নিজস্ব প্রতিবেদক:
স্বাস্থ্য বিভাগ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে বিগত কয়েক বছর ধরেই পিছিয়ে থাকছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ১০ মাসে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ৩ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা খরচ করতে পেরেছে। আর বছরের মোট বরাদ্দের ৬ হাজার ১৯ কোটি টাকা অব্যয়িত আছে। চলতি অর্থবছরে স্বাস্থ্যসেবা খাতে মোট বরাদ্দ ৯ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা এবং ওই খাতে ৪৭টি প্রকল্প রয়েছে। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে গতি বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার ৫৫ দশমিক ১৮ শতাংশ। বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে এ হার সবচেয়ে বেশি। এ রকম স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতিতেও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের এডিবি বাস্তবায়ন অবস্থার উন্নতি হয়নি। বড় বরাদ্দের ১৫ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য বিভাগ সবচেয়ে পিছিয়ে। অন্যসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের গড় বাস্তবায়নের তুলনায়ও তা অনেক কম।
সূত্র জানায়, বিগত ১০ মাসে বৃহৎ বরাদ্দপ্রাপ্ত ১৫ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এডিপি বাস্তবায়নের গড় হার ৫৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ওই ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বাস্তবায়ন মাত্র ৩৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অথচ বরাদ্দ প্রাপ্তির দিক থেকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অবস্থান ষষ্ঠ। আর বরাদ্দ তালিকায় শীর্ষে থাকা স্থানীয় সরকার বিভাগের বাস্তবায়নের হারও ৬০ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এডিপি বাস্তবায়নের হার শিল্প মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে বেশি। ১০ মাসে বরাদ্দ করা অর্থের প্রায় ৮৩ শতাংশ অর্থ ব্যয় করতে পেরেছে ওই মন্ত্রণালয়।
সূত্র আরো জানায়, এডিপি বাস্তবায়নের দিক থেকে গত কয়েক বছর ধরেই পিছিয়ে থাকছে স্বাস্থ্য বিভাগ। গত ২০২০-২১ অর্থবছর বেশি বরাদ্দ পাওয়া ১৫ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে পিছিয়ে ছিল স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। বাস্তবায়ন ছিল ৫৮ শতাংশের কম। তারপরও আগামী অর্থবছরের এডিপিতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বরাদ্দ ৫ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক কমিটির (এনইসি) বৈঠকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বরাদ্দ বাড়িয়ে ১৫ হাজার ৮৫১ কোটি টাকা করা হয়। গত ১০ মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো মোট এক লাখ ১৯ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা ব্যয় করতে পেরেছে। সংশোধনের পর চলতি অর্থবছরের এডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা। সার্বিক এ বাস্তবায়ন চিত্রের বাইরে একক মাসের হিসাবেও এপ্রিলের বাস্তবায়ন অগ্রগতি সন্তোষজনক। যা প্রায় ১০ শতাংশ। মাসটিতে মোট ২০ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে মোট এক হাজার ৮২৮টি প্রকল্প রয়েছে।
এদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা খাতকে বরাদ্দের ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু বরাদ্দকৃত অর্থ অব্যয়িত থাকাকে হতাশাজনক। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা বেড়েছে। সরকারের এ সেবা গরিব মানুষেরই বেশি প্রয়োজন। গুরুত্ব বিবেচনা থেকে সরকার অন্য খাতে চাহিদামতো অর্থ না দিয়ে এ খাতে বরাদ্দ দিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিলেও বাস্তবায়নের এ হতাশাজনক চিত্র কেন তা গুরুত্ব দিয়ে খুঁজে বের করা প্রয়োজন। যদিও স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্পের পরিচালক চিকিৎসকদের করা হয়। সেখানে কিছু দুর্বলতা থাকতে পারে। কিন্তু সরকারি বিপুল বরাদ্দ সত্ত্বেও ব্যক্তির নিজের পকেট থেকে চিকিৎসা বাবদ ৭০ শতাংশ খরচ হয়। সরকারের মাত্র ৩০ শতাংশ। এ হার দক্ষিণ এশিয়ার সর্বনিম্ন। এর মধ্যেও যদি সরকারি বরাদ্দ অব্যয়িত থাকে তা অবশ্যই বড় ধরনের দুর্বলতা।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ