September 23, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, November 7th, 2023, 9:32 pm

এটা রাজনৈতিক মঞ্চ নয়, আদালত কক্ষ: ট্রাম্পকে বিচারক

অনলাইন ডেস্ক :

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর পারিবারিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো জালিয়াতি করে তাদের সম্পদের মূল্য বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। একটি মামলাও দায়ের করা হয়। জালিয়াতির অভিযোগে ম্যানহাটানের আদালতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এই মামলাটি করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিটিয়া জেমস। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে মামলাটি দায়ের করা হয়। নিউ ইয়র্ক আদালতে সোমবার ডনাল্ড ট্রাম্পের ব্যবসায় জালিয়াতি সংক্রান্ত মামলা উঠেছিল।

এই মামলার সাক্ষ্য দেওয়ার সময় তাঁর পারিবারিক ব্যবসার পক্ষ নিয়ে বারবার বিচারকের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। প্রায় চার ঘন্টা ধরে সাক্ষ্য প্রদানের সময় ট্রাম্প তাঁর বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগের বিরোধিতা করেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ঋণ নেয়ার সময় নিজের ব্যবসা এবং সম্পত্তির মূল্য কমিয়ে দিয়েছেন। আবার সম্পত্তি বিক্রির সময় সেই মূল্য অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছেন। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টকে দোষী ঘোষণা করেছেন বিচারক। সোমবার সেই মামলার শুনানি ছিল। ট্রাম্প টেস্টিমোনিয়াল বা আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য কাঠগড়ায় উঠেছিলেন। সেখানে বিচারক সরাসরি তাকে প্রশ্ন করেছেন। বিচারক যে প্রশ্নই করেছেন, ট্রাম্প তার জবাব ঘুরিয়ে দিয়েছেন। অধিকাংশ সময় একই কথা বার বার বলে গেছেন। এ নিয়ে বিচারক আর্থার এনগোরানের সঙ্গে বেশ কয়েক বার তর্কাতর্কি হয় ট্রাম্পের। এর আগেও বিচার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলা এবং কোর্টরুমের অবমাননার দায়ে দুইবার জরিমানাও করা হয়েছে ট্রাম্পকে।

স্থানীয় সময় সোমবার ম্যানহাটনের ফেডারেল কোর্টহাউসে ট্রাম্প(৭৭) উপস্থিত হলে, তাঁকে ফ্লোরিডা এস্টেট মার-এ-লাগো, নিউ ইয়র্কের ট্রাম্প টাওয়ার এবং স্কটল্যান্ডে তাঁর গল্ফ কোর্সসহ বিভিন্ন সম্পত্তির মূল্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। এই সম্পত্তিগুলো বেশ কয়েকটির মূল্য বাড়িয়ে ধরা হয়েছিল। প্রসিকিউটররা বলেছেন, মোটা অঙ্কের ঋণ এবং বীমা নীতিগুলো সুরক্ষিত করার জন্য প্রতিষ্ঠানের বিবৃতিতে ইচ্ছাকৃতভাবে বাড়তি মূল্য ধরা হয়েছিল।

প্রসিকিউটররা ট্রাম্পকে আর্থিক বিবৃতি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি বলেন, ‘আমি আর্থিক বিবৃতির চেয়ে বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যবান।’ তিনি জানান, তাঁর নিজস্ব ব্রান্ডের কারণে সম্পত্তির মূল্য আরো বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু আর্থিক বিবৃতিতে কখনই তা একটি কারণ হিসেবে ধরা হয়নি। তিনি পৃথক এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমি যেকোনো ভবন দেখলেই বলতে পারি সেগুলোর মূল্য কত?’ আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় ট্রাম্পের সঙ্গে বিচারকের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এতে বিচারক আর্থার এনগোরনরও বেশ বিরক্ত হন।

বিচারক ট্রাম্পকে বলেন, ‘অনুগ্রহ করে শুধু প্রশ্নের উত্তর দিন, কোনো বক্তৃতা দেওয়ার দরকার নেই।’ আরেকটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পর বিচারক এনগোরন ট্রাম্পের আইনজীবীকে বলেন, ‘আপনি কি আপনার মক্কেলকে শান্ত করতে পারবেন? এটি কোনো রাজনৈতিক সমাবেশ নয়, এটি একটি আদালত কক্ষ। আমি আপনাকে তাঁকে শান্ত করার জন্য অনুরোধ করছি। আপনি না পারলে আমি করব।’ বিচারক এনগোরন মামলার ফলাফল জানাবেন। রায়ে ট্রাম্পের মিলিয়ন ডলারের জরিমানা এবং আসামিরা নিউইয়র্কে ব্যবসা করার ক্ষমতা হারাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রায়ের বিষয়ে ট্রাম্প আদালতে বলেছিলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে বিচারক আমার বিরুদ্ধে রায় দেবেন। কারণ তিনি সবসময় আমার বিরুদ্ধে।’ বিচারক এনগোরনও পাল্টা জবাবে বলেন, ‘আপনি যেভাবে চান আমাকে আক্রমণ করতে পারেন। কিন্তু দয়া করে প্রশ্নের উত্তর দিন।’

একপর্যায়ে বিচারক ট্রাম্পকে ‘ভাঙা রেকর্ড’হিসেবে অভিহিত করেন তিনি। ট্রাম্প আদালত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় মামলাটিকে আবার একটি ‘জালিয়াতি’ হিসাবে উল্লেখ করেন এবং বলেন, আমি বিশ্বাস করি আমি খুব ভালোভাবে সাক্ষ্য দিয়েছেন। গত মাসেই আদালতের বাইরে করা মন্তব্যের জন্য বিচারক ইতোমধ্যে ট্রাম্পকে ১৫ হাজার ডলার জরিমানা করেছেন। এই মামলায় ট্রাম্পের মেয়ে ইভানকা আজ বুধবার সাক্ষ্য দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। নিউইয়র্কের দেওয়ানি মামলাটি বেশ কয়েকটি আইনি লড়াইয়ের মধ্যে একটি যেখানে ট্রাম্প জড়িত।

মামলাটি নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিটিয়া জেমস করেছিলেন। যিনি ট্রাম্পের পুত্র এরিক, ডোনাল্ড জুনিয়র এবং ট্রাম্প সংস্থার অন্যান্য নির্বাহীদের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে বছরের পর বছর ধরে প্রতিষ্ঠানের সম্পদের মূল্য বাড়ানোর অভিযোগ এনেছিলেন। তবে সকল অভিযুক্তরাই এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। বিচারক ইতিমধ্যেই রায় দিয়েছেন, ট্রাম্পের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো জালিয়াতি করেছে এবং এর শাস্তি ঘোষণা করা হবে। প্রসিকিউটররা ২৫০ মিলিয়ন ডলার জরিমানা এবং গুরুতর ব্যবসায়িক নিষেধাজ্ঞা চাইছেন। সূত্র: বিবিসি