কক্সবাজারে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় কল্প জাহাজ ভাসা উৎসবের মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে প্রবারণা পূর্ণিমা। এই উৎসবকে ঘিরে রামুর বাঁকখালী ও সমুদ্রসৈকতে সম্প্রীতির সেতুবন্ধন তৈরি রবিবার শুরু হওয়া উৎসব সোমবার কল্প জাহাজ ভাসানোর মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে।
এদিন বিকালে শহরের বৌদ্ধ মন্দিরস্থ ক্যাংপাড়াবাসী ও বড়বাজার রাখাইন সংঘের উদ্যোগে দৃষ্টিনন্দন কল্প জাহাজ নিয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে সৈকতের ডায়াবেটিক পয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়।
শোভাযাত্রায় রঙ-বেরঙের পোশাক পরিধান করে শতশত রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ অংশ নেয়। এসময় কল্প জাহাজ নিয়ে ঢাক-ডোল ও বাজনা বাজিয়ে নেচে গেয়ে আনন্দ উন্মাদনায় মেতে উঠে সবাই। এছাড়া জাহাজভাসা উৎসবের ভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজনও আনন্দে শামিল হন। এ যেন এক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।
পরে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষে সাগরের উত্তার ঢেউয়ে ভাসানো হয় কাঙ্ক্ষিত কল্প জাহাজ। ঢেউয়ের তালে তালে বাঁশ, বেত, কাঠ, রঙিন কাগজ দিয়ে অপূর্ব কারুকাজে তৈরি নান্দনিক কল্প জাহাজ ভাসতে থাকে, যা সবার নজর কাড়ে।
কক্সবাজারের রামু উপজেলার বাঁকখালী নদীতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী কল্প জাহাজ ভাসাকে ঘিরে উৎসবমুখর হয়ে উঠে বাঁকখালী নদীর দুই তীর।
উৎসবে রামু উপজেলার ছয়টি বৌদ্ধ পল্লীতে নির্মিত ৯টি কল্প জাহাজ অংশ নেয়। বাঁশ, বেত, কাঠ, রঙিন কাগজ দিয়ে অপূর্ব কারুকাজে তৈরি জাহাজে সম্রাট অশোকের প্রতিকৃতি, ঈগল, ময়ূর, ঘোড়াসহ বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ছয়-সাতটি নৌকায় এক করে সেই নৌকার ভেলায় বসানো হয় এক একটি জাহাজ। এসব জাহাজে শিশু-কিশোর ও যুবকরা নানা বাদ্য বাজিয়ে নাচ-গানে মেতে উঠে অন্যরকম উচ্ছ্বাসে।
বাঁকখালী নদীর দ্বীপ শ্রীকুল পয়েন্টে জাতীয় ও উদ্বোধনী সংগীতের মাধ্যমে জাহাজ ভাসানো উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নদীতে চলে আনন্দায়োজন। প্রবারণা পূর্ণিমা ও জাহাজ ভাসানো উৎসবকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ তিন মাসব্যাপী রামুর বৌদ্ধ পল্লীতে আনন্দায়োজনের পর মহাউৎসাহ উদ্দীপনার মাঝে এ উৎসব সম্পন্ন করা হলো।
রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা পূর্ণিমা ও জাহাজ ভাসা উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি অর্পন বড়ুয়া জানান, এ বছর রামু উপজেলার মধ্যম মেরংলোয়া, পূর্ব রাজারকুল, শ্রীকুল-হাইটুপী, দ্বীপ শ্রীকুল, মেরংলোয়া (সীমা বিহার), পূর্ব মেরংলোয়া, উত্তর মিঠাছড়ি, রাংকুট, চেরাংঘাটা রাখাইন পল্লী থেকে ৯টি কল্পজাহাজ নদীতে ভাসানো হয়েছে।
এছাড়া চৌফলদন্ডী, খুরুশকুল, হারবাং, টেকনাফ ও চকরিয়াতেও এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। প্রবারণা পূর্ণিমার পরদিন থেকে এক মাসব্যাপী কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তা পালন করা হবে।
—ইউএনবি
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি