November 15, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, May 24th, 2022, 2:17 pm

এ বর্ষায়ও ঢাকায় জলাবদ্ধতার আশঙ্কা, নেই কোনো স্থায়ী সমাধান

ফাইল ছবি

বর্ষা আসার সাথে সাথে ঢাকাবাসী প্রতিবছরই জলাবদ্ধতার সমস্যায় পড়ে। মেগা সিটির দীর্ঘদিনের এই সমস্যা সমাধানের জন্য এখনও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শহরের রাস্তা থেকে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাকে সম্পৃক্ত করে একটি সমন্বিত মহাপরিকল্পনা নেয়া উচিত ছিল।

দুই সিটি করপোরেশনের দাবি, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন, বক্স কালভার্ট নির্মাণ ও খাল ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান থাকায় এ বছর জলাবদ্ধতা কম হবে।

ইউএনবির সাথে আলাপকালে কয়েকজন নগরবাসী আসন্ন বর্ষায় জলাবদ্ধতার সমস্যা নিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।

মগবাজার এলাকার বাসিন্দা মো. রহিমুল্লাহ বলেন, ‘নগরীর বিভিন্ন সেবা সংস্থার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। এই রাস্তায় চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়বে কারণ বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টি হলেই এগুলো জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে।’

মালিবাগ এলাকার গৃহবধূ মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়া-আসা করতে তেজগাঁও যেতে হবে। সেখানে একটি মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে এবং নির্মাণ কাজের কারণে পুরো এলাকাটি দুর্গম হয়ে পড়েছে।’

জলাবদ্ধতার কারণে আসন্ন বর্ষায় সেখানে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনর পদক্ষেপ

এবারের বর্ষায় রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৪৬টি হটস্পট চিহ্নিত করেছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ১০৪ ও উত্তরের ৪২টি। এসব স্থানে বিগত বছরগুলোয় বৃষ্টির পানি জমেছিল। তার আলোকেই চিহ্নিত করা হয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) জানায়, জলাবদ্ধপ্রবণ ১০৪টি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯৯টির বেশি স্থানের সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর মধ্যে কিছু অংশের কাজ চলছে। এছাড়া জলজট নিরসনে ড্রেন, বক্স কালভার্ট ও খাল পরিষ্কারের কার্যক্রম চলছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির অতিরিক্ত জলাবদ্ধতাপ্রবণ ৩২টির বেশি এলাকা মতো। পল্টন, শান্তিনগর, বেইলি রোড, কাকরাইল,গোপীবাগ, কমলাপুর, টিকাতলী, আগাসাদেক রোড, আগামাসি লেন, আব্দুল হাদি লেন, ইস্কাটন রোড, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয় এলাকা, বাংলাদেশ সচিবালয়, ইস্কাটন রোড, নিউমার্কেট, বাটা মোড়, ধানমন্ডি ঈদগাহ রোড, ঝিগাতলা, নাজিম উদ্দিন রোড, নবাবগঞ্জ পার্ক, আজিমপুর, কে এম দাস লেন সংলগ্ন রাস্তা, আরকে মিশন রোড ও অভয়দাস লেন গোপীবাগ বাজার রোড ও পুরান ঢাকার কিছু এলাকা।

অপরদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) সূত্রে জানা যায়, গত বছর জলাবদ্ধপ্রবণ ১০৩টি স্থান ছিল। এবার এসব স্থানের মধ্যে ৬১টির সংস্কার করা হয়েছে। বাকি ৪২টি স্থান সংস্কারের কার্যক্রম চলছে। এছাড়া ড্রেন ও খালের পরিষ্কারের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

ঢাকা উত্তরের অতিরিক্ত জলাবদ্ধ এলাকা প্রায় ৩০টির মতো- মিরপুর-১০, মিরপুর-১৩, মিরপুর সাংবাদিক কলোনি এলাকা, মিরপুর কালশী, বিমানবন্দর সড়কের আর্মি স্টেডিয়াম থেকে বনানী পর্যন্ত, শহীদ আব্দুর ওয়াব রোড, মিরপুর শেওরা পাড়া, কাজী পাড়া, মনিপুর, মধুবাগ, বাংলামোটর, মালিবাগ, মোহাম্মদপুর লালমাটিয়, কারওয়ান বাজার টিসিবি ভবন সংলগ্ন এফডিসি এলাকা পর্যন্ত, নাখালপাড়া, নিকুঞ্জ-১, ২, গ্রীন রোড, তে বসুন্ধরা সিটির পিছনে তেজতুরি বাজার, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, কুড়িল, বাড্ডা ও কুড়িল নতুন বাজার এলাকা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ (অতিরিক্ত সচিব) ইউএনবিকে বলেন, গত বছর দক্ষিণ সিটিতে ১০৪টি স্পটে পানি জমাট থাকতো। এই জায়গা গুলো চিহ্নিত করে এবার সংস্কার কাজ করেছি। ১০৪টির মধ্য ৫টি স্পট বাকি আছে। এই স্পট ১৯ মের মধ্যে শেষ হবে। এছাড়া ১৫ কিলোমিটার খাল পরিষ্কার করেছি। আমরা আশা করছি এবার বর্ষায় গতবারের তুলনায় সহনীয় পর্যায়ে থাকবে।

ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, এবারের জলাবদ্ধতাপ্রবণ স্থানগুলো চিহ্নিত করেছি। জলাবদ্ধতাপ্রবণ এলাকাগুলো সংস্কারের কাজ চলছে। এছাড়া খাল সংস্কারের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে যুক্ত হওয়া নতুন ওয়ার্ডগুলোতে জলাবদ্ধতা হতে পারে। কারণ এসব এলাকায় এখনও কাজ শুরু হয়নি।

তিনি আরও বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে ডিএনসিসির ১০টি অঞ্চলের জন্য ১০টি র্যাপিড অ্যাকশন টিম গঠন করা হবে। যারা অঞ্চলভিত্তিক সমস্যা সমাধানে দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে। তবে বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবার জলাবদ্ধতা অনেক কম হবে বলে প্রত্যাশা করছি।

ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আমি যদি ঢাকা শহরের কথা বলি। সেখানে খালগুলো হস্তান্তর করা হয়েছে। হস্তান্তরের পর তারা কিছু অবৈধ উচ্ছেদ করেছে। কিছু কিছু খাল সংস্কার করেছে। তাতে করে গত বছর আমরা অবস্থার কিছু উন্নতি লক্ষ্য করেছি। এবছর এই প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।

তিনি বলেন, দুই সিটিকে আমরা ইতোমধ্যে নির্দশনা দিয়েছি। একটি খালেও যেন জলাবদ্ধতা তৈরি না হয়। খালের পানি যেন দ্রুত নিষ্কাশন ব্যবস্থা করবে। পানি আটকে যাওয়ার অন্যতায় কারণ খালে ময়লা ও অব্যবস্থাপনার কারনে পানি নিষ্কাশন হয় না।

তিনি আরও বলেন, এখনও ঢাকা শহরের খালগুলোকে আমরা শতবাগ সংস্কার করতে পারিনি। এছাড়া বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, ধলেশ্বরী ও বালু নদী এসব যে নদী গুলো আছে। সেগুলো অতি বৃষ্টির কারণে পানি অবার ফ্লু হয়ে যায়। যার কারণেও ঢাকা শহরে পানি নদীতে যেতে পারে না। ঢাকার পানি দ্রুত নিষ্কাশনের জন্য খাল সংস্কার করা হবে।

মন্ত্রী বলেন, আমাদের বড় বড় নদীগুলোতে ড্রেজিং এর কাজ চলছে। আমরা নিচু দেশ হিসেবে অনেক নদীর চ্যানেল রয়েছে, এতে আমাদের অনেক সুযোগ রয়েছে। মাঝে মাঝে আমাদের দেশে বন্যা হয়। বন্যা হলে সব সময় অভিশাপ নয় আশীর্বাদও হয়। কারণ অনেক পলি বয়ে নিয়ে আসে। আমাদের ভূমি উর্বর, মানুষ সচেতন, সঠিক নেতৃত্ব যে কারণে আমরা অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়য়ের নগর ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মোহাম্মদ ইউএনবিকে বলেন, বর্ষা আসলেই শুধ ড্রেনেজ ও খাল পরিষ্কার করলেই হবে না। আমাদের দরকার স্থায়ী কোনো প্ল্যান। অস্থায়ী ও ছোট আকাড়ে পরিকল্পনা দিয়ে জলাবদ্ধতার সাময়িক সমাধান হলেও টেকসই সমাধান হবে না।

এই নগর পরিকল্পনাবিদ আরও বলেন, ঢাকার দুই সিটিকে স্হায়ীভাবে জলাবদ্ধতামুক্ত করতে হলে বড় আকাড়ে কর্মপরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। দুই সিটিতে চিহ্নিত জলাবদ্ধতা এলাকা ছাড়াও পুরো এলাকা নিয়ে দেখতে হবে বৃষ্টি হলে পানি কীভাবে নিষ্কাশন করা যাবে, সেজন্য সমন্বিত প্রদক্ষেপ নিতে হবে। সকল সংস্থা একসাথে কাজ করলে সমাধান সম্ভব। যদি স্থায়ী বৃহৎ কোনো পরিকল্পনা হাতে না নেয়া হয় তাহলে একবার এক এলাকায় পানি জমাট কমলেও আবার নতুন করে আরেকটি এলাকায় সমস্যা শুরু হবে।

—ইউএনবি