March 29, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Saturday, September 25th, 2021, 8:20 pm

করোনার নেতিবাচক প্রভাবে ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় বেড়েছে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

করোনা মহামারীর প্রভাবে গত প্রায় দেড় বছরে দেশে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে। লকডাউনের জেরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ঝরে পড়া শিশুর একটি অংশ কৃষি শ্রমিক ও অন্যান্য শ্রমিকের খাতায় নাম লিখিয়েছে। এমনকি বর্তমান পরিস্থিতিতে কিছু কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠানে কৌশলে শিশু শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। অনেক শিশু শ্রমিক লেদ মেশিন ও মাঝারি কারখানার লোহার চাকার কাছে কাজ করছে। বিড়ি ফ্যাক্টরিগুলোর শ্রমিকের বড় একটি অংশই নারী ও শিশু। তারা প্রতিদিন বিষাক্ত তামাক পাতা হাতে নিয়ে কাজ করে। তার বাইরে শহরের ফেলে দেয়া জিনিসপত্র কুড়ানোসহ নানা ধরনের কাজ করছে শিশুরা। শ্রম ও জনসংখ্যা মন্ত্রণালয়ের নারী ও শিশু শ্রম শাখা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পরিসংখ্যান বিভাগের জরিপে দেশে মোট শিশুর সংখ্যা অন্তত ৬ কোটি। তার মধ্যে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা দেড় কোটিরও বেশি। জাতিসংঘ সনদে শিশুর সংজ্ঞা ১৮ বছরের নিচের বয়সীরা। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি শিশু শ্রমিকের সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। তবে সরকারের সর্বশেষ প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, প্রতিটি জেলায় ‘জেলা শিশুশ্রম পরিবীক্ষণ কমিটি’ থাকবে। ২৪ সদস্যের ওই কমিটির উপদেষ্টা স্থানীয় এমপি এবং সভাপতি জেলা প্রশাসক। কমিটি নিজ নিজ জেলার শিশুশ্রম প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে। তার বাইরে বাংলাদেশ শ্রম আইনে শিশুশ্রম বন্ধে আইন রয়েছে। আর শ্রম আদালতের আইনে অপরাধীদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- ও অর্থদন্ডার বিধান রয়েছে।
সূত্র জানায়, জরিপে দেখা গেছে দেশের শিশু শ্রমিকের ৯৪ শতাংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করছে। যার বেশিরভাগই ঝুঁকিপূর্ণ। মাত্র ৬ শতাংশ শিশুশ্রমিক প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করছে। শিশু শ্রমিকরা মোট ৪৭ ধরনের কাজ করে। ওসব কাজের অনেকগুলোই উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ। মূলত দরিদ্রতা, পারিবারিক বিচ্ছেদ, বাবা-মায়ের মধ্যে বিচ্ছেদ, বাবা-মায়ের পেশা, মা-বাবা ও অভিভাবকের মৃত্যু, অনাকর্ষণীয় শিক্ষাসহ ২৫টিরও বেশি কারণে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। বলা যায় দেশে দরিদ্রতার হার কমানোর ক্ষেত্রে শিশুশ্রমের রোজগারও বড় ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে মহানগরী ও বড় নগরীগুলোতে যে বস্তি গড়ে উঠেছে সেখানকার শিশুদের বড় একটি অংশই নানা শ্রমে নিয়োজিত হয়। নগরীর পথশিশুরা দোকান ও কোন প্রতিষ্ঠানের ফুট-ফরমায়েশ খাটাসহ নানা ধরনের কাজ করে। আবার গ্রামে হতদরিদ্র পরিবারের শিশুকেও পরিবারের আয় বাড়াতে রোজগারের পথে নামতে হয়। তারা ঢাকাসহ বড় নগরী ও শহরগুলোতে চলে আসে। পাশাপাশি গ্রামে কৃষির বহুমুখী কার্যক্রম বেড়ে যাওয়ায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শিশুদেরও কাজ করতে হয়। তাতে মজুরির খরচ অনেকটা বেঁচে যায়। কৃষির শিশু শ্রমিকের একটি অংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে কোন রকমে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত অতিক্রমের পর মাধ্যমিক স্তরে প্রবিশ করতে পারে না। আর ওই শিশুদের কোন না কোন কাজ বেছে নিতে হয়। আবার মেয়ে শিশুদের অনেকে প্রাথমিক পাঠ শেষ করে মাধ্যমিক স্তরে প্রবেশের পর মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। যদিও দেশে বাল্যবিয়ের হার কমে আসছে। তারপরও এখনো তা শূন্যের কোটায় পৌঁছেনি। ওই মেয়ে শিশুদেরও ঘর গৃহস্থালিসহ কৃষি কাজ করতে হয়। দেশে মোট শিশু শ্রমিকের ৬৬ শতাংশ কৃষিতে, ১৮ শতাংশ শিল্প খাতে, ৪ শতাংশ পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ১২ শতাংশ গৃহভৃত্য ও অন্যান্য খাতে কর্মরত আছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে শ্রম দফতর সংশ্লিষ্টদের মতে, শিশুশ্রম বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হলেও জটিল কিছু কারণে শিশুশ্রম একেবারে বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না না। যদিও দেশের শ্রম আইনে বলা আছে, কোন পেশায় বা প্রতিষ্ঠানে কোন শিশুকে নিয়োগ করে কাজ করতে দেয়া যাবে না। কাজে নিয়োগের পর শিশু না কিশোর এ ধরনের প্রশ্ন উত্থাপিত হলে জন্ম নিবন্ধন সনদ, স্কুল সার্টিফিকেট বা রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে তা নিষ্পত্তি হবে। কোন অভিভাবক তার কিশোর ছেলেকে কাজের জন্য অনুরোধ করলে একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসক কিশোরকে পরীক্ষা করে তার সক্ষমতা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দেবেন। সরকার সময়ে সময়ে গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ কাজের তালিকা ঘোষণা করবে। ঝুঁকিপূর্ণ কাজে কোনভাবেই শিশু নিয়োগ করা যাবে না। কোন কিশোরকে কোন কারখানায় দিনে ৫ ঘণ্টার বেশি কাজ করানো যাবে না। কোন কিশোরকে কোন প্রতিষ্ঠানে সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৭টার মধ্যবর্তী সময়ে কোন কাজ করানো যাবে না। তবে এর মধ্যেও কিছু ক্ষেত্রে পরিবারের স্বার্থে শিশু শ্রমিক নিয়োগে ব্যত্যয় রাখা হয়েছে। শ্রম আইনের ৪৪ ধারায় বলা হয়েছে, ১২ বছরের কোন শিশুকে এমন কিছু হালকা কাজে নিয়োগ করা যাবে যাতে শিশু স্বাস্থ্য ও উন্নতির জন্য বিপজ্জনক নয় এবং শিক্ষা গ্রহণ বিঘিœত হবে না। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাঠপর্যায়ে এই ধারাকে ভিন্ন খাতে নিয়ে শিশু শ্রমিককে কাজে নেয়া হচ্ছে।