নিজস্ব প্রতিবেদক:
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বিপুলসংখ্যক কর্মচারীরই পদোন্নতির দীর্ঘ জটিলতায় হতাশ। প্রায় আড়াই বছর আগে বিভাগীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও পদোন্নতি হয়নি। দীর্ঘদিন ধরেই উচ্চমান সহকারীরা ফিডার পদ পূরণ করেও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা হতে পারছে না। অথচ নিয়ম অনুযায়ী যোগদানের ৫ বছর পর ফিডার পদ পূর্ণ হয় এবং সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) পদে পদোন্নতির যোগ্য হয়। সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা হওয়ার তালিকায় থাকা ১৭৫ জন পদোন্নতির জন্য এখন এনবিআরের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে ৩টি ব্যাচের মোট ১৭৫ জনের পদোন্নতি প্রক্রিয়া চলমান। ফিডার পদধারী ৩টি ব্যাচ কর্মচারীরা দেশের সব কাস্টম হাউস, ভ্যাট কমিশনারেট, আপিলাত ট্রাইব্যুনালে কমৃরত রয়েছে। তার মধ্যে ৬৩ জনের ডিপিসি হয়েছে। ইতোপূর্বে সরাসরি ফাইল পিএসসিতে পাঠানো হতো। কিন্তু ৬৩ জনের ক্ষেত্রে আগের নিয়ম ভেঙ্গে ফাইল পিএসসিতে না পাঠিয়ে আইআরডিতে পাঠানো হয়েছে। অনেক দিন ধরে আইআরডিতে ফাইল পড়ে ছিল। সম্প্রতি ওই ফাইল আবার এনবিআরে পাঠানো হয়েছে। পদোন্নতি প্রত্যাশীরা এনবিআরের সদস্য, প্রথম সচিব, দ্বিতীয় সচিবের কাছে শততবার ধরনা দিলেও তাদের আশা পূরণ হচ্ছে না। ৬৩ জনের ব্যাচে রয়েছে ৩ জন সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর, ৮ জন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, একজন ক্যাশিয়ার ও ৫১ জন সিপাই। সিপাই পদের ৫১ জন ৩ জানুয়ারি ২০১০, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদের ৮ জন ২০১৩ সালের ১২ মার্চ, সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর পদের ৩ জন ও একজন ক্যাশিয়ার ২০১৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি চাকরিতে যোগদান করেছে। পদোন্নতি বিধিমালা অনুযায়ী, সিপাই, সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর ও ক্যাশিয়ার পদে কর্মরত অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার পদে কর্মরত কর্মচারীদের ২০২০ সালের মার্চ মাসে ফিডার পদ পূর্ণ হয়। অর্থাৎ তারা এআরও পদে পদোন্নতির উপযুক্ত হয়।
সূত্র জানায়, ২০২০ সাল ও ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে ফিডার পদ পূর্ণ হওয়া ৮৩ জনের একটি ব্যাচ রয়েছে। বিভাগীয় পরীক্ষা উত্তীর্ণ ওই ৮৩ জনের এনবিআর ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্য চেয়েছে। সব তথ্য দেয়া হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও চূড়ান্ত জ্যেষ্ঠতা তালিকা ও ডিপিসি সভা না করে শুধু খসড়া জ্যেষ্ঠতা তালিকা করেই এনবিআর ফেলে রেখেছে। ওই ৮৩ জনের মধ্যে রয়েছে সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর ৫ জন, অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর ১৫ জন, কম্পিউটার অপারেটর ৮ জন, উচ্চমান সহকারী ৯ জন, ক্যাশিয়ার ৪ জন ও সিপাই ৪১ জন। আর ২৯ জনের একটি ব্যাচের এআরও পদে পদোন্নতি দিতে ২০২০ সালের ৬ জুলাই তথ্য চেয়ে চিঠি ইস্যু করে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ফিডার পদে চাকরিকাল পূর্ণকারী কর্মচারীদের কাছ থেকে তথ্য নেয়া হয়। প্রায় ২ বছর অতিবাহিত হলেও ওই ব্যাচটির ডিপিসি ও চূড়ান্ত জ্যেষ্ঠতা তালিকা করেনি এনবিআর। ওই দুই ব্যাচের কর্মচারীরাও দীর্ঘদিন ধরে এনবিআরের টেবিলে টেবিলে ঘুরছে।
সূত্র আরো জানায়, ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি এআরও পদে পদোন্নতি দিতে তথ্য চেয়ে চিঠি ইস্যু করা হয়। বিশেষ করে ২০২০ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ফিডার পদে চাকরিকাল পূর্ণকারী কর্মচারীদের কাছ থেকে ওই তথ্য নেয়া হয়। তার মধ্যে রয়েছে কর্মচারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার মূল সনদ, সার্ভিস বুক, ফিডার পদে চাকরি স্থায়ীকরণ সংক্রান্ত আদেশ, উচ্চশিক্ষা গ্রহণের অনুমতি বা আদেশ, ৫ বছরের বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন। ওসব তথ্য নিয়ে যাচাই শেষে ২০২০ সালের ১১ জুন এনবিআর পদোন্নতির জন্য যোগ্য ৬৩ জন ফিডার পদধারী মিনিস্টোরিয়াল কর্মচারীর ‘খসড়া জ্যেষ্ঠতা’ তালিকা প্রকাশ করা হয়। সব যাচাই শেষে ওই ৬৩ জনের বিভাগীয় পদোন্নতি ও নির্বাচন কমিটির (ডিপিসি) সভা শেষ করে। আগের নিয়ম অনুযায়ী ডিপিসি হওয়ার পর ফাইল পিএসসিতে পাঠানোর কথা। কিন্তু এনবিআর থেকে ওই ফাইল অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে (আইআরডি) পাঠানো হয়েছে। সেক্ষেত্রে সময়ের কালক্ষেপণ করা হচ্ছে।
এদিকে পদোন্নতিবঞ্চিতরা বলছেন, নিয়ম অনুযায়ী বিভাগীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ফিডার পদ পূর্ণ হলেই পদোন্নতি দেয়া হয়। সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদে এনবিআর সরাসরি (পিএসসির মাধ্যমে) ৫০ শতাংশ ও পদোন্নতির মাধ্যমে ৫০ শতাংশ পদ পূরণ করে থাকে। সাঁট লিপিকার কাম-কম্পিউটার অপারেটর, কম্পিউটার অপারেটর, উচ্চমান সহকারী, অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক ও সিপাই পদ থেকে ৫০ শতাংশ হারে পদোন্নতি দেয়া হয়। কাস্টম হাউস, ভ্যাট কমিশনারেট ও এনবিআরের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীরা ওই পদোন্নতির সুযোগ পায়। তার মধ্যে সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর, উচ্চমান সহকারী, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে ৫ বছর, অফিস সহকারী ৭ বছর ও সিপাই পদে ১০ বছর চাকরির বয়স হলে বিভাগীয় পরীক্ষার সুযোগ পায়। পদোন্নতির জন্য ফিডার পদধারী হয়।
এদিকে কর্মচারীদের পদোন্নতির বিষয়ে এনবিআরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ কথা বলতে রাজি নন। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা জানান, পদোন্নতির ফাইল প্রসেস হচ্ছে। দ্রুতই পদোন্নতির জট খুলবে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ