আগামী দিনগুলোতে খাদ্য সঙ্কট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খাদ্য ও কৃষি সংস্থায় (এফএও) একটি আন্তর্জাতিক বীজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘একটি আন্তর্জাতিক বীজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করুন, যা শতবর্ষ ধরে যেকোনো দুর্যোগে খাদ্য সংকট মোকাবিলা করতে সহায়তা করতে পারে।’
রবিবার গণভবনে এফএওর মহাপরিচালক কু ডংইউ এর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর গণমাধ্যম শাখা থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এসময় শেখ হাসিনা নেদারল্যান্ডসকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি ডিজিটাইজেশন এবং উদ্ভাবনের প্রকল্প গ্রহণের জন্য একটি সমন্বিত তহবিল গঠনের জন্য এফএও’র মহাপরিচালককে বলেন, বাংলাদেশ সেখানে অবদান রাখতে প্রস্তুত থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পরপরই বিশ্ব খাদ্য সম্মেলনে অংশগ্রহণের কথা স্মরণ করেন। তখন বাংলাদেশ মারাত্মক খাদ্য ঘাটতিতে ভুগছিল।
তিনি উল্লেখ করেন, তারপর থেকে মাত্র দুই বছর পর তার সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে সক্ষম হয়ে উঠেছে।
তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন যে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন করা তার প্রথম অগ্রাধিকার ছিল। কারণ বিপুল জনসংখ্যার দেশটি চাষযোগ্য জমির অভাবের কারণে প্রচণ্ড চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিল।
শেখ হাসিনা এ প্রসঙ্গে প্রশংসা করেন বলেন, বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ও গবেষকরা জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া- লবণ, খরা, জলাবদ্ধতাসহিষ্ণু বিভিন্ন প্রজাতির জাত উদ্ভাবনের মতো অসাধারণ কাজ করছেন।
তিনি বলেন,‘খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের পর, তার সরকার এখন সবার জন্য পুষ্টি নিশ্চিত করার দিকে মনোনিবেশ করছে।’
চলমান করোনা মহামারির মতো আসন্ন দুর্যোগ মোকাবিলায় তিনি খাদ্য সংরক্ষণ এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের ওপর জোর দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিভিএফ দেশগুলো, বিশেষ করে এসআইডিএস বা যেখানে চাষের জন্য কম; সেসব দেশের জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তিনি আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই পদ্ধতিতে তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য এফএও’র মহাপরিচালককে পরামর্শ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বারবার বলেন,তিনি দেশকে একটি ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত দেশে রূপান্তর করতে কাজ করে যাচ্ছেন, যেখানে মানুষ উন্নত জীবন পাবে।
এফএও মহাপরিচালক কু ডংইউ ঢাকায় ৩৬তম এফএও রিজিয়নাল কনফারেন্স ফর এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক (এপিআরসি)এর সফল আয়োজনে গভীর সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
তিনি প্রাথমিক পর্যায়ে খাদ্যশস্য, শাকসবজি, প্রাণিজ প্রোটিন ইত্যাদি সব ধরনের খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।
তিনি বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় তার দীর্ঘ প্রতিশ্রুতি এবং এফএও’র-এর সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।
কু ডংইউ আরও শক্তিশালী, উদ্ভাবনী ও ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে বিদ্যমান সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন। এবং আরও বেশি করে খাদ্য ও অর্থকরী ফসল উৎপাদনে প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় রাজনৈতিক সমর্থনের প্রশংসা করেন।
তিনি শেখ হাসিনার উন্নয়ন কৌশলের পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়নে তার অগ্রণী ভূমিকার কথাও স্বীকার করেন, যা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রশংসিত।
এছাড়াও তিনি ২০২০ সালের অক্টোবরে রোমে অনুষ্ঠিতব্য একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানান।
এফএও’র মহাপরিচালকের সঙ্গে এ সময় উপস্থিত ছিলেন এফএও সদর দপ্তর (রোম) এর প্রধান অর্থনীতিবিদ ম্যাক্সিমো তোরো, জং-জিন কিম, সহকারী মহাপরিচালক, এফএও আঞ্চলিক অফিস, ব্যাংকক এবং ঢাকায় এফএও প্রতিনিধি রবার্ট ডি সিম্পসন।
এসময় কৃষিমন্ত্রী ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক, রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম এবং রোমে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং এফএও, আইএফএডি এবং ডব্লিউএফপি, রোমে স্থায়ী প্রতিনিধি মো. শামীম আহসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
—ইউএনবি
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম