April 26, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, January 16th, 2023, 9:11 pm

এবারও ঠিক থাকছে না এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তা ব্যয়ের লক্ষ্য

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

কোনো অর্থবছরই মূল এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তা ব্যয়ের লক্ষ্য ঠিক থাকেনি। ফলে পরবর্তী সময়ে অর্থবছরের ৬ মাস যেতে না যেতেই ছেঁটে ফেলতে হয় বড় অঙ্কের বরাদ্দ। গত অর্থবছর (২০২১-২২) বৈদেশিক সহায়তার ১৫ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা কাটছাঁট করা হয়েছিল। চলতি অর্থবছর মোট বরাদ্দ ছিল ৯৯ হাজার ২৪ কোটি টাকা। তা থেকে বরাদ্দ কমিয়ে সংশোধিত বরাদ্দ ধরা হয় ৭২ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। তার আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে বরাদ্দ কমানোর রেকর্ড তৈরি হয়। করোনা মহামারির কারণে ওই অর্থবছর ১৭ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা বাদ দেয়া হয়। ওই সময় মূল এডিপিতে ৭০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল আর সংশোধিত বরাদ্দ দাঁড়ায় ৫২ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা। তাছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে মূল এডিপিতে ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও এডিপি সংশোধনের সময় ৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা কমানো হয়। ৬২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরেও ৯ হাজার কোটি টাকা বাদ দেয়া হয়। আর২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৮ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা কমানো হয়েছিল। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মূলত সমন্বয়ের অভাবেই এমনটা হচ্ছে। সংস্থাগুলো প্রকল্প প্রস্তাব পাঠাতে দেরি করে বা ঠিকমতো প্রস্তাব আসে না। আবার পরিকল্পনা কমিশন যেসব সুপারিশ দেয় সেগুলো প্রতিপালন করে আরডিপিপি (সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) পাঠাতে দেরি করে। ফলে সবকিছু মিলিয়ে অনেক সময় চলে যায়। ইআরডি, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা এবং পরিকল্পনা কমিশনের মধ্যে ত্রিমুখী সমন্বয় জরুরি। তাছাড়া ঋণদাতা বিভিন্ন দেশ ও সংস্থাও প্রকল্প অনুমোদন এবং বিভিন্ন বিষয়ে ক্লিয়ারেন্স দিতে দেরি করে। পাশাপাশি বাস্তবায়ন পর্যায়ের বিভিন্ন জটিলতা তো রয়েছেই।
সূত্র জানায়, বৈদেশিক সহায়তার হিসাব থেকে এবারও বড় অঙ্কের অর্থ কাটছাঁট হচ্ছে। বাদ যেতে পারে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি) থেকে ওই বরাদ্দ কমতে পারে। মূল এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তা (ঋণ ও অনুদান) ৯২ হাজার ২০ কোটি টাকা খরচের লক্ষ্য আছে। সেখান থেকে কমিয়ে বরাদ্দ ৮০ হাজার ২০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ইআরডির কাছ থেকে চূড়ান্ত হিসাব চেয়েছে। ইতোমধ্যেই সংশোধিত এডিপির একটি খসড়া হিসাব তৈরি করা হয়েছে। সেটি আরো যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মন্ত্রণালয়গুলোয় পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে কিছু মন্ত্রণালয় বরাদ্দ বাড়ানোর এবং কিছু মন্ত্রণালয় আরো কমানোর অনুরোধ করেছে। তবে অধিকাংশ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত বরাদ্দের বিষয়টি এখনো জানানো হয়নি।
সূত্র আরো জানায়, অর্থবছর শুরুর আগেই বিভিন্ন প্রকল্পের অনুকূলে বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ বাড়িয়ে নেয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে বাস্তবায়ন পর্যায়ে নানা জটিলতা দেখা দেয়। তার মধ্যে অন্যতম হলো সঠিক সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়া প্রকল্প গ্রহণ, প্রকল্প তৈরিতে দুর্বলতা এবং দক্ষতার অভাব। যেনেতেনভাবে প্রকল্প তৈরি, বাস্তবায়ন পর্যায়ে কার্যকর তদারকির অভাব, নিয়মিত ও কার্যকরভাবে পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) এবং পিএসসি (প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটি) বৈঠক না হওয়া। তার সঙ্গে জমি অধিগ্রহণে জটিলতা, দরপত্র প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা এবং উন্নয়ন সহযোগীদের আমলাতান্ত্রিক মনোভাব। তাছাড়া প্রয়েজনীয় অর্থছাড় না হওয়া, প্রকল্প পরিচালকদের অদক্ষতা, ঘন ঘন প্রকল্প পরিচালক বদলি ইত্যাদি কারণেও বৈদেশিক সহায়তার টাকা ব্যয় করা সম্ভব হয় না।।
এদিকে বিগত ১৪ থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ নির্ধারণে ইআরডি ৪ দিনের সিরিজ বৈঠক করেছে। ওসব বৈঠকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ১১৮টি সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করা হয়। ইআরডির সচিব শরিফা খান ওসব বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। সেখানেই কোন প্রকল্পের বিপরীতে কার কত চাহিদা তা জানতে চাওয়া হয়। ওই সময় মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরাসহ প্রকল্প পরিচালকরাও উপস্থিত ছিলেন। তারও আগে লিখিতভাবে আরএডিপিতে বরাদ্দ চাহিদা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপরও এখনো সঠিক বরাদ্দ নির্ধারণ করা যায়নি এখনো।
অন্যদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, সব সরকারেরই বাজেটকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানোর প্রবণতা থাকে। ওই অবস্থা থেকেই বছরের শুরুতেই বরাদ্দ বাড়িয়ে ধরা হয়। তাতে বাজেটে বিশ্বস্ততা নষ্ট হচ্ছে। আর যেসব মন্ত্রণালয় বরাদ্দ চেয়ে নিলেও পরবর্তী সময়ে ঠিকমতো প্রকল্প বাস্তবায়ন করে না। কর্মকর্তারা জানে অর্থবছরের মাঝপথে বরাদ্দ কমানো যাবে। কমিয়ে নেয়া বরাদ্দও তারা খরচ করতে পারে না। সেক্ষেত্রে কোনো জবাবদিহি নেই। ফলে বছরের পর বছর একই চিত্র বিরাজ করছে।