November 9, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, August 19th, 2024, 3:07 pm

কবে টোলমুক্ত হবে লামাকাজি ও শেরপুর সেতু!

জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :

সিলেটের ৫টি সেতুর মধ্যে ২টির টোল আদায় শুরু হয়েছে। যদিও এখনো চালু না হওয়া দুটি সেতুতে টোল প্রদান নিয়ে আগ থেকেই আপত্তি রয়েছে। পরিবহন শ্রমিক নেতা ও স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি সেতুর নির্মাণ ব্যয়ের চেয়ে কয়েকগুণ টাকা এরই মধ্যে আদায় হয়ে গেছে। সেতুগুলো টোলমুক্ত রাখার দাবি তাদের। এর আগে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর পরই সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ ৫টি সেতুর টোল প্লাজায় হামলা চালায় বিক্ষুব্ধরা। এতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় টোল প্লাজাগুলো। এর মধ্যে রয়েছে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের শেরপুর সেতু, শাহপরান সেতু, সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সেতু, সিলেট বিয়ানীবাজার শেওলা সেতু ও লামাকাজী সেতু।

গত ৫ আগস্টের পর থেকে এসব সেতু থেকে কোনো টোল আদায় হয়নি। গত শুক্রবার সকাল থেকে শাহপরান সেতু ও শেরপুর সেতুতে টোল আদায় শুরু হয় বলে জানায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, টোল প্লাজা ভাঙার পিছনে স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবহন শ্রমিক নেতাদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ছিল। প্রথমত-বিগত সময়ে এসব টোল প্লাজায় নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। সেতুর টাকা আওয়ামী লীগ নেতা আর সড়ক ও জনপথের কর্মকর্তারা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, কোনো কোনো টোল প্লাজার ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও টাকা আদায় অব্যাহত ছিল। এসব ক্ষোভ থেকেই টোল প্লাজায় হামলার ঘটনা ঘটে।

সিলেট সড়ক বিভাগের সরবরাহ করা তথ্যমতে, টোল আদায় করা হয় এমন সেতুর মধ্যে সবচেয়ে পুরনো সেতু হচ্ছে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের বিশ্বনাথ উপজেলায় অবস্থিত লামাকাজি এম এ খান সেতু। ১৯৮৪ সালে নির্মিত সেতুতে ব্যয় হয় ৭ কোটি ৬১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। ১৯৯০ সালের ৩রা আগস্ট টোল আদায় শুরুর পর থেকে টোল আদায় অব্যাহত রয়েছে। শ্রমিক নেতাদের দাবি, এই সেতু থেকে নির্মাণ ব্যয়ের অন্তত ৭ গুণ বেশি রাজস্ব আদায় হয়ে গেছে। এরপরও টোলমুক্ত হচ্ছে না সেতুটি।

সিলেট জেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. জাকারিয়া বলেন, আমরা দীর্ঘদিন থেকে এম এ খান সেতুকে টোলমুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছি। কেউ শুনছে না। আন্দোলনেও নেমেছি কাজ হয়নি। আমাদের দাবি টোল আদায় বন্ধ যখন হয়েছে; আর যেন চালু হয় না। শুনেছি আবার টোল আহবান করা হয়েছে। এতে শ্রমিক ও এলাকাবাসী আরো ক্ষুব্ধ হবে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি। এ নিয়ে পরিবহন শ্রমিক ঐক্য পরিষদ আন্দোলনে নামবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।

সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের লামাকাজী এলাকার বাসিন্দা নাজির উদ্দিন জানান, অন্যায়ভাবে এই সেতু থেকে টাকা আদায় করা হচ্ছে। এই ক্ষোভ থেকে হামলা চালিয়েছে জনতা। সবাই চায় এই সেতুতে টোল আদায় যেন বন্ধ হয়ে যায়।

অন্যদিকে, ১৯৯০ সালে ১০ কোটি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত শেরপুর সেতু থেকে টোল আদায় শুরু হয় ১৯৯১ সালের ১ এপ্রিল থেকে। স্থানীয়দের দাবি এই সেতু থেকে নির্মাণের অন্তত ৭/৮ গুণ বেশি টাকা রাজস্ব আদায় হয়ে গেছে। এরপর টোল আদায় থামে না। এজন্য ক্ষোভ ছিল জনসাধারণের। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর বিক্ষোভ চলাকালে এই সেতুর টোলপ্লাজাও পুড়িয়ে দেয়া হয়। যদিও শুক্রবার সকাল থেকে এই সেতু দিয়ে টোল আদায় পুনরায় শুরু করেছে সওজ।

সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলা বিএনপির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএনপি নেতা বলেন, শেরপুর সেতুর টোল আদায় নিয়ে নানা অনিয়ম হয়েছে। এই অনিয়মের কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লিজ বাতিল করে কর্তৃপক্ষ। পরে সওজ কর্তৃপক্ষ নিজেরাই টাকা তুলে নিতো। একপর্যায়ে তারা নানা অনিয়মের জড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে সিন্ডিকেট করে টাকা লুট হচ্ছিলো। এসব নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। তিনি বলেন, সেদিন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতাকে কোনো রকমে দমানো হয়েছে। স্থানীয় যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মিলে বিক্ষোভকারীদের সামাল না দিলে বড় ধরনের অঘটন ঘটে যেত।

সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ পূর্ব বাজারের এক ব্যবসায়ী দাবি করেন, ২০০৫ সালে নির্মিত ফেঞ্চুগঞ্জ সেতুতে ব্যয় হয়েছিল ২৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এরপর থেকে দিনরাত টোল আদায় হয়েছে। এটা সরকারের রাজস্ব আদায়ের উৎস হলেও দীর্ঘদিন ধরে ইজারাদার না থাকায়, আদায়কৃত অর্থে মধ্যস্বত্বভোগীদের পেট ভরেছে। টোল আদায় যেন শেষ হচ্ছেনা। তিনি দাবি করেন আদায়কৃত অর্থ সরকারি কোষাগারে ঠিকমত যাচ্ছেনা।

সওজ, সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন জানান, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে সিলেটের বিভিন্ন সেতুর টোল প্লাজায় হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে। এ কারণে টোল আদায় বন্ধ ছিল। তিনি বলেন, শুক্রবার সকাল থেকে শাহপরান সেতু ও শেরপুর সেতু থেকে টোল আদায় কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এম এ খান সেতুর নতুন টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। যেসব সেতুর টোল আদায় নিয়ে আপত্তি আছে, সে বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত আসতে হবে। সরকার যদি চায় আর রাজস্ব আদায় করবে না, তাহলে করা হবে না। বিষয়টি সরকারের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে। তিনি বলেন, আপাতত দুটি চালু হয়েছে, বাকিগুলোতে শিগগিরই টোল আদায় শুরু হবে।