অনলাইন ডেস্ক :
সবুজ পাহাড়ি অঞ্চল চট্টগ্রামে জন্ম ও বেড়ে ওঠা। চঞ্চল স্বভাবের মেয়েটির গভীর চাহনি, মিষ্টি হাসি যে কাউকে মায়ার জালে বন্দী করে নিতো মুহূর্তেই। যার প্রমাণ বিস্তৃত পরিসরে মিলেছে ঢাকাই সিনেমার পর্দায়। বাংলা ছবির স্বর্ণালী যুগ বলতে যে সময়কে বোঝানো হয়, সেই সময়ের সফলতম নায়িকা তিনি। ভক্তরা যাকে ভালোবেসে ‘মিষ্টি মেয়ে’ ডাকে। বলা হচ্ছে সারাহ বেগম কবরীর কথা। তাকে ঘিরে এত কথার অবতারণার কারণ, সোমবার (১৭ এপ্রিল) তার মৃত্যুবার্ষিকী। ২০২১ সালের এই দিনে মারা গেছেন তিনি। মহামারি করোনায় যে’কজন কিংবদন্তি তারকা বিদায় নিয়েছেন, কবরী তাদের অন্যতম। নায়িকা বলতেই এ দেশের মানুষের চোখে যাদের মুখচ্ছবি ভেসে ওঠে, কবরী সেই তালিকায় প্রথম দিকের সদস্য। সিনেমার বাণিজ্যিক সাফল্য থেকে শুরু করে প্রশংসা ও জনপ্রিয়তা, কোনো কিছুর কমতি ছিল না তার ক্যারিয়ারে। ৭০ বছরের জীবন পেয়েছিলেন কবরী, এর মধ্যে ৫৬ বছরই জুড়ে ছিলেন রূপালি ভুবনে, সিনেমার সঙ্গে। তাই নন্দিত এ তারকার প্রয়াণ ভক্তদের মনে বিষাদের যে নদীর জন্ম দিয়েছে, তা বয়ে চলছে অবিরাম। কবরী নামে পরিচিত, প্রতিষ্ঠিত হলেও তার আসল নাম মিনা পাল। ১৯৫০ সালের ১৯ জুলাই চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে জন্ম। ছোটবেলা থেকে পড়াশোনার চেয়ে বেশি আগ্রহ ছিল শিল্পচর্চায়। মাত্র ১৩ বছর বয়সেই নৃত্যশিল্পী হিসেবে মঞ্চে ওঠেন তিনি। খ্যাতিমান সুরকার সত্য সাহার সূত্রেই কবরীর সিনেমায় আগমন। নির্মাতা সুভাষ দত্তকে কবরীর ছবি দিয়েছিলেন সত্য সাহা। সেই ছবি দেখে সম্ভাবনার গ্রিন সিগন্যাল পান নির্মাতা। কবরীকে ঢাকায় আসতে বলেন অডিশনের জন্য। অডিশন শেষে নিজের নির্মাণে প্রথম সিনেমা ‘সুতরাং’র মুখ্য চরিত্রে সুযোগ দেন ১৪ বছরের কিশোরীকে। ব্যাস, সূচনা হয় ঢাকাই সিনেমার চিরস্মরণীয় এক অধ্যায়ের। এরপর ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘ময়নামতি’, ‘ঢেউয়ের পর ঢেউ’, ‘পরিচয়’, ‘দেবদাস’, ‘অধিকার’, ‘বেঈমান’, ‘অবাক পৃথিবী’, ‘দীপ নেভে নাই’র মতো অসংখ্য দর্শকপ্রিয় চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এই কিংবদন্তি। সমসাময়িক প্রায় সব নায়কের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা ছিল কবরীর। চমকপ্রদ বিষয় হলো, তার নায়ক হয়েই সিনেমায় অভিষেক ঘটেছিল কিংবদন্তি চিত্রনায়ক আলমগীর, উজ্জ্বল, জাফর ইকবাল, সোহেল রানা ও ফারুকের। যেটা ঢালিউডের ইতিহাসে বিরল-বিশেষ ঘটনা বটে। সিনেমা নির্মাণেও নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন কবরী। শুরুটা করেছিলেন ‘আয়না’ দিয়ে। সর্বশেষ ‘এই তুমি সেই তুমি’ নামে একটি ছবি পরিচালনা করেছিলেন। তবে এর কাজ শেষ হওয়ার আগেই মারা যান তিনি। ফলে ছবিটি আর পূর্ণতা পায়নি। রাজনীতিতেও সরব ছিলেন কবরী। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। যুক্ত ছিলেন অসংখ্য নারী অধিকার ও সমাজসেবামূলক সংগঠনের সঙ্গে। ২০১৭ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় তার আত্মজীবনীমূলক বই ‘স্মৃতিটুকু থাক’ প্রকাশ পায়। ১৯৭৮ সালে ‘সারেং বৌ’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন কবরী। এরপর ২০১৩ সালে একই পুরস্কার আয়োজনে আজীবন সম্মাননা পান তিনি।
আরও পড়ুন
ইউটিউব থেকে সরানো হলো শাকিবের ‘তুফান’
চিন্তিত অনন্যা পান্ডে
কনাকে নিয়ে সুখবর দিলেন আসিফ