে।
০১৫২১৫২৬৭৪১
আরও পড়ুন
গণহত্যাকারীদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই: জামায়াতের আমীর
এইচএসসির ফল প্রকাশ শিগগিরই: শিক্ষা মন্ত্রণালয়
আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের জন্য সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা রাখা হবে: বেরোবি উপাচার্য