April 23, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, June 3rd, 2022, 9:30 pm

ওয়ার্কওভারের মাধ্যমে পুরনো কূপ থেকে গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলোর পুরনো কূপ ওয়ার্কওভারের মাধ্যমে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) ২০টি কূপ, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেডের (বিজিএফসিএল) ১২টি কূপ এবং সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের (এসজিএফএল) ১৪টি কূপ ওয়ার্কওভার ও ড্রিলিংয়ের কাজ করা হবে। নিজস্ব ২০টি কূপসহ বাপেক্স বিজিএফসিএলের ১২টি কূপ ওয়ার্কওভার ও ড্রিলিংয়ের কাজ করবে। আর বাপেক্স এবং বাংলাদেশে তেল, গ্যাস অনুসন্ধান ও উন্নয়নে নিয়োজিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানি শেভরন এসজিএফএলের ১৪টি কূপ ওয়ার্কওভার ও ড্রিলিংয়ের কাজ করবে। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের ৪৬টি গ্যাস কূপ ওয়ার্কওভার তথা পুনঃখনন, অনুসন্ধান ও উন্নয়নের মাধ্যমে দৈনিক ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এই কূপগুলো থেকে এখন দিনে ৮৬৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে। বর্তমানে দেশের সব গ্যাসক্ষেত্র থেকে দিনে ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন হয়। আর দেশে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ৩ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। জ¦ালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অর্থনৈতিক কর্মকা- বাড়ায় দেশে গ্যাসের চাহিদাও বাড়ছে। কিন্তু গত দুই দশকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় নতুন গ্যাসক্ষেত্র বাড়েনি। ফলে গ্যাসের চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে ব্যবধান বেড়েছে। ফলে চাহিদা সামাল দিতে সরকারকে ব্যয়বহুল এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে। দেশীয় গ্যাস উৎপাদনে যে খরচ হয় এলএনজি আমদানিতে তার ৭ থেকে ১০ গুণ বেশি খরচ হয়। তাতে জ¦ালানি বিভাগের ওপর ভর্তুকি চাপ বেড়েই চলেছে। পেট্রোবাংলা সর্বোচ্চ তিন হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে থাকে। চাহিদার বাকি ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করে পূরণ করা হচ্ছে। কিন্তু পুরনো গ্যাসক্ষেত্রগুলোর কূপ ওয়ার্কওভারে র মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানো গেলে এলএনজি আমদানি অনেক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। তাতে বর্তমান বাজার দরে প্রতি মাসে ৫ হাজার কোটি টাকার এলএনজি সাশ্রয় হবে।
সূত্র জানায়, দেশের পুরনো যে কূপগুলো ওয়ার্কওভার ও ড্রিলিং করা হবে সেগুলো হচ্ছে বাপেক্সের নিজস্ব কূপ সেমুতাং-৫, ৬ ও ৭, শ্রীকাইল নর্থ-১, শরীয়তপুর-১, টবগী, সুন্দলপুর-৩, মুলাদী বা হিজলা-৩, বেগমগঞ্জ-৪ ওয়েস্ট, ইলিশা-১, ভোলা নর্থ-২, দোয়ারাবাজার ইস্ট-১, জকিগঞ্জ-২, ফেঞ্চুগঞ্জ সাউথ-১, শাহবাজপুর-৬, শ্রীকাইল ডিপ-১, শ্রীকাইল-৫, শাহবাজপুর-৭, ভোলা নর্থ-৩, মোবারকপুর ডিপ-১। বিজিএফসিএলের কূপ তিতাস-৮, ১৪, ১৬, ২৪, তিতাস-২৮ ও ২৯, তিতাস ডিপ-১, হবিগঞ্জ-৬, বাখরাবাদ-৭, মেঘনা-১, কামতা-২, বাখরাবাদ ডিপ-১। আর এসজিএফএলের কূপ বিয়ানীবাজার-১ ও ২, কৈলাশটিলা-২, কৈলাশটিলা-৮, রশীদপুর-২, ৩, ৫, ৬, ১১, ৯, ১৩, সিলেট-৭, ১০ ও ১১, ডুপিটিলা-১। যদি সব পুরনো কূপ ওয়ার্কওভার এবং ছাতক গ্যাসক্ষেত্রের উন্নয়ন করা ায় তাহলে আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে দৈনিক অতিরিক্ত প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব হবে। তাতে এলএনজির ওপর চাপ কমবে। পাশাপাশি গ্যাসের যে সংকট আছে তাও অনেকাংশ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
এদিকে জ¦ালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, কূপ অনুসন্ধান, উন্নয়ন এবং ওয়ার্কওভারে উদ্যোগ আরো অনেক আগে নেয়া প্রয়োজন ছিল। কারণ গ্যাস যে কমে যাবে তা তো আগে থেকেই জানা। ওই কাজগুলো আগে করলে এখন এত গ্যাস সংকটে পড়তে হতো না। সরকার গ্যাস উত্তোলনের দিকে নজর না দিয়ে এলএনজি আমদানির দিকে ঝুঁকে পড়েছিল। তবে আশা কথা হচ্ছে দেরিতে হলেও পুরনো কূপগুলো ওয়ার্কওভার ও ড্রিলিং করে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে বাপেক্সকে গ্যাস অনুসন্ধানে আরো ভালোভাবে কাজে লাগানো জরুরি। সরকারকে আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে গ্যাস উৎপাদনের দিকেই বেশি নজর দিতে হবে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আলী জানান, গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে বাপেক্স নিজেদের কাজগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন গ্যাসফিল্ডের কাজগুলোও চুক্তিভিত্তিক করে যাচ্ছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে বাপেক্সের নিজস্ব কূপের পাশাপাশি বিজিএফসিএল এবং এসজিএফএলের কূপ ওয়ার্কওভার ও ড্রিলিংয়ের কাজ করা হবে। বাপেক্স গভীর কূপ খননের পরিকল্পনাও করছে। ইতোমধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে যৌথ সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করতে একটি আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। তাতে বিদেশি চার-পাঁচটি প্রতিষ্ঠানও দরপত্র জমা দিয়েছে। সেগুলো এখন মূল্যায়নের পর্যায়ে আছে। গাজীপুর, কাপাসিয়া ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ এলাকায় গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ করতে জাপানের মিটসুই অয়েল এক্সপ্লোরেশন কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা সই (এমওইউ) হয়েছে। বিদেশি ওই কম্পানির সঙ্গে বাপেক্স যৌথভাবে কাজ করবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সদস্য (গ্যাস) মো. মকবুল-ই-ইলাহী চেšধুরী জানান, বাপেক্সের যে সক্ষমতা আছে তারা চাইলেই বছরে ১০-১২টি কূপ ওয়ার্কওভার করে গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে পারে। দেশের পরিত্যক্ত কূপগুলোতে এখনো প্রচুর গ্যাসের মজুদ রয়েছে। কয়েকটি পরিত্যক্ত কূপ ওয়ার্কওভার করে দৈনিক আরো ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস গ্রিডে দেয়া সম্ভব। যা উচ্চমূল্যের এলএনজি আমদানির ওপর চাপ কমাবে।
একই প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান জানান, সরকার দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা নিয়েছে। যদি তা করা যায় তাহলে ভবিষ্যতে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন আশানুরূপভাবে বৃদ্ধি পাবে। আর এর মাধ্যমে এলএনজি আমদানি কমানো সম্ভব হবে।