May 4, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, October 3rd, 2022, 9:29 pm

কঠিন প্রতিবন্ধকতার মুখে বালাইনাশক উৎপাদনে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

কঠিন প্রতিবন্ধকার মুখে কীটনাশক উৎপাদনে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। অথচ দেশে ফসলের ক্ষতিকর জীবাণু এবং কীটপতঙ্গ দমনের জন্য বালাই-নাশকের (পেস্টিসাইড) ব্যবহার বেড়ে চলেছে। গত এক বছরে বালাইনাশকের ব্যবহার ৫ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। আর রোগ-জীবাণু বাড়ায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওই চাহিদা আরো বাড়বে। দেশে ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি বালাইনাশকের বাজার। কিন্তু দানাদার বালাইনাশক বাদে তরল ও পাউডার পেস্টিসাইডের প্রায় পুরোটাই আমদানি করা হয়। ফসলের ক্ষতিকর জীবাণু-কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য গত বছর ৩৯ হাজার ৫৪২ জন টন পেস্টিসাইড ব্যবহার হয়। ২০২০ সালে তার পরিমাণ ছিল ৩৭ হাজার ৫৬২ টন। গত বছর ১ হাজার ৪২ ধরনের পেস্টিসাইড ব্যবহার হয়। কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানি ওই ব্যবসার ৫৫ শতাংশই নিয়ন্ত্রণ করছে। আর কোণঠাসা হয়ে পড়ছে দেশীয় প্রায় সাড়ে ৬শ প্রতিষ্ঠান। কৃষি বিভাগ এবং বাংলাদেশ এগ্রোকেমিকেল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএএম) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ফসল উৎপাদনে বালাইনাশক ব্যবহার প্রয়োজন। তা নাহলে কীটপতঙ্গের আক্রমণে শাকসবজিতে ৫৪ শতাংশ, ফলে ৭৮ শতাংশ এবং খাদ্যশস্যে ৩২ শতাংশ পর্যন্ত গড় ক্ষতি হতে পারে। ওই কারণে পেস্টিসাইড ব্যবহার করে কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। শুধু পোকামাকড়ের কারণে দেশের বার্ষিক ফলনের ক্ষতি হচ্ছে ধানের ক্ষেত্রে ১৬ শতাংশ, গমের ক্ষেত্রে ১১ শতাংশ, আখে ২০ শতাংশ, সবজিতে ২৫ শতাংশ, পাটে ১৫ শতাংশ এবং ডাল ফসলে ২৫ শতাংশ। আর বাংলাদেশে আগাছা নিয়ন্ত্রণ করা না হলে ফসলের ৩৭ শতাংশ ক্ষতি হয়। ধান উৎপাদনে ইঁদুর একটি বড় সমস্যা। ইঁদুর গড়ে এক বছরে ২ হাজার ৯০০ কোটি টাকার ফসল নষ্ট করে। আর বাংলাদেশে চাষাবাদকৃত ১০০টি ফসলের মোট ৮৩২টি ক্ষতিকর পোকামাকড়, ৮৩৩টি রোগ সৃষ্টিকারী রোগ-জীবাণু এবং ১৭০টি আগাছা শনাক্ত করা হয়েছে। বালাইয়ের আক্রমণে ফসল ৩০ থেকে ১০০ ভাগ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা থাকে। সর্বশেষ ২০১৫ সালে বিভিন্ন ফসলে ১ হাজার ৫৮৫টি রোগ রেকর্ড করা হয়েছে। আর প্রতি বছর ১০ থেকে ১৫ ভাগ ফসল রোগের কারণেই নষ্ট হয়। তবে বালাইনাশকের নিরাপদ ব্যবহার সম্পর্কে কৃষকদের প্রশিক্ষণ না দিলে তা ব্যবহারের ফল উলটো হতে পারে।
সূত্র জানায়, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বিভিন্ন দেশে প্রতিষ্ঠিত তাদের প্ল্যান্ট থেকে কাঁচামাল ও অন্য সহায়ক উপাদান যাতে প্রতিযোগিতামূলক দামে সংগ্রহ করতে পারে সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তারা আন্তর্জাতিক বাজার থেকে মূল্য যাচাই-বাছাই করে একাধিক সোর্সের কাছ থেকে কাঁচামাল আমদানি করতে পারছে। কিন্তু দেশীয় কোম্পানির ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করে বলা হয়েছে, দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু একটি নির্দিষ্ট বিদেশি সোর্সের (কোম্পানি) কাছ থেকে কাঁচামাল ও অন্য সহায়ক উপাদান আমদানি করতে পারে। এভাবে দেশীয় কোম্পানিগুলো হয়রানির শিকার হচ্ছে। বিগত ২০০৮ সাল থেকে দেশে দানাদার কীটনাশকের ব্যবহার কমলেও তরল কীটনাশকের ব্যবহার দেড় গুণ ও পাউডার কীটনাশকের ব্যবহার ৩ গুণের বেশি বেড়েছে। সালফার ছত্রাকনাশকের ব্যবহার আগের মতো থাকলেও সাধারণ ছত্রাকনাশকের ব্যবহার দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। আর আগাছানাশকের ব্যবহারও প্রায় দ্বিগুণের মতো বেড়েছে। তাছাড়া ইঁদুর নাশকের ব্যবহারও উল্লেখযোগ্যহারে বেড়েছে। দেশের ৫ হাজার কোটি টাকার বালাইনাশক বাজারের মধ্যে দানাদার কীটনাশক ছাড়া প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর। অথচ দেশীয়ভাবে উৎপাদন করা গেলে ওই বালাইনাশক অনেক সস্তা ও সহজলভ্য হতো।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ এগ্রোকেমিকেল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএএম) সভাপতি কে এস এম মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বালাইনাশক দেশীয়ভাবে উৎপাদন করতে সরকারি অনুমোদনও পাওয়া গেছে। কিন্তু একটি কমিটির অসহযোগিতার কারণে সম্ভব হচ্ছে না। কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানি ওই ব্যবসার ৫৫ শতাংশই নিয়ন্ত্রণ করছে। আর কোণঠাসা হয়ে পড়ছে দেশীয় প্রায় সাড়ে ৬০০ প্রতিষ্ঠান। কীটনাশক উৎপাদনে কঠিন প্রতিবন্ধকতার মুখে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। সেজন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ২০১০ সালের পুরোনো একটি প্রজ্ঞাপন এবং পেস্টিসাইড টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজারি কমিটির (পিটাক) অসঙ্গতিপূর্ণ শর্ত। ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদে কীটনাশক-সংক্রান্ত সর্বশেষ যে আইন প্রণীত হয়, সেখানে দেশীয় কোম্পানিগুলোর জন্য বিদেশ থেকে কাঁচামাল ও অন্য সহায়ক উপাদান আমদানির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা নেই। দেশীয় কৃষিশিল্পের বিকাশের স্বার্থে কাঁচামাল ও অন্য সহায়ক উপাদান আমদানির জন্য উৎস উন্মুক্ত করার নির্দেশনা দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ও। কিন্তু পিটাক তা নিয়ে খামখেয়ালি করছে।