November 18, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, November 22nd, 2023, 11:24 am

এক রোপণে ৫ ফলনের ধান: আশা জাগাচ্ছে কৃষকদের

জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:

কুলাউড়ার হাজীপুর ইউনিয়নের জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী নতুন করে উদ্ভাবন করেছেন পঞ্চব্রীহি ধান। তিনি দীর্ঘদিন থেকে ধানের নতুন এ জাত নিয়ে গবেষণা চালিয়ে আসছেন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অস্ট্রেলিয়া হাই কমিশনের অর্থায়নে বিডিওএসএনের তত্ত্বাবধানে ১ বছর মেয়াদি IVEMRVM প্রকল্পের মাধ্যমে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষ করা হয়েছে কুলাউড়ার হাজীপুরে। একবার রোপনকৃত এসব চারা থেকে পর্যায়ক্রমে পঞ্চম বারের মতো সর্বশেষ ফলন পাওয়া গেছে পঞ্চব্রীহি ধানের। আগামীতে পঞ্চব্রীহি ধানের এ বীজ দেশের কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষে কাজ চলছে। বাণিজ্যিকভাবে পঞ্চব্রীহি ধানের বীজ সংগ্রহ করে নতুন জাতের ধানের এই ফসল ফলানোর আশায় রয়েছেন দেশের প্রান্তিক কৃষকরা।

জানা যায়, ২০১০ সালে প্রথম কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের কানিহাটি গ্রামে ২৫ বর্গমিটার জমিতে ২০টি ধানের জাত নিয়ে গবেষনা শুরু করেন ড. আবেদ চৌধুরী। পরে ৩ বছরে ২০টি ধানের জাত নিয়ে গবেষণায় দেখা যায় নির্দিষ্ট ধরণের এ জাত একইবার রোপণকৃত গাছে ৫ বার ফলন দিতে সক্ষম। স্থানীয় জাতের ধানের সাথে উন্নতমানের ধানের বীজ সংকরায়ন করে এই উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত পাওয়া যায়। নতুন পঞ্চব্রীহি ধানের জাত বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলে এখন ছড়িয়ে দেওয়ার উপযোগী হয়েছে বলেও জানান ড. আবেদ চৌধুরী। এজন্য তিনি সরকারের সহযোগিতা চান। এ ধান ৩ গুন কম খরচে উৎপাদন করা যাবে বলে জানান অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী এ জিন বিজ্ঞানী। পঞ্চব্রীহি ধান চাষে প্রথম বার ১১০ দিন পর ফলন আসে। পরের ফলন আসে ৪৫ দিন অন্তর। ১ বার বোরো, ২ বার আউশ ও ২ বার আমন ধানের ফলন পাওয়া যাবে। পঞ্চব্রীহি ধানে প্রথমবার হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয় ৪ টন। ধানের চারা প্রতি ৪ সে: মি: দূরত্বে রোপণ করতে হয়।

চলতি বছরের বিভিন্ন সময়ে কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর গ্রামে নতুন জাতের ধানের চাষাবাদ পরিদর্শন করেছেন সাবেক শিক্ষা সচিব মো: নজরুল ইসলাম খান, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব ও হাওর কৃষি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হক, কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড. সাঈদা সুলতানা, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি রেজিস্ট্রার মো. ইয়াছিন আলী, কুলাউড়ার ইউএনও মাহমুদুর রহমান খোন্দকার ও উপজেলা কৃষি অফিসার মো. জসিম উদ্দিন প্রমুখ। জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী তার উদ্ভাবিত ধানের সুফল সম্পর্কে তাদের নিকট বিস্তারিত তুলে ধরেন।

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব ও হাওর কৃষি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হক জানান, পঞ্চব্রীহি ধান আমাদের জন্য একটি আশার বিষয়। আমরা সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ড. আবেদ চৌধুরীর সাথে কাজ করতে চাই। সিলেটের কৃষিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এ উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানজিদা জামান বলেন, পঞ্চব্রীহি ধান থেকে নতুন কিছু শিখতে পেরেছি। এই গবেষণাটি একদম অতুলনীয়। IVEMRVM প্রকল্প সুপারভাইজার তাহমিদ আনাম চৌধুরী বলেন, পরিক্ষামূলকভাবে কানিহাটি এলাকায় বোরো মৌসুমের ফসল উত্তোলন করার পর একই চারা হতে এ বছরে পঞ্চমবারের মতো ফসল উত্তোলন করা হয়েছে। ফলনকৃত একটি ধানের চারা থেকে প্রতি বার ১০০ থেকে ১১০ গ্রাম ধানের ফলন পাওয়া গেছে।

জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী বলেন, ঋতু নির্ভরতা ধানের হাজার বছরের চরিত্র। পঞ্চব্রীহি ধানকে ঋতু নির্ভরতা থেকে বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। এ ধান সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও এ ধান উৎপাদনে কৃষকের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। দেশের পতিত জমিতে

সারা বছর পঞ্চব্রীহি ধানের ফসল উৎপাদনে আমি কৃষক ও তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।

কুলাউড়া উপজেলা কৃষি অফিসার মো: জসিম উদ্দিন জানান, আমি সম্প্রতি কুলাউড়ায় যোগদান করার পর একাধিকবার পঞ্চব্রীহি ধান ফলন মাঠে পরিদর্শন করেছি। উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের মাঝে পঞ্চব্রীহি ধানের চাষাবাদের জন্য জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরীর কাছে নতুন জাতের বীজ সংগ্রহের জন্য প্রস্তাব দিয়েছি। আশা করি নতুন উদ্ভাবনকারী এই ধান ব্যবসায়িকভাবে ফলনে কৃষকরা অল্প পুঁজিতে অধিক লাভবান হবেন।

উল্লেখ্য, ড. আবেদ চৌধুরী কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের কৃতি সন্তান। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে কৃষি বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা শেষে অস্ট্রেলিয়ায় জাতীয় গবেষণা সংস্থার প্রধান ধান বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করেন। এছাড়াও তিনি ডায়াবেটিস প্রতিরোধক রঙিন ভুট্টা ও লাল রঙের চাল উদ্ভাবন করেছেন।