November 15, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, October 28th, 2021, 1:27 pm

এবার শীত হানা দিতে পারে প্রচন্ডভাবে

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বর্ষাকাল বিদায় নিয়েছে। হেমন্ত আসতেই দেশে ঢুকছে উত্তুরে হিমেল হাওয়া। কমতে শুরু করেছে দিন ও রাতের তাপমাত্রা। কুয়াশার চাদর ঢেকে নিচ্ছে গ্রামের ভোর-সন্ধ্যার প্রকৃতি। শিশির ভেজা ঘাস, শেষ রাতের ঠান্ডা বাতাস আর কুয়াশার আবেশ জানান দিচ্ছেÑশীত এলো বলে! ভোর রাতে হালকা কম্বল বা চাদর গায়ে মুড়ে না দিলে ওম-উষ্ণতা মিলছে না। গ্রামে শীতের কাপড় নিয়ে অনেককেই বেরুতে দেখা যাচ্ছে বিকালে। আলমিরায় বন্দি থাকা গরম কাপড়গুলো আলনায় স্থান ঠাঁই নিচ্ছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত কয়েক দিন ধরেই দিনের তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে। আর রাতের তাপমাত্রা নেমে আসছে ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে। সোমবার দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চাঁদপুরে, ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর রাতের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে তেঁতুলিয়ায়, ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানীতে সোমবার বিকালে বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পর শীত শীত আমেজ অনুভূত হয়। অনেক স্থানে আকাশ ছিল হালকা মেঘময়। আগামী দুদিনে এ অবস্থার কোনো পরিবর্তন দেখছে না আবহাওয়া অফিস। তবে বর্ধিত পাঁচ দিনে হালকা পরিবর্তন হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, সাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। লঘুচাপটির বর্ধিতাংশটি বিস্তৃত রয়েছে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত। এ অবস্থায় আজ চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে।
এদিকে বিজ্ঞানীরা পূর্বাভাস দিচ্ছেন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এবছর প্রচ- শীত হানা দিতে পারে। মালদ্বীপের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ফুলব্রাইট ইউএস স্কলার অধ্যাপক ড. রাশেদ চৌধুরী বলেন, লা নিনা ও দুর্বল পোলার ভরটেক্সের কারণে বাংলাদেশসহ এশীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে এবারের শীতকালে স্বল্প সময়ের জন্য হঠাৎ হঠাৎ মাত্রাতিরিক্ত ঠান্ডা অনুভূত হতে পারে। পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে প্রক্রিয়াটি যুক্ত। পোলার ভরটেক্স বাধাপ্রাপ্ত হলে অথবা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় চলতে না পারলে ইউরোপ ও এশিয়ার বেশির ভাগ অঞ্চলে ঠান্ডা বায়ু ছড়িয়ে পড়ে এবং চলতি বছর এ কারণে বাংলাদেশে শীতের কোনো কোনো সময় প্রচ- ঠান্ডা পড়তে পারে। ঠিক এর বিপরীত কারণেই এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপে স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে বেশি গরম ছিল। পোলার ভরটেক্স হলোÑপৃথিবীর উভয় মেরু অঞ্চলের বিশাল অঞ্চলের লঘুচাপ এবং ঠান্ডা বায়ুর এলাকা। এটা সব সময় মেরু অঞ্চলের কাছাকাছি অবস্থান করে এবং গ্রীষ্মে দুর্বল হয়ে যায় ও শীতে শক্তিশালী হয়। মেরু অঞ্চলের কাছের বায়ুম-লে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘুরে মেরু অঞ্চলের পরিবেশ ঠান্ডা রাখে। অনেকসময় উত্তর গোলার্ধের ভরটেক্সের সম্প্রসারণ ঘটে এবং জেট স্ট্রিমের (খুবই ঠান্ডা বায়ুপ্রবাহ) সঙ্গে ঠান্ডা বায়ু দক্ষিণ দিকে পাঠিয়ে থাকে।
এদিকে ভারতীয় আবহাওয়াসংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ সংস্থা ডিটিএনের ভাইস প্রেসিডেন্ট রেন্নি ভেন্ডওয়েগে জানিয়েছেন, এবছর ভারত-বাংলাদেশসহ গোটা দক্ষিণ ও উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঠান্ডা পড়বে। অন্যান্য বছরের চেয়ে এই শীতের মৌসুমে গড় তাপমাত্রা কমবে অন্তত ৩ ডিগ্রি। লা নিনার প্রভাবেই এবার কনকনে ঠান্ডার কবলে পড়বে মানুষ। তাপমাত্রা সবচেয়ে নেমে যেতে পারে নতুন বছরের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি মাসে।
পরিবেশবিদরা বলছেন, নিরক্ষীয় বায়ুর প্রভাবে সমুদ্রের গভীর থেকে শীতল ¯্রােত তৈরি হচ্ছে। প্রশান্ত মহাসাগরে ইতোমধ্যে এই ¯্রােত দেখা দিয়েছে। যার জন্য উত্তর নিরক্ষীয় অঞ্চলের উষ্ণতা কমতে শুরু করে। এবার সেই লা নিনার প্রভাবেই রেকর্ড ভেঙে পড়বে ঠান্ডা।
এর উপসর্গ অবশ্য ইতমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। বৃষ্টির পরই দেশে উত্তর-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রবাহ শুরু হয়েছে। সাইবেরিয়া থেকে আসা শীতল বাতাস হিমালয়ে ধাক্কা খেয়ে বিভক্ত হয়ে উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্ব দিক থেকে বাংলাদেশে ঢুকছে। এ বাতাস শুষ্ক। অর্থাৎ বাতাসে আর্দ্রতা কম। ফলে, কিছুটা ঠান্ডার অনুভূতি পাওয়া যায়।
সাধারণত, তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলে তা মানুষের জন্য স্বস্তিদায়ক বলে বিবেচিত হয়। এটা গরমও না, ঠান্ডাও নাÑএমন একটা অবস্থা। সময় গড়ালে এই তাপমাত্রা আরও কমবে।
জানা যায়, ঢাকায় নভেম্বরে তাপমাত্রা থাকে ১৮ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। ডিসেম্বরে থাকে ১৪ থেকে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে তাকে ‘কোল্ড ওয়েভ’ বা শ্বৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।
আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, সাধারণত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারিকে বলা হয় শীতকাল। এই পুরো সময় দেশের উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্ব দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়। অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস বর্ষার শেষ ও শীত শুরুর অন্তর্বর্তীকাল।
আবহাওয়াবিদেরা বলেন, এ সময় আকাশ বেশি মেঘলা থাকে বলে বায়ুতে আর্দ্রতা বেশি থাকে। সে হিসাবে এ সময় কিছুটা ঠান্ডা অনুভূত হলেও একে ঠিক শীতকাল বলা যাবে না।
এ সময় পুরোপুরি শীত না পড়ার আরেকটি কারণ হলো বায়ুপ্রবাহ স্থির নয়। অর্থাৎ এ সময়ে উত্তর-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু আসে। আবার দক্ষিণাংশে পুবালি ও পশ্চিমা বায়ুও সক্রিয় রয়েছে। এসব বাতাসের সংযোগে দেশের দক্ষিণাংশে বৃষ্টি হয়।