করোনাভাইরাসের কারণে ১৮ মাস মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল ও কলেজগুলো বন্ধ থাকায় কুড়িগ্রামে শিশুশ্রম, দারিদ্রতা, নদীভাঙন ও স্থানান্তরিত হওয়ার কারণে প্রায় ৫০ হাজার শিশু ঝরে পড়েছে। ঝড়ে পড়া শিশুদের একটি বড় অংশ বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। রবিবার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হলেও কন্যাশিশুর অনুপস্থিতির কারণ খুঁজতে গিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানান।
রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, শতকারা ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ শিশু স্কুলে এসেছে। ২০ থেকে ২৫ ভাগ শিশু প্রতিষ্ঠানে আসেনি। এদের মধ্যে অর্থনৈতিক কারণে ঝড়ে পড়ার সংখ্যা বেশি। এছাড়াও বাল্যবিয়ের বিষয়টিও গুরুত্ব পাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০ শিক্ষার্থী, ঘোগাদহ মালেকা বেগম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৬ জন, কাঁঠালবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৪ জন এবং বারউল্লাহ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ জনসহ পাঁচটি বিদ্যালয়ে মোট ৯১ জন কন্যা শিশু বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। কুড়িগ্রাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শুধু দশম শ্রেণিতে ১২ জনসহ প্রায় ৩০ জনের বাল্যবিয়ে হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যারয়ে গিয়ে দেখা যায়, এই বিদ্যালয়ে লকডাউনের আগে সপ্তম শ্রেণিতে উপস্থিতি ছিল ৫০ জন, রবিবার উপস্থিত হয়েছে ৪৩ জন, নবম শ্রেণিতে আগে ছিল ৩১ জন আজ ২২ জন, দশম শ্রেণিতে আগে ২৫ জন আজ ১৭ জন, এসএসসিতে আগে ২৪ জন আজ ১৯ জন।
এসএসসি পরীক্ষার্থী জান্নাতুন জানান, তার ক্লাসের পাঁচজন বন্ধু বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে।
দশম শ্রেণির সোহানা জানান, তার দুজন বান্ধবী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে।
এসএসসি পরীক্ষার্থী আইরিন জানান, লকডাউনে আমরা পরিবারের কাছে যেন বোঝা হয়ে ছিলাম। কোথাও বাইরে যেতে দেয়া হতো না। প্রাইভেট পড়াও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অনেক বান্ধবীকে তাদের বাবা-মা বোঝা মনে করে বিয়ে দিয়েছে। তারা পড়াশুনা করতে চেয়েছিল কিন্তু পরিস্থিতির শিকার হয়েছে তারা।
এই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমরা এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করলে জানতে পারব কতজন শিশু ঝরে পড়েছে। এর কারণগুলোও আমরা খুঁজে বের করব। যাতে পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা কোন সমস্যায় পড়ে না যায়।’
যাত্রাপুর চাকেন্দা খানপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, এখানেও একই চিত্র। সপ্তম থেকে এসএসসি পর্যন্ত প্রায় ৮ জনের বিয়ে হয়েছে বলে শিক্ষার্থী আমিনা, সালমা ও নাজমিন জানান।
এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘বাল্যবিয়ের তথ্য এখনো আমরা পাইনি। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আসুক তাদের সাথে আলোচনা করে জানা যাবে।’
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শামসুল আলম বলেন, আমরা সদরের পাঁচটি স্কুল পর্যবেক্ষণ করেছি, এই স্কুলগুলোতে ৬৩ জন মেয়ে শিশু বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং কর্মকর্তাদের প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, শতকরা ১৩ ভাগ শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়েছে। ঝরে পড়া কন্যাশিশুদের অধিকাংশই বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। এ হিসাবে জেলায় গত দেড় বছরে ঝরে পড়া শিশু শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার।
তিনি বলেন, ‘রবিবার উলিপুর ও চিলমারীতে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঘুরে দেখেছি। উপস্থিতির হার ৮০ শতাংশের মত। অন্যান্য স্কুলগুলোতে ঝরে পড়া ও বাল্য বিয়ের শিকার মেয়েদের প্রকৃত তথ্য নিতে উপজেলাগুলোতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আশা করছি দুই একদিনের মধ্যে সার্বিক চিত্রটা বোঝা যাবে।’
—ইউএনবি
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি