November 19, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, September 10th, 2023, 7:14 pm

এক যুগ ধরে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল উদ্বোধনের সময়সীমা পেছাচ্ছে

গত এক দশক ধরে নির্মাণ কাজের ধীর গতির কারণে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (কেএমসিএইচ) উদ্বোধন।

এদিকে হাসপাতালের নির্মাণকাজ শেষ না হলেও বিদেশ থেকে আমদানি করে আনা হয়েছে ৬৫ কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম। মূল্যবান এসব চিকিৎসা সরঞ্জাম অরক্ষিত অবস্থায় দিনের পর দিন হাসপাতাল ভবনে পড়ে রয়েছে।

দফায় দফায় নবনির্মিত এই হাসপাতাল ভবনের বর্হিবিভাগ চালু করার সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করা হলেও, বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

সর্বশেষ গত ৩০ জুন হাসপাতালের বর্হিবিভাগ চালু হওয়ার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় স্বপ্নের মেডিকেল কলেজ নিয়ে হতাশ কুষ্টিয়াবাসী।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১২-১৩ অর্থ বছরে ২৭৫ কোটি টাকা প্রাক্কলন ব্যয় ধরে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালের ৩০ জুন।

কিন্তু নির্মাণকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সমূহের নানা অনিয়ম ও জটিলতা সৃষ্টির কারণে ধাপে ধাপে একাধিকবার প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ও ব্যয় বৃদ্ধির ফলে সর্বশেষ এই প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।

দফায় দফায় সময় বাড়িয়ে সর্বশেষ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত।

আরও জানা যায়, ২০০৮ সালে প্রকল্পটি অনুমোদনের পর ২০১১ সালে কুষ্টিয়া মেডিকেল ট্রেনিং সেন্টার ম্যাটসে অস্থায়ীভাবে মেডিকেল কলেজের যাত্রা শুরু হয়। অস্থায়ী ভবন থেকে স্থানান্তরের পর ২০২২ সালের ৩ মার্চ মূল ক্যাম্পাসে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু হয়।

প্রথম দফায় ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে এবং দ্বিতীয় দফায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়।

এরপর ২০১৯ সালে নির্মাণাধীন হাসপাতাল ভবনের ছাদ ধসে এক শ্রমিক নিহত হলে কাজ আবার বাধাগ্রস্ত হয়। ছাদ ধসে মৃত্যুর ঘটনায় সে সময় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

ওই সময় তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে দুর্ঘটনার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করা হয় এবং তিন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়।

এরপর ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর একনেক সভায় এই প্রকল্পের সংশোধিত ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) অনুমোদন করা হয়।

তখন এই প্রকল্পের ব্যয় ২০৬ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৮২ কোটি টাকা ধরা হয়। আর সময় সীমা বেঁধে দেওয়া হয় ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।

এদিকে, ভবন নির্মাণ না হতেই গত জানুয়ারি মাসে প্রায় ৬৫ কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম অমদানি করা হয়। প্রায় ৭-৮ মাস ধরে মূল্যবান এসব চিকিৎসা সরঞ্জাম নির্মাণাধীন ভবনের নিচতলা ও দোতলায় বাক্সবন্দি অবস্থায় পড়ে রয়েছে। দ্রুত এগুলো স্থাপন না হলে যন্ত্রপাতিগুলো অচল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

নির্মাণ কাজের বিষয়ে হাসপাতাল ভবনে নিযুক্ত ভাণ্ডার কর্মকর্তা মুশফিকুর রহমান জানান, হাসপাতাল ভবন চালু করতে গেলে এখনও অনেক কাজই বাকি রয়ে গেছে। এখানে কোটি কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জামাদি চরম অরক্ষিত ও নিরাপত্তাহীন অবস্থায় বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে রয়েছে। এতে করে যেকোনো সময় বড় কোনো অনিষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তিনি বলেন, একাধিকবার বলা হলেও ৭-৮ মাস ধরে এভাবে মূল্যবান যন্ত্রপাতি অরক্ষিতভাবে পড়ে থাকলেও সংশ্লিষ্ট গণপূর্ত বিভাগ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

এই কাজ কবে শেষ হবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

কুষ্টিয়া গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম জানান, প্রকল্প পরিচালক এবং গণপূর্ত বিভাগ ‘দ্রুত কাজ শেষ করার তাগিদ দিয়ে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও গণপূর্ত বিভাগ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে একাধিকবার চিঠি পাঠিয়েছে।

তিনি দাবি করেন, নির্মাণ বিধি লঙ্ঘন ও অবহেলার অভিযোগে একাধিকবার জরিমানাও করা হয়েছে। নানা জটিলতা থাকলেও ইতোমধ্যেই ৮৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাকি কাজগুলো চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে শেষ করা সম্ভব হবে।

প্রকল্প পরিচালক ডা. সরয়ার জাহান জানান, গত ৩০ জুনের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করে হাসপাতাল ভবনটি চালু করতে না পারায়, সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও গণপূর্ত বিভাগের ঊর্ধ্বতন মহলে একাধিকবার তাগাদা পত্র দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এখানে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে ঝিমিয়ে পড়া নির্মাণ কাজটিকে গতিশীল করা।

জানা গেছে, চারটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ নির্মাণ প্রকল্প সম্পন্ন করছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ কাজ করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স জহিরুল লিমিটেড।

কাজের অগ্রগতি জানতে চাইলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান জহিরুল লিমিটেডের স্বত্ত্বাধিকারী জহিরুল ইসলাম বলেন, ২০০৮ সালে অনুমোদন পেলেও নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৩ সালে। সময়মতো অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় নির্মাণ কাজে গতি মন্থরতা দেখা দিয়েছে।

তা ছাড়া প্রকল্পের কাজ দেরিতে শুরু হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই নির্মাণ কাজের ব্যয় কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।

খুব দ্রুতই নির্মাণকাজ শেষ হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তাপস কুমার সরকার জানান, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি রোগী বর্হিবিভাগ এবং আট শতাধিক ভর্তি রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে।

অত্যাধিক এই চাপ সামলাতে গিয়ে আমাদের চিকিৎসকসহ স্টাফদেরও নানাবিধ ঝুঁকি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে দ্রুত ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি চালু হলে রোগীদের মানসম্মত উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

—-ইউএনবি