November 19, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, August 18th, 2021, 8:34 pm

করোনাকালে জরুরি ওষুধের চাহিদা কয়েকগুণ বাড়লেও সরবরাহ কম

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক :

করোনা মহামারীকালে জরুরি ওষুধের চাহিদা কয়েকগুণ বাড়লেও সরবরাহ কম। করোনা রোগীদের নির্দিষ্ট চিকিৎসা বা ওষুধ নেই। সেজন্য উপসর্গ ভেদে চিকিৎসায় দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন জরুরি ওষুধ। বর্তমানে করোনা রোগীর সাথে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে ডেঙ্গু। আর তা উচ্চমাত্রার সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কাঠামোগত চিকিৎসার পাশাপাশি জরুরি ওষুধের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। কিন্তুরোগীর স্বজনরা ফার্মেসি থেকে চাহিদার বিপরীতে প্রয়োজনীয় ওষুধ পাচ্ছে না। কারণ হিসেবে সরবরাহ সংকটকে দেখানো হচ্ছে। যদিও ওষুধ প্রস্তুকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, তারা চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি জরুরি ওষুধের সর্বোচ্চ সরবরাহ নিশ্চিত করছে। ওষুধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, ভুক্তভোগী, ফার্মেসী সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জরুরি ওষুধের চাহিদাও বহুগুণ বেড়েছে। তার মধ্যে প্যারাসিটামল জেনেরিক ওষুধের চাহিদা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। মূলত মৌসুমি জ্বর, সর্দি ও ঠান্ডার জন্য ওই ওষুধের চাহিদা বেড়েছে। তাছাড়া ডেঙ্গুর প্রকোপও ওষুধটির চাহিদা বৃদ্ধিতে বাড়তি ভূমিকা রাখছে। ফলে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ওষুধটির চাহিদা প্রায় ২০ গুণ বেড়েছে। ফার্মেসিগুলোর দাবি, তারা চাহিদা অনুযায়ী ওই ওষুধের সরবরাহ পাচ্ছে না। সুলভমূল্যের ওই ওষুধটির চাহিদা এখন দেশের বাজারে শীর্ষে। একই সঙ্গে সর্দি, চর্মরোগের জন্য অ্যান্টি হিস্টামিন (ওরাল) জেনেরিক ওষুধের চাহিদাও ৩ গুণের মতো বেড়েছে।
সূত্র জানায়, করোনা আক্রান্ত রোগীদের ফুসফুসের সংক্রমণ রোধে মক্সিফ্লক্সাসিন জেনেরিকের ইনজেকশন ও সেবনের ওষুধ (ওরাল) প্রয়োগ করা হয়। তাতে রোগীদের সংকটাপন্ন অবস্থা কেটে যায়। ওই ওষুধের চাহিদাও স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ১০ গুণ বেড়েছে। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ওই ওষুধটি জটিল প্রক্রিয়ায় উৎপাদন হয়, যা সময়সাপেক্ষ। আর বিভিন্ন ভিটামিনের সংমিশ্রণে তৈরি হয় ভাইডালিন ইনজেকশন। বর্তমানে সেটির চাহিদাও বেড়েছে তিন থেকে চারগুণ। দেশের একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান ইনজেকশনটি উৎপাদন করে। যে কারণে সেটিরও সংকট রয়েছে। এনোক্সপেরিন সংকটাপন্ন করোনা রোগীদের রক্তের চলাচল স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োগ করা হয়। দেশের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ওষুধটি উৎপাদন করে। ইনজেকশনের মাধ্যমে সেটি রোগীর দেহে প্রয়োগ করা হয়। বর্তমানে ১০ গুণের বেশি চাহিদা হওয়ায় এনোক্সপেরিনেরও সরবরাহ সংকট রয়েছে। তাছাড়া করোনা রোগীদের মাধ্যমিক পর্যায়ের সংক্রমণ ঠেকাতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল অ্যাজিথ্রোমাইসিন ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়। রোগীর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে ওষুধটি কার্যকরী হওয়ায় চিকিৎসকরা সেটি প্রয়োগ করে থাকে। বর্তমান বাজারে ওষুধটির চাহিদা দ্বিগুণ বেড়েছে। যদিও করোনা চিকিৎসায় রেমডিসিভির ইনজেকশন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, তারপরও দেশে ওষুধটির সর্বোচ্চ চাহিদা রয়েছে। ৮টি প্রতিষ্ঠান ওষুধটি উৎপাদন করছে আর প্রতিষ্ঠান ভেদে ২ থেকে ৫ হাজার টাকায় প্রতিটি ভায়াল বিক্রি হচ্ছে। তবে সংকটের কারণে ফার্মেসিগুলো অতিরিক্ত মূল্য রাখছে। কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) কর্মকর্তারাও ওষুধটির চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম রয়েছে বলে জানিয়েছে। তাছাড়া কভিড-১৯ পজিটিভ রোগীদের মধ্যে সংকটাপন্নদের একটেমরা নামের ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু দেশীয় কোনো প্রতিষ্ঠান ওষুধটি উৎপাদন করে না। এই জেনেরিকের ভিন্ন ওষুধ রয়েছে। তবে চিকিৎসকরা সুইজারল্যান্ডের ‘রোস’ নামের ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের একটেমরাকেই প্রয়োগের পরামর্শ দেন। আমদানীকৃত ৪০০ এমএল ওষুধের বাজার মূল্য ৮০ হাজার টাকার বেশি। দেশীয় দুটি প্রতিষ্ঠান ও রোসের বাংলাদেশের এজেন্ট তা বাজারজাত করে। তবে চাহিদা ও আমদানিতে ঘাটতি থাকায় উচ্চ দামে ওষুধটি বিক্রি হতে দেখা যায়। তাছাড়া শ্বাস প্রদাহের (আরটিআই) জন্য বিভিন্ন ইনজেকশন ও সেবন (ওরাল) ওষুধের চাহিদার মাত্রা বেড়েছে। ওষুধটির চাহিদা চার থেকে পাঁচগুণ বেড়েছে। যে কারণে রোগীর স্বজনরা ওষুধ ছাড়াই ফার্মেসি থেকে ফিরে আসছে। পরে বিভিন্ন মাধ্যমে উচ্চদামে ওই ওষুধ তারা কিনছেন। রাজধানীর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায়ও প্যারাসিটামল ও শ্বাস প্রদাহের ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। তবে ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, এ সংকট কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, করোনা মহামারীকালে জরুরি ওষুধের সরবরাহ সংকটের বিষয়টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মানতে নারাজ। তাদের মতে, চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও নিজেদের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়েছে। ফলে রোগীদের পক্ষ থেকে যতোটা সংকটের কথা বলা হচ্ছে, সরবরাহের সঙ্গে তার কোনো মিল নেই। মূলত করোনা মহামারী ও ডেঙ্গুর ফলে কিছু ওষুধের চাহিদা বেড়েছে। তার মধ্যে কোনো কোনো ওষুধের মাসিক চাহিদা ১০ হাজার ভায়াল থাকলেও তা বর্তমানে এক লাখ ছাড়িয়েছে। তাতে প্রতিষ্ঠানগুলোও সর্বোচ্চ উৎপাদনে গেছে। তবে কিছু ওষুধ খুবই জটিল প্রক্রিয়ায় উৎপাদন করতে হয়। তাতে সময় লাগে বেশি। ফলে চাইলেও অনেক সময় চাহিদার সবটুকু সরবরাহ করা কঠিন। তাছাড়া করোনাকালে দেশীয় বাজারে চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি বর্তমানে জরুরি ওসব ওষুধের রফতানিও বেড়েছে। ফলে রফতানি ও দেশীয় চাহিদা মাথায় রেখেই প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। মূলত করোনার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্যে জরুরি ওষুধের চাহিদা যেভাবে বাড়ছে তাতে কৃত্রিমভাবে সংকটও তৈরির আশঙ্কাও থাকে। তারপরও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বোচ্চ সক্ষমতা ব্যবহারের চেষ্টা করছে।
এদিকে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির (বিএপিআই) মহাসচিব এসএম শফিউজ্জামান জানান, বর্তমানে চাহিদা সর্বোচ্চ হলেও জরুরি ওষুধের ঘাটতি নেই। দেশে চাহিদার প্রায় ৯৮ শতাংশ ওষুধই দেশীয় প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করে থাকে। স্থানীয় বাজারের পুরোটাই দেশীয় প্রতিষ্ঠানের ওষুধ। স্থানীয় চাহিদা বেড়েছে, একই সঙ্গে বিদেশে দ্বিগুণ রফতানি হচ্ছে। আর সরকারের নির্দেশনা মেনেই ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে। কেউ দাম বাড়ায়নি। কোনো চক্র দাম বাড়ালে তাতে সরকারি নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
অন্যদিকে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর জরুরি ওষুধের চাহিদা বাড়ার বিষয়টি মানতে নারাজ। সংস্থাটির কর্মকর্তাদের মতে, চাহিদা বাড়ার বিষয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও পরিচালক মো. আইয়ুব হোসেন এ প্রসঙ্গে জানান, সারা দেশের কোথাও ওষুধের সংকট নেই। কেউ ওষুধের দামও বাড়ায়নি। সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে।