নিজস্ব প্রতিবেদক:
এবার দেশজুড়েই বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তাতে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। কিন্তু ধানের দাম নিয়ে হতাশ কৃষক। তবে আবহাওয়া ভালো থাকায় স্বস্তিতে ধান কাটছে কৃষক। বর্তমানে হাওরে ধান কাটার ধুম চলছে। কৃষকরা বলছেন, গত কয়েক বছর মেঘ-বৃষ্টির কারণে ধান কাটতে তাদের কষ্ট হয়েছে। বৃষ্টির মধ্যে কোমড় পানিতে নেমে ধান কাটতে হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে চোখের সামনে ক্ষেতের পাকা ধান তলিয়ে যেতে দেখেছে। তবে এবারের মতো রোদেলা ভালো বৈশাখ আগে কোনো বছর তারা পায়নি। এ বছর ধান কাটায় কোনো বৃষ্টি নেই, অনেক রোদ। ফলনও ভালো। অনুকূল আবহাওয়া পেয়ে হাওরে ধান কাটতে ব্যস্ত দিন পার করছেন কৃষকরা। ইতোমধ্যে কোনো হাওরের ৯০ ভাগ আবার কোনো হাওরের ৬০ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। ঝড় বৃষ্টি না এলে আর ৪/৫ দিনের মধ্যে হাওরবাসী মাঠের পুরো ধান গোলায় তুলতে পারবে। তাছাড়া বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং সমৃদ্ধ জলাভূমির নাম চলনবিল। নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলার বড় একটি অংশ জুড়ে এ বিলের অবস্থান। বর্ষা মৌসুমে পানিতে পরিপূর্ণ থাকলেও শীতে শুকিয়ে যায়। তখন থেকে এ বিলে নানান শষ্য চাষ হয়। পুরো চলন বিলজুড়েই এখন চলছে বোরো কাটার মহোৎসব। কৃষক এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে দেশের হাওরাঞ্চলে বোরো ধান কাটার ধুম লেগেছে। তবে শ্রমিক সংকটে ধান কাটা কারণে ব্যাহত হচ্ছে। ফলে কৃষকের ধান গোলায় তোলা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। আর ধান কাটা শ্রমিকরাও মজুরি নিচ্ছেন অতিরিক্ত। তা নিয়ে বিপাকে পড়েছে কৃষকরা। তারপরএ থেমে নেই ধান কাটার ধুম। একই সাথে ইরি-বোরো ধান কাটা-মাড়াইয়ে ব্যস্ত কৃষক। গেল বছরের তুলনায় এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফসলের বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে সিলেটে হাওর এলাকায় ৮৬ শতাংশ, নন হাওরে ৫৯ শতাংশসহ মোট ৭০.৩ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। মৌলীবাজারে হাওর এলাকায় ৯৫ শতাংশ, নন হাওরে ২৫ শর্তাশসহ মোট ধান ৫৭. ১ শতাংশ, হবিগঞ্জে হাওর এলাকায় ৭৬ শতাংশ, নন হাওরে ২৫ শতাংশসহ মোট ৪৪.৭ শতাংশ ও সুনামগঞ্জে ৯৪ শতাংশ, নন হাওরে ৩৪ শতাংশসহ মোট ৭৮.৪ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে।
আগামী কয়েক দিনের মধ্যে হাওরের শতভাগ ধান কাটা মাড়াই হয়ে যাবে। এবার সিলেট অঞ্চলের হাওরগুলোতে প্রায় দুই হাজার হারভেস্টার ধান কাটা মাড়াইয়ের কাজ করছে। চলতি মৌসুমে সিলেট বিভাগে ৪ লাখ ৯০ হাজার ৫৭৭ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলায় আবাদ হয়েছে সর্বোচ্চ। বর্তমানে সিলেটের ৪ জেলার হাওরে প্রায় দুই হাজার হারভেস্টার ধান কাটা মাড়াইয়ের কাজ করছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলার হাওরে এক হাজার হারভেস্টার রয়েছে। সূত্র জানায়, এবার ইরি-বোরো ধান কাটা মাড়াইয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে।
শ্রমিক দিয়ে ধান কাটার পুরোনো প্রথা ভেঙে ধান কাটায় যোগ হয়েছে আধুনিক কৃষি যন্ত্র হারভেস্টার বা ধান কাটার মেশিন। ছোট বড় সকল হাওরেই মেশিন দিয়ে ধান কাটা মাড়াই চলছে। তবে এখনো শ্রমিক দিয়ে ধান কাটার প্রথাও রয়েছে। কিন্তু হাওরে আগের মতো এখন আর ধান কাটার শ্রমিক দেখা যাচ্ছে না। এবার ব্রি-২৮ জাতের ধানে চিটা দেখা দেয়ায় ফলন কম হয়েছে। এর বাইরে মোটা জাতের হাইব্রিড ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। গেল বছরের চেয়ে এবার ফলন ভালো হয়েছে ব্রি-২৯ জাতের ধানেরও। কিছুকিছু এলাকায় শিলা বৃষ্টির ফলে সামান্য ক্ষতি হলেও সার্বিক দিক বিবেচনায় এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। সূত্র আরো জানায়, হাওরজুড়ে এত ধান, কিন্তু হাট-বাজারে ধানের দাম পাচ্ছেন না কৃষক। বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রতিমণ ধান ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার পঞ্চাশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কৃষকদের এতে সরকারের দেয়া দর থেকে ১শ’ পঞ্চাশ থেকে ২শ’ টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে। প্রতি বছরই সার-বীজ, সেচ, ডিজেল ও কৃষি পণ্যমূলের বৃদ্ধি সাথে ধান উৎপাদন খরচ ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও ধানের উৎপাদন খরচের তুলনায় ধানের দাম কম। এদিকে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, এ বছর বোরোতে রেকর্ড পরিমাণ ২ কোটি ২০ লাখ টনের মতো চাল উৎপাদন হতে পারে। আর ইতোমধ্যে হাওরে এখন পর্যন্ত ৯০ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। চলমান ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৯ লাখ ৭৬ হেক্টর জমি। আর আবাদ হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ হেক্টর জমিতে। এবছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ কোটি ১৫ লাখ মেট্রিক টন চাল। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১০ লাখ টন বেশি চাল উৎপাদন হতে পারে। আর মেশিনে ধান কাটায় হাওরের ধান দ্রুত কাটা সম্ভব হয়েছে। এ মুহূর্তে হাওরের ৭টি জেলায় ৩৮০০ কম্বাইন হারভেস্টার ও ৬৭০টি রিপার দিয়ে ধান কাটা চলছে।
একইসঙ্গে ধান কাটায় খরচও কম হচ্ছে। তাছাড়া কৃষকেরা ভালো দাম পাচ্ছেন। ধান কাটার পরই ক্ষেত থেকে ৯শ থেকে ১১শ ও ১২শ টাকা মণ দরে কৃষকেরা ধান বিক্রি করতে পারছেন। হাওরভুক্ত ৭টি জেলা সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওরে এবছর বোরো আবাদ হয়েছে ৪ লাখ ৫২ হাজার হেক্টর জমিতে। আর এই ৭টি জেলায় মোট বোরো আবাদ হয়েছে (হাওর ও হাওরের বাইরে উচুঁ জমি মিলে) ৯ লাখ ৫৩ হাজার হেক্টর জমিতে, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪০ লাখ টন চাল।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি